ইস্তফা দিয়েও চাপে পড়ে প্রত্যাহার অধ্যক্ষের
নিজস্ব সংবাদদাতা
চাপড়া, ২৭ অগস্ট, ২০১৪, ০৩:১৫:০৯
(সৌজন্য - আনন্দবাজার পত্রিকা)
তৃণমূল নেতা গৌরী দত্ত (ডান দিকে) ও টিএমসিপি নেতা অয়ন দত্তের সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে অধ্যক্ষ কৃষ্ণগোপাল রায় (মাঝখানে)। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য |
আন্দোলনের নামে বিভিন্ন কলেজে ‘তাণ্ডব’ কিংবা অধ্যক্ষ ঘেরাওয়ের নিয়মিত কর্মসূচি নিয়ে ক্রমান্বয়ে দলের অস্বস্তিই যে বাড়িয়ে চলেছে টিএমসিপি, দিন কয়েক আগে পরোক্ষে তারই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।
ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া বিবেকানন্দ কলেজে টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের চাপেই অধ্যক্ষের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন কলেজের টিচার ইন-চার্জ। সেই তালিকায় শেষ সংযোজন নদিয়ার চাপড়ার বাঙালঝি কলেজ। তবে, মঙ্গলবার রাতে ওই কলেজের অধ্যক্ষ কষ্ণগোপাল রায় জানান, পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য শিক্ষামন্ত্রী তাঁকে অনুরোধ করেছেন। সেই ‘অনুরোধ’ তিনি ভেবে দেখারও আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
শুক্রবার ওই কলেজে ঢুকে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের ‘আবদার’ ছিল ছাত্রছাত্রীদের নকলে বাধা দিলে চলবে না। অধ্যক্ষ কৃষ্ণগোপাল রায় অবশ্য এই ‘অন্যায় আবদার’ মানতে চাননি। টিএমসিপি পরিচালিত কলেজের ছাত্র সংসদের দাবি না মেনে তিনি ছাত্র-নেতাদের কলেজ থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছিলেন। তাতেও কাজ না হওয়ায় পুলিশ ডেকেছিলেন তিনি।
আর তারই ‘শাস্তিস্বরূপ’ দীর্ঘক্ষণ কলেজের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় স্থানীয় টিএমসিপি নেতা কর্মীরা। শুধু তাই নয়, সোমবার ফের ওই কলেজে ঢুকে জোর করে ফের নকল করার দাবি তোলে ছাত্র সংসদের নেতারা। অভিযোগ, বাধা দিলে ওই অধ্যক্ষকে ‘অকথ্য’ ভাষায় গালিগালাজও করা হয়। কৃষ্ণগোপালবাবু জানান, ওই ‘অপমানের’ পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন রাতেই পদত্যাগপত্র লিখে কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
তবে তা জানাজানি হতেই শাসকদলের স্থানীয় নেতারা তাঁর উপরে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য ‘চাপ’ দিতে থাকেন। মঙ্গলবার, তিনি কৃষ্ণনগর এলে প্রায় জোর করেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় দলের তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের বাড়িতে। সেখানে টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে কথা হয় শিক্ষমন্ত্রী পার্থ চট্ট্যোপাধ্যায়ের। গৌরীবাবু ফোনে তাঁকে ধরিয়ে দেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মকুল রায়কেও।
দলীয় নেতার বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনি যে ‘চাপে’ রয়েছেন তা আড়াল করেননি কৃষ্ণগোপালবাবু।
যথেচ্ছ নকল হওয়া শুক্রবারের ওই পরীক্ষাটি ইতিমধ্যেই কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বাতিল করার আবেদন করেছিলেন ওই অধ্যক্ষ। এ দিন তিনি বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন ওই পরীক্ষাটি কী করে বাতিল করা যায় তা তিনি দেখবেন। তিনি আমার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মুকুলবাবুও সব কথা শুনেছেন।” তাঁদের আশ্বাসেই এ দিন সন্ধ্যায় তিনি জানান, পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের কথা ‘ভেবে’ দেখবেন তিনি। কলেজ সুত্রে জানা গিয়েছে, আজ বুধবার ওই পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করার কথা তাঁর।
শিক্ষায়তনে রাজনীতির ‘অনুপ্রবেশ’ নিয়ন্ত্রণে নিজেই সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি’কে অবশ্য সে নিষেধাজ্ঞায় ঠেকিয়ে রাখা যায়নি। টিএমসিপি-র ছাত্র আন্দোলনে রাশ টানতে দিন কয়েক আগে বাধ্য হয়েই দলের শীর্ষ নেতারা তলব করেছিলেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক শঙ্কুদেব পণ্ডাকে। ছাত্র আন্দোলনের নামে তাঁদের ‘অযাচিত’ তাণ্ডবকে যে দল অনুমোদন করছে না, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল ওই ছাত্র নেতাকে। বিরোধীরা মনে করছেন, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সেই অনুশাসনেও যে ‘কাজ’ হয়নি বাঙালঝি কলেজের ঘটনায়তা স্পষ্ট।
শুধু টিএমসিপি নয়, মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর কলেজেও অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তির দাবিতে বহিরাগতদের নিয়ে এসে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় এসএফআইয়ের কর্মী-সমর্থকরা। ঘণ্টাখানেক পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে অধ্যক্ষের সঙ্গে অবশ্য আলোচনায় বসেন সংগঠনের নেতারা। সিদ্ধান্ত হয় আসন বাড়িয়ে গত বছরের মতো এবারেও বাড়তি ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করার অনুমতি চেয়ে কলেজ কর্তপক্ষ ফের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবেদন করবেন।
No comments:
Post a Comment