Friday, August 29, 2014

Cheap publicity stunt by Mamta on Sarada

সম্পাদকীয় ২

তৃতীয় রিপু

১৬ মে, ২০১৪, ০০:০০:০০


  (সৌজন্য - আনন্দবাজার পত্রিকা)

সারদা কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআই-এর হস্তে অর্পিত হইলে যে মুখ্যমন্ত্রীর ‘আমানত ফেরত অভিযান’-এর উত্তরাধিকারটিও সহগামী হয়, রাজ্যবাসী তাহা সদ্য জানিয়াছেন। মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষবিপক্ষের রাজনীতিকরাও জানিয়াছেন এবং নিজ নিজ রাজনৈতিক বর্ণের প্রতি বিশ্বস্ত থাকিয়া প্রতিক্রিয়াও জানাইয়াছেন। কেহ রাজকোষ হইতে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার অযৌক্তিকতার কথা তোলেন নাই। রাজকোষ উজাড় করিয়া খয়রাতিতে যে অনৈতিক কিছু আছে, জনপ্রিয়তাসর্বস্ব রাজনীতিতে আকণ্ঠ মজ্জিত নেতারা সম্ভবত তাহা বুঝিতে পারেন না। বুঝিলেও, আমানতকারীরা কেন ডুবিয়াছেন, তাহা স্বীকার করিতে তাঁহাদের রাজনীতিতে বাধে। অসাধু লগ্নি সংস্থায় টাকা রাখিয়া আজ যাঁহারা নিঃস্ব, তাঁহারা স্বখাতসলিলে ডুবিয়াছেন। লোভ তাঁহাদের ডুবাইয়াছে। সেই তৃতীয় রিপু। অর্থবান হইবার লোভ, সচ্ছলতার লোভ। ভাল থাকিতে চাহিবার মধ্যে কোনও অন্যায় নাই। বস্তুত, ওই আদিম রিপুটির তাগিদেই মানবসভ্যতা আগাইয়াছে। কিন্তু, ভাল থাকিবার ইচ্ছা এক কথা, তাহার জন্য কাণ্ডজ্ঞানবিস্মৃত হওয়া আর এক। যেখানে সৎ পথে বড় জোর আট শতাংশ সুদ মিলে, সেখানে সারদার ন্যায় সংস্থা কী ভাবে চার বৎসরে লগ্নি দ্বিগুণ করিয়া দিতে পারে, এই প্রশ্নটি না করিবার মধ্যে বিপুল দায়িত্বজ্ঞানহীনতা আছে। যাঁহাদের টাকা মার গিয়াছে, তাঁহারা গরিব বলিয়াই এই লোভ মার্জনা করিতে হইবে?

সত্য, লোভ বস্তুটি গরিবের একচেটিয়া নহে। ২০০৭-০৮ সালের যে আর্থিক সংকট গোটা দুনিয়াকে নড়াইয়া দিয়াছিল, তাহারও মূলে ছিল লোভ। বিত্তশালীদের লোভ। লোভ ব্যতীত কোনও আর্থিক কেলেঙ্কারিই সম্ভব নহে। জালিয়াতির মূলধন হইল প্রাপ্যের অধিক পাইবার বাসনা। সব লোভই যে বন্ধ্যা, তাহাও নহে। সারদায় বিনিয়োগ করিয়াও অনেকেই প্রতিশ্রুত অর্থ ফেরত পাইয়াছেন। তাঁহাদের প্রাপ্তি দেখিয়া আরও অনেকের লোভ বাড়িয়াছে। তাঁহারাও বিনিয়োগ করিয়াছেন। যে কোনও পনজি স্কিমেই শেষ দফার বহু লোকের টাকা মার যাওয়া প্রথম দিকের আমানতকারীদের লাভের শর্ত। সারদার ক্ষেত্রেও সেই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটে নাই। নেতা-মন্ত্রীদের হাবভাব দেখিলে আশঙ্কা হয়, ভবিষ্যতেও এই গোত্রের প্রকল্প এবং তাহার প্রতারণার ধরন অব্যাহত ও অপরিবর্তিত থাকিবে।
এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল খুলিয়া ভবিষ্যতের বিপদের জমি প্রস্তুত করিতেছিলেন। সাধারণ মানুষ জানিবেন, এক বার যখন মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিপূরণ দিয়াছেন, ভবিষ্যতেও দিবেন। অর্থাৎ, তাঁহার বর্তমান খয়রাতি ভবিষ্যৎ আমানতকারীদের জন্য একটি বিমা হইয়া থাকিল— আর্থিক সংস্থা ফেল করিলে সরকার বাঁচাইবে। এই বিনিয়োগে ঝুঁকি নাই, কারণ সরকার সেই ঝুঁকির দায়িত্ব লইতেছে। যে কোনও স্বেচ্ছা-বিনিময়ই লাভ-ঝুঁকির আপেক্ষিক হিসাবের উপর নির্ভরশীল। জালিয়াত সংস্থায় লাভের পরিমাণ যেমন বেশি, ঝুঁকিও তেমনই বেশি। সরকার সেই ঝুঁকির দায়িত্ব লইলে লাভের পাল্লা ঝুঁকিয়া পড়ে। ফলে, জালিয়াত সংস্থার বাড়বাড়ন্ত হইবে। জনপ্রিয়তা অর্জনের অদম্য তাড়নায় রাজ্য সরকার যাহা করিয়াছে, তাহা পশ্চিমবঙ্গের গরিব মানুষকে আরও বেশি দায়িত্বজ্ঞানহীন, লোভী হইয়া উঠিতে উৎসাহ দিতে পারে। এবং, অন্যান্য দলের নেতারাও দৃশ্যত এই বিপজ্জনক খেলার আগ্রহী দর্শক। লোভ তাঁহাদেরও বড় কম নহে।

No comments:

Post a Comment