Sunday, October 19, 2014

TMC govt's politics and bias attitude made State CID defunct body

নেই প্রশিক্ষণ, সমন্বয়, সিআইডি কার্যত নিধিরাম

সুরবেক বিশ্বাস

কলকাতা, ২০ অক্টোবর, ২০১৪


খাগড়াগড় বিস্ফোরণের মতো ঘটনার তদন্তে সিআইডি নামলে এখন ব্যর্থতা ছাড়া তাঁদের অন্য কিছু জুটবে না বলে জানাচ্ছেন অফিসারদের একাংশই!
এনআইএ একের পর এক রহস্যের জাল ভেদ করে এগোনোয় সিআইডি-র ব্যর্থতা আরও বেশি করে প্রকট হচ্ছে। যদিও এক সপ্তাহ যাবৎ সিআইডি-র হাতেই ছিল তদন্তভার। সিআইডি-র অফিসারদের অনেকেরই বক্তব্য, তাঁদের এই ধরনের ব্যর্থতা স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিতই ছিল।
বর্ধমানের বাদশাহি রোডের জঙ্গি ডেরা থেকে এনআইএ ও এনএসজি ১৬ অক্টোবর ৩৫টি দেশি গ্রেনেড ও চারটি সকেট বোমা উদ্ধার করার পরে প্রশ্ন উঠেছে, এ সব সিআইডি-র চোখ এড়িয়ে গেল কী করে? সিআইডি-র দুই অফিসারের দাবি, “আমরা ৯ অক্টোবরই আন্দাজ করেছিলাম, ওই জায়গায় বোমা বা বিস্ফোরক থাকতে পারে। কিন্তু তখন সন্ধে নেমে গিয়েছে। বম্ব স্কোয়াডও অন্যত্র ব্যস্ত। তাই, ভেবেছিলাম পর দিন সকালে তল্লাশি চালানো হবে।” পর দিন কী হল? সিআইডি-র ওই অফিসারদের বক্তব্য, “৯ তারিখ সন্ধেতেই জানা গেল, তদন্তভার এনআইএ-কে দেওয়া হচ্ছে। তাই, পর দিন আমরা মামলার নথিপত্র এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।”
কিন্তু এটা যে তল্লাশি না চালিয়ে অরক্ষিত অবস্থায় জায়গাটি ফেলে রাখার কোনও যুক্তি হতে পারে, এনএসজি তো বটেই, এনআইএ-র অফিসারেরাও সে কথা ভাবতে পারছেন না। তাঁদের প্রশ্ন, বিস্ফোরণ হলে কী হত? আসলে এমন গয়ংগচ্ছ ও অপেশাদার মনোভাব, গাফিলতি ও সিদ্ধান্তহীনতাই সিআইডি-র বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে বলে সংস্থার গোয়েন্দাদেরই একাংশ মনে করছেন।   
অথচ এই সিআইডি তদন্তেই এক যুগ আগে বেরোয়, খাদিমকর্তা পার্থ রায়বর্মনের মুক্তিপণের টাকার একাংশ ৯/১১-র হামলাকারীদের চাঁই মহম্মদ আটার কাছে পৌঁছেছে। বিভিন্ন সময়ে জইশ-ই-মহম্মদ ও লস্কর-ই-তইবা-র সদস্য এবং মাওবাদী নেতা তেলেুগু দীপককে গ্রেফতার করার মতো সাফল্য সিআইডি পেয়েছে। ওই সব তদন্তে যুক্ত অফিসারদের অনেকে এখনও সিআইডি-তে রয়েছেন।
তবে কেন সিআইডি-র এই হাল?
জঙ্গি কার্যকলাপ ও আন্তঃরাজ্য অপরাধ দমনের বিশেষজ্ঞ সংস্থা হিসেবে স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ (এসওজি) নামে সিআইডি-র একটি শাখা তৈরি করা হয়েছিল এক যুগ আগে। কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এরও আগে তৈরি হয়েছিল এসওজি। মূলত ওই শাখারই অফিসারদের খাগড়াগড়ের তদন্তে পাঠানো হয়েছিল। তা হলে তাঁরা ব্যর্থ হলেন কেন? সিআইডি সূত্রের খবর, বছর চার-পাঁচ ধরে প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবই এর মূল কারণ। কখনও সিআইডি-তে যোগ্য নেতৃত্বের অভাব দেখা গিয়েছে, আবার কখনও সে রকম যোগ্য অফিসার থাকলেও তাঁকে বা তাঁদের কাজ করতে দেওয়া হয়নি।
বছর কয়েক আগে সিআইডি-র এডিজি পদে নিয়োগ করা হয়েছিল এক অফিসারকে। সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ইনস্পেক্টর ও সাব-ইনস্পেক্টররা ওই আইপিএস অফিসারের মনোভাব দেখে বহু দিন পরে কাজে উৎসাহ পান। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই এডিজি বুঝতে পারেন, তাঁর উপর মাতব্বরি করছেন এক ডিআইজি এবং সেটা হচ্ছে উপরমহলের নির্দেশেই। হতোদ্যম হয়ে পড়েন ওই এডিজি। তিনি এখন সিআইডি-তেই নেই। আবার যে ডিআইজি তাঁর উপর ছড়ি ঘোরাতেন, তিনি অধস্তন অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাঁর যে সব ‘সোর্স’ আছে, তাঁর সামনে এনে হাজির করাতে হবে। হতবাক হয়ে যান সেই অফিসারেরা। কোনও কাজের ব্যাপারে লিখিত অনুমতি চাইলে মাসের পর মাস ফাইল পড়ে থাকত ওই ডিআইজি-র টেবিলে।
এক ইনস্পেক্টরের কথায়, “ভাল কাজের জন্য কিছু ক্ষেত্রে আমাদের উপর বিশ্বাস রাখাটাই দস্তুর। কিন্তু সব কিছুতে কৈফিয়ত তলব করা হতে লাগল।” তিনি বলেন, “খবর পেয়েও অনেক ক্ষেত্রেই সময় মতো কলকাতার বাইরে না যেতে পেরে দেখেছি, বড় একটি চক্র হাতছাড়া। জেরবার হয়ে একটা সময় পর আমাদের উদ্যোগটাই মরে গেল।” ওই অফিসারের বক্তব্য, উপরওয়ালারা যেটুকু করতে বলেন, সেটুকুই করা হয় এবং এই মানসিকতা নিয়ে খাগড়াগড়ের মতো ঘটনার তদন্তে সফল হওয়া যায় না।
সিআইডি অফিসারেরাই ২০০৫-এ কলকাতার লেক রোড থেকে এক কোটিরও বেশি জাল ভারতীয় টাকার নোট উদ্ধার করেন। এক সঙ্গে এত জাল টাকা রাজ্যে আর কখনও উদ্ধার করা হয়নি। সিআইডি সেই সূত্র পায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এসআইবি (সাবসিডিয়ারি ইনটেলিজেন্স ব্যুরো)-র কাছে। শুধু এসআইবি নয়, বছর চারেক আগেও সিআইডি-র এসওজি এসআইবি, র, সেনা গোয়েন্দা, বিএসএফ এবং ভিন রাজ্যের পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করত। সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সমন্বয় এখন কার্যত বন্ধ।
এসওজি বছর ভর জঙ্গি নেটওয়ার্ক ও এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে চর্চা করত, খবর নিত এবং জেলায় জেলায় বিভিন্ন সোর্স-এর মাধ্যমে নজরদারি চালাত। সে সবের ইতি হয়েছে। উপরন্তু সিবিআই, আইবি-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির কাছে সিআইডি অফিসারদের প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়াও বন্ধ হয়েছে। 
কেন? সিআইডি সূত্রের খবর, বিভিন্ন সময়ে বড় দায়িত্বে থাকা মূলত চার-পাঁচ জন আইপিএস অফিসারের ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও যোগাযোগে ওই সব হত। তাই, তাঁরা যাওয়ার পর যা হওয়ার তাই হয়েছে। তাই খাগড়াগড়ে তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা কার্যত তল পাননি বলে সিআইডি অফিসারদের একাংশের অভিমত। তাঁদের বক্তব্য, সিআইডি-তে স্থায়ী ‘সিস্টেম’ বা ব্যবস্থা চালু করা হয়নি, সাফল্য যেটুকু এসেছিল, ব্যক্তিগত উদ্যোগে। এক কর্তার কথায়, “সুশান্ত ঘোষ, লক্ষ্মণ শেঠদের গ্রেফতার আর খাগড়াগড়ের মতো ঘটনার তদন্ত করা এক নয়। এনআইএ সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে।”


কাদের স্বার্থে বর্ধমান এস পি বিস্ফোরণের প্রমাণ নষ্ট করল এবং ভুল রিপোর্ট দিয়ে তদন্ত ভুলপথে চালিত করতে চাইলেন কাকে বাঁচাতে?

No comments:

Post a Comment