মমতার ক্ষমতায় উত্তরণ গণতন্ত্রের উপর জোরালো ধাক্কা?
সূদীর্ঘ বাম শাসনের অবসান চেয়ে ২০০৯ থেকে রাজনৈতিক বিরোধীরা তো বটেই, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, গণসংগঠন এবং অন্যায্য-সুযোগ-না-পাওয়া, লোভী এবং সুযোগসন্ধানী বাংলার 'বুদ্ধিজীবি'রা একটা চক্রান্তে লিপ্ত হলেন।
ঘটনাচক্রে, সেই সময় নাগাদই, বিধান রায়ের পর বাংলার, সৎ এবং পরিশ্রমী মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শিল্পায়ন নীতি - শিল্পবন্ধ্যা বাংলায় - সুফল আনতে শুরু করেছে! ভারতের তথা বিশ্বের অন্যতম সফল শিল্পগোষ্ঠী টাটা, বাংলায় বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছেন। টাটা গোষ্ঠীর সুনাম এবং বাংলায় বিনিয়োগে আগ্রহ আরও বহু শিল্পগোষ্ঠীকে বাংলায় বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলেছে!
কিছু কিছু জিনিষের সুফল সাধারণ মানুষ তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারেন না। এজন্যই 'দূরদৃষ্টিসম্পন্ন' কথাটি চালু আছে।
সবাই 'দূরদৃষ্টিসম্পন্ন' হন না। সেটা স্বাভাবিক।
কেঊই 'দূরদৃষ্টিসম্পন্ন' নন, এটা দূর্ভাগ্য!
বাংলা সেই মূহুর্তে সেই দূর্ভাগ্যের শিকার হল ঐ চক্রান্তের কারণে!
'পরিবর্তন' মঙ্গল না অমঙ্গল ?
সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠীর গাড়ী শিল্পে বিনিয়োগের কারণে অতি অল্পসংখ্যক মানুষ জমি হারা হলেন! ঐ মানুষগুলি ঐ মুহুর্তে শিল্পস্থাপনার সূদূরপ্রয়াসী সুফল বুঝতে না পেরে ক্ষুব্ধ হলেন জমি হারানর কারণে। টাটা গোষ্ঠী কিন্তু ঐ মানুষগুলিকে উদার ভাবে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেছিলেন। তৎসহ, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে ঐ গাড়ী শিল্পে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করছিলেন!
কিন্তু তাতে মানুষের উপকার হলেও চক্রান্তকারীদের পেট তো ভরবে না!
ঐ জমি হারানো মানুষগুলির ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে ঐ চক্রান্তকারীদের মিলিত উদ্যোগে এমন এক রাজনীতিকের উদয় হল, নিজস্ব জীবনে এবং রাজনীতিতে মিথ্যাচার আর অনাচার ছাড়া যার অবদান সর্বদাই নেগেটিভ।
কে লাভবান হল?
''সততার প্রতীক" ঢক্কানিনাদে ঐ মিথ্যাচারীকে তুলে ধরতে অর্থের সংস্থান করতে এগিয়ে এল সেই গরীব মানুষের সঞ্চয় অপহরণকারী চিটফান্ড সংস্থাগুলি! হাতেনাতে তার সুফলও পেল চিটফান্ড সংস্থাগুলি! ক্ষমতায় উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গেই শাসকদলের মন্ত্রী নেতাদের যোগসাজশে চিটফান্ড সংস্থাগুলি বহুগুণ বাড়িয়ে ফেলল তাঁদের ব্যবসা। সর্বস্বান্ত হল বাংলার জনগণ!
সেই চিটফান্ড সংস্থার টাকা বাংলাদেশে পাচার হয়ে অস্ত্র এল ভারতীয় মাওবাদীদের হাতে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শিল্পায়ন কে ধ্বংস করতে! বাংলার অন্যায্য-সুযোগ-না-পাওয়া লোভী এবং সুযোগসন্ধানী 'বুদ্ধিজীবি'রা মানবাধিকার সংগঠনের আড়ালে মাওবাদীদের মদত জোগাতে লাগলেন!
বাংলার সংবাদমাধ্যম, খুবই দুঃখের ব্যাপার, খালি কমিউনিজম-এর প্রতি অন্ধ বিরুপতার কারণে মদত যোগাতে লাগলেন এমন এক রাজনীতিক কে যার আদর্শ ক্ষমতার লোভে যাবতীয় অনাচার আর নৈরাজ্যকে প্রশয় দিয়ে যাওয়া।
হয়ত ওরা ভেবেছিলেন, যে ক্ষমতা পেলে মিথ্যা আর অযোগ্যতা বদলে যাবে!
কিন্তু কয়লা ধুলেই কি ময়লা যায়?
সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা
সেদিন যে ওরা (আলোকপ্রাপ্ত সংবাদমাধ্যম) মারাত্মক ভুল (অন্যায়?) করেছিলেন, সেটা স্পষ্ট, ১৪ই আগষ্ট ২০১৪ আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পাদকীয়তে লেখা হল - "পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকেও দেখা যাইতেছে, নিয়ত ‘আমি করিয়া দিতেছি’, ‘আমি করিয়া দিলাম’ বলিয়া শত-শত প্রকল্প উদ্বোধন করিতে। কিন্তু ওই প্রকল্পগুলি তাঁহার দয়ার দান নয়, হয় কেন্দ্রীয় অনুদানে নতুবা রাজ্যের কোষাগারে সঞ্চিত
করদাতাদের অর্থে রূপায়িত হইতেছে। তাই তাহার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে কৃতিত্ব দাবি করার মধ্যে সংকীর্ণ স্বার্থবুদ্ধির প্রতিফলন থাকিয়া যায়।"
ঐ সংকীর্ণ স্বার্থবুদ্ধি, ক্ষমতার লোভ, উন্নয়নের ভাঁওতা আর সাংবিধানিক ক্ষমতার যথেচ্ছ অপব্যবহার যে 'মমতা'হীন ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন এর জন্ম দিল বাংলার রাজনীতিতে তাঁর দূর্বার গতিতে কর্মসংস্থানহীন, শিল্পহীন, উন্নয়নহীন পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলের প্রত্যক্ষ মদতে খুন-ধর্ষণ-সন্ত্রাসের ভয়াবহ আবহ তৈরি হয়েছে।
পরিণাম ও পরিত্রাণ
পরিশ্রমবিমুখ, শিক্ষাহীন যুবকেরা কর্মসংস্থানহীন বাংলায় সহজে জীবিকা অর্জনের তাগিদে শাসক দলের মদতে তোলাবাজি, সন্ত্রাসের রাস্তা বেছে নিয়েছে।
শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা রাজ্যত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা রাজ্যত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
নৈরাজ্যের পশ্চিমবঙ্গে অন্য কোন উপায়হীন 'বুদ্ধিজীবিরা' সরকারী দাক্ষিণ্যের উচ্ছিষ্টের আশায় চোখ কান বন্ধ রেখে বিবেক জলাঞ্জলি দিয়ে শাসক দলের তাঁবেদারী আর তার নেত্রীর স্তাবকতায় ব্যস্ত!
শিল্পহীন পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমও সরকারী বিজ্ঞাপনের দাক্ষিণ্যের ভরসায় টিঁকে থাকার তাগিদে শাসক নেত্রীর ভজনায় নিয়োজিত!
আলোকপ্রাপ্ত সংবাদমাধ্যম আজ নিজেদের প্রশয় দেওয়া ঐ 'মমতা'র সমালোচনায় যতই শ্রমনিবেশ করুন না কেন নিবিড় গণআন্দোলন আর ব্যাপক রক্তক্ষয় ছাড়া সহজে এই রাহুমুক্তি ঘটবে না!
এই বাংলায় এই সময়ে এই শাসক দলের দ্বারা কোন উন্নয়ন বা শিল্পস্থাপনার আশা করা চরম ভুল!
মাওবাদীদের সাহায্যের উদ্দেশ্যে বাম আমলে যৌথ বাহিনীর প্রত্যাহার দাবী করেন মমতা, ক্ষমতায়
মমতা কি ভাবে ক্ষমতায় এল?