Wednesday, August 27, 2014

মুখ্যমন্ত্রী পদে কোন অপদার্থ আসীন হলে কি হয় তার উদাহরণ মমতার আমলে পশ্চিমবঙ্গ

সম্পাদকীয় ১(সৌজন্য - আনন্দবাজার পত্রিকা)

উত্তরাধিকার

২৫ অগস্ট, ২০১৪, ০০:০০:৪১

রাজ্যবাসী জানিতেন। দেশবাসীও। অতঃপর বিশ্বসভায়, অর্থাত্‌ সিঙ্গাপুরের বণিকমহলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানাইয়া দিলেন, বাম শাসনের কী দুঃসহ বোঝা তাঁহাকে বহন করিতে হইতেছে। যাহা বলেন নাই, তাহা হইল তিনি বাম আমলের প্রকৃত উত্তরাধিকারী হইয়াছেন। দলতন্ত্র হইতে তোলাবাজি, বাম আমলের কোনও ব্যাধিরই উপশম নূতন জমানায় হয় নাই। বরং, অনাচারগুলি অনেক মোটা দাগের হইয়াছে। বাম আমলের ৩৪ বত্‌সর আর তৃণমূল কংগ্রেসের ৩ বত্‌সরের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী ফারাক দেখিতে পান নিশ্চয়ই, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে তাহা বড়জোর অন্ধকারের ক্রমবিবর্তন। মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গাপুরে শিল্পের সন্ধানে গিয়াছিলেন বিনিয়োগকারীরা কোনও রাজ্যে কী প্রত্যাশা করেন, তাহার তালিকা সিঙ্গাপুরের বিদেশমন্ত্রী দিয়াছেন। মমতাদেবী যে দিন রাজ্যে ফিরিলেন, সে দিনই দুর্গাপুরের একটি কাগজ কল, উত্‌পাদন শুরু হইবার পূর্বেই, ঝাঁপ ফেলিতে বাধ্য হইল। কেন, প্রতিষ্ঠানটির মালিক সেই কারণ জানাইয়াছেন মুখ্যমন্ত্রী মিলাইয়া দেখিলে বিস্মিত হইবেন সিঙ্গাপুর ও দুর্গাপুরের বয়ান কার্যত এক। তাহার মূল কথা বামফ্রন্টের উত্তরাধিকার বহন করিয়া তিনি যে অন্ধকারের সাধনা করিতেছেন, তাহাতে এই রাজ্যে শিল্প হইতে পারে না। তাহাতে নূতন শিল্প আসিবে না, প্রতিষ্ঠিত শিল্পও থাকিবে না।
দেশের অন্য কোনও রাজ্য হইতে, বা বিদেশ হইতে, পশ্চিমবঙ্গে যে বিনিয়োগ আসিতে পারে, আর পশ্চিমবঙ্গে এখন যে বিনিয়োগগুলি আছে, রাজ্যের নিকট তাহাদের চাহিদা পৃথক নহে। সিঙ্গাপুরের বিদেশমন্ত্রী কে ষণ্মুগম সেই চাহিদার কথা দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানাইয়া দিয়াছেন। শিল্পমহল প্রথমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চাহে, তাহার পর চাহে নিরাপত্তা। জমি তাহাদের চাহিদার তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রশ্নাতীত বস্তুত, তাহা প্রয়োজনের তুলনায় কিছু বেশি মাত্রাতেই বর্তমান। তাহার ফলে, শাসক দলের আধিপত্যও বিপুল। সেই আধিপত্য ইতিবাচক পথে প্রবাহিত হইলে একটি দেশ সিঙ্গাপুর হইয়া উঠিতে পারে। আর, নেতিবাচক আধিপত্য কী করিতে পারে, পশ্চিমবঙ্গ বিলক্ষণ জানে। নিরাপত্তার যে অভাব কাগজকলকে রাজ্যছাড়া করিতেছে, তাহাই বিদেশি বিনিয়োগের পথেও বাধা হইয়া দাঁড়াইবে। ক্ষুদ্র রাজনীতির যূপকাষ্ঠে আইনশৃঙ্খলাকে বলি দিলে আর যাহাই হউক, বিনিয়োগ হয় না। রাজ্যে অগাধ জমি থাকিলেও হয় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাহাও নাই। ল্যান্ড ব্যাঙ্কের কুমিরছানায় শিল্প ভুলিবে না। শিল্পমহলের মন জয় করা মেঠো রাজনীতির ন্যায় সহজ নহে।
কঠিন কাজটি করিবার যথেষ্ট ইচ্ছা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আছে, সিঙ্গাপুর সফর দেখিয়া অন্তত সেই কথাটি বলিবার উপায় নাই। সিঙ্গাপুর হইতে পশ্চিমবঙ্গ মাত্র চার ঘণ্টার পথ, এই রাজ্যে বিনিয়োগ করিলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁহাদের নামে একটি রাস্তার নামকরণ করিবেন, অথবা তিনি সিঙ্গাপুরের ছোট বোনের ন্যায় কোনওটিই বিনিয়োগকারীদের নিকট যথেষ্ট কারণ হইবে বলিয়া আশা করা মুশকিল। মমতাদেবীর সফর ফুরাইবার পূর্বেই সদ্যোজাত তেলঙ্গানার সদ্য-নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও-এর সিঙ্গাপুর সফর আরম্ভ হইয়াছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁহার নিকট এমন শিল্প-সফরের সহজপাঠটি আয়ত্ত করিতে পারিতেন। করিলে, হয়তো তিনি বুঝিতেন, এমন সফরে দীপক অধিকারীরা নিতান্ত বেমানান। যেমন বেমানান মুখ্যমন্ত্রীর অশ্বত্থপত্রের আকারের ভিজিটিং কার্ডটিও। মমতাদেবী স্মরণে রাখিতে পারেন, তাঁহার (রাজ্যের) কিছুই নাই। যাঁহাদের সহিত সাক্ষাত্‌ করিতে আসিয়াছেন, তাঁহাদের যথেষ্ট গুরুত্বটুকুও যদি না দিতে পারেন, তবে আর কথা না বাড়ানোই মঙ্গল।

No comments:

Post a Comment