Tuesday, November 4, 2014

Extortion and Violence are TMC identities




মন্ত্রী কড়া বার্তা দিচ্ছেন বারংবার। নেতৃত্ব বদল হচ্ছে। তবু রোগ সারার লক্ষণ নেই। সোমবার আরও এক বার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈরাজ্য তৈরি করে দিয়ে গেল শাসক দলের ছাত্র সংগঠন
ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্র নেতারা সব রকম নিয়মনীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শোরগোল করলেন। স্লোগান দিলেন, বিক্ষোভ দেখালেন। এক সময় হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লেন উপাচার্যের ঘরেও।
অথচ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কড়া বার্তা ছিল, যখন তখন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা ঢুকতে পারবেন না। ছাত্রছাত্রীদের দাবি-দাওয়া থাকলে কর্তৃপক্ষের আগাম অনুমতি নিতে হবে এবং শুধুমাত্র পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর কথার তোয়াক্কা যে অন্তত তাঁর দলের ছাত্র সংগঠন করে না, এ দিন সেটাই আরও এক বার প্রমাণ হয়ে গেল। পার্থবাবু এ দিন সরাসরিই বলেন, কাজটা ভাল হয়নি।
গত জুলাই মাসে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তৎকালীন রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পন্ডার নেতৃত্বে সংগঠনের একটি মিছিল সটান উঠে গিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট রুমের বাইরে। তখন সিন্ডিকেটের বৈঠক চলছিল। সিন্ডিকেটের সদস্যদের ভিতরে আটকে রেখে দীর্ঘক্ষণ স্লোগান দিয়েছিলেন ছাত্র নেতারা। এর পরপরই রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজে শারীরবিদ্যা বিভাগে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে। তখনও ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সংযত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। শঙ্কুদেব পন্ডা তখন দাবি করেছিলেন, শিক্ষামন্ত্রী যা বলেছেন তা অন্য দলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সেই নেতৃত্বে বদল এসেছে। শঙ্কুদেবের পরিবর্তে এখন সভাপতি হয়েছেন অশোক রুদ্র। কিন্তু সোমবারের ঘটনা দেখাল সংগঠনের নেতা-কর্মীদের চালচলনে কোনও পরিবর্তন হয়নি। যদিও নতুন সভাপতি নিজে এ দিনের আন্দোলনে উপস্থিত ছিলেন না।
এ দিন দুপুরের পর থেকে ক্লাস চলাকালীনই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে জড়ো হচ্ছিলেন আটটি ক্যাম্পাসের ছাত্রনেতা এবং কয়েকটি হস্টেলের আবাসিক ছাত্রছাত্রীরা। এঁদের মধ্যে ছিলেন টিএমসিপি নেতা সুজিত শাম, সৌরভ অধিকারী। ছাত্র নেতাদের সঙ্গেই সেখানে হাজির হয়েছিলেন ক্রিক রো অঞ্চলের তৃণমূল নেতা চিনু হাজরা। তবে কিছুক্ষণ পরে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যান। পুরো দলটি প্রথমে কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে ঢুকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে মিছিল করেন। তার পর সওয়া তিনটে নাগাদ স্লোগান দিতে দিতে দ্বারভাঙা ভবনের ভিতরে ঢুকে সেনেট হলের বাইরে বসে পড়েন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি ক্যাম্পাসেই বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। গত এক বছর ধরে বারবার বলা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তাই এ দিন তাঁরা নিজেদের দাবি জানাতে এসেছেন। তাঁদের দাবি ছিল, অবিলম্বে সাংবাদিক বিভাগের প্রধান পদে এবং অন্যান্য বিভাগের শূন্য পদগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। ক্যান্টিনে খাবারের মান উন্নয়ন, নিয়মিত বাথরুম সাফাই, কমন রুম সারানো, হস্টেলে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এই বিক্ষোভ এবং স্লোগান চলার পর আচমকা কয়েক জন ছাত্রনেতা উপাচার্যের সেক্রেটারির ঘরে ঢুকে পড়েন এবং পরে উপাচার্যের ঘরেও চলে যান। সংখ্যায় তাঁরা ছিলেন ১৫ জনেরও বেশি। প্রায় ঘণ্টাখানেক কথাবার্তার পর সাড়ে ৫টা নাগাদ বিক্ষোভকারী দলটি উপাচার্যের ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। তাঁদের এ হেন আচরণে শিক্ষামন্ত্রী যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, বারবার নির্দেশ দেওয়ার পরেও ছাত্র সংগঠনের এই উচ্ছ্ৃঙ্খল আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। পার্থবাবুর কথায়, “এ দিনের কাজটি ছাত্রছাত্রীরা ভাল করেনি। এ বার আমি উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে ব্যবস্থা নিতে বলব।”
সুরঞ্জনবাবু বরাবর ছাত্রবৎসল বলেই পরিচিত। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী যেমন পুলিশ ডেকে ছাত্রদের মার খাইয়েছিলেন, সুরঞ্জনবাবু তা কোনও দিনই করেননি। রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজে টিএমসিপির তাণ্ডবের সময় ভীত ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে ঘিরে ধরে বলেছিলেন, এমন চলতে থাকলে অভিভাবকরা আর কলেজে আসতে দেবেন না। উপাচার্য নিজে পরিচয়পত্র দেখে দেখে বহিরাগতদের আটকে পড়ুয়াদের নিরাপদে কলেজে ঢোকার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই সুরঞ্জনবাবু এ দিনও বলেন, ছাত্রছাত্রীদের গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে দাবি জানানোর। তাঁদের বেশ কিছু দাবি ন্যায়সঙ্গতও বটে। তিনি নিজে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবেন। “কিন্তু আগে থেকে কিছু না জানিয়ে আচমকা এসে যে ভাবে হইচই করে অশান্তির পরিবেশ তৈরি করা হলো, সেটা বাঞ্ছনীয় ছিল না।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন এই অশান্তি চলছে, তখনই বিধানসভায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শান্তিরক্ষার আবেদন নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত ছিল শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটা। রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষিকা রোশেনারা মিশ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন বা বর্ধমানের বিবেকানন্দ কলেজে শিক্ষিকাকে মারধরের ঘটনার কথা জানিয়ে নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার কথাই শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছেন ওয়েবকুটা নেতৃত্ব। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ বলেন, “আমরা লিখিত ভাবে শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছি, ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে যে রকম হিংসা-হানাহানি চলছে, তাতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।” কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এই আবহের কথা শিক্ষামন্ত্রী খুব ভালই জানেন। এর আগে তিনি নিজেই উপাচার্য-অধ্যক্ষদের কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু যেখানে শাসক দলের ছাত্রনেতারাই যখন তখন সদলবলে চোখ রাঙিয়ে যাচ্ছেন, তখন কোনও অধ্যক্ষ বা উপাচার্য একা কী করবেন, সে প্রশ্ন তখনই উঠেছিল। এ দিনও পার্থবাবু বলেন, “আমি ওঁদের পেশাগত এবং প্রশাসনিক সমস্যার কথা শুনেছি। সমস্যা সমাধানে যতটা সম্ভব চেষ্টা করব।”



এবিপি আনন্দ ওয়েব ডেস্ক  Tuesday, 04 November 2014


তোলা তুলছেন দলীয় নেতাদের একাংশ। চাঞ্চল্যকর খোলসা তৃণমূলের পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়ের। বললেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে জেলা নেতৃত্ব সবাইকে এবিষয়ে জানানো হয়েছে। যদিও, তৃণমূলের জেলা সভাপতির সাফাই, তোলাবাজির কোনও অভিযোগ তাঁর কাছে আসেনি।
শিশির অধিকারীর বক্তব্যের রেশ এখনও কাটেনি। তার মধ্যেই এবার দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগে সরব পূর্বস্থলী উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। ১৯ অক্টোবর মন্তেশ্বরে তৃণমূলের কর্মিসভায়, তিনি বলেন, দলের কিছু নেতা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তোলা আদায় করছে।
দলের একাংশের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ থেকে যে তিনি একচুলও সরেননি, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক। উল্টে সুর আরও চড়িয়ে তাঁর প্রশ্ন, জোর করে চাঁদা আদায়ের নামে কেউ যদি টাকা তোলেন, তাহলে সেটাকে কী বলব?
তৃণমূল বিধায়ক যে মঞ্চ থেকে দলের একাংশ তোলাবাজি করছে বলে সরব, তখন মঞ্চে উপস্থিত রাজ্যের মন্ত্রী তথা বর্ধমান জেলা গ্রামীণ তৃণমূলের সভাপতি স্বপন দেবনাথও। মঞ্চে বসে দলীয় বিধায়কের এই চাঞ্চল্যকর  খোলসার কথা শুনলেও এখন তাঁর সাফাই, তোলাবাজির কোনও অভিযোগ এখনও তিনি পাননি।

দলীয় নেতাদের একাংশ তোলাবাজির সঙ্গে যুক্ত বলে দিন কয়েক আগেই সরব হয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারীও।  কিন্তু, সাংসদ দলের একাংশের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগে সরব হোন কিংবা বিধায়ক...এখনও পর্যন্ত তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব কোনও কড়া পদক্ষেপ করছে বা কারোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, এমনটা শোনা যায়নি। উল্টে, সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেই কাজ সেরেছে দল। যা বিরোধীদের হাতে তুলে দিয়েছে হাতিয়ার। তাদের কটাক্ষ, যাঁরাই তোলাবাজির বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন, তাঁদের সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে নিষেধ করে আসলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে তৃণমূল।

ক্ষমতার স্বার্থে মমতা দেশের নিরাপত্তা নিয়ে খেলছে

No comments:

Post a Comment