Wednesday, October 8, 2014

Islamic Terrorist network in West Bengal

জেরার পরে হানা, পুলিশ দেখল মাদ্রাসা ফাঁকা

নিজস্ব প্রতিবেদন (সৌজন্য - আনন্দবাজার পত্রিকা)

৮ অক্টোবর, ২০১৪,


7

মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া গ্রামের মেয়েদের 

মাদ্রাসা। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

দিন দুয়েক ধরেই সুতোটা স্পষ্ট হচ্ছিল। খাগড়াগড় বিস্ফোরণে অভিযুক্তদের অতীত খুঁজে দেখতে গিয়ে মঙ্গলবার বর্ধমানের মঙ্গলকোটে সরকারি অনুমোদনহীন একটি মাদ্রাসায় হানা দিল পুলিশ। যদিও কাউকেই তারা ধরতে পারেনি।
শুধু ওই মাদ্রাসাটিই নয়। রাজ্যের এ রকম কিছু অনুমোদনহীন মাদ্রাসায় ‘জেহাদ’-এর প্রচার ও জঙ্গি প্রশিক্ষণ চলছে বলেই গোয়েন্দাদের দাবি। বিস্ফোরণে মৃত শাকিল আহমেদের মোবাইলের কললিস্ট ঘেঁটে পুলিশ এমন পাঁচ জনের নাম পেয়েছে, যারা খাগড়াগড়েই একটি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী হিসেবে থাকত, আপাতত বেপাত্তা। পূর্বস্থলী থেকে ধৃত হাসেম মোল্লাও এ রকম একাধিক মাদ্রাসায় পড়েছিল বলে দাবি গোয়েন্দাদের। বিস্ফোরণে জখম আব্দুল হাকিম লালগোলার মোকামনগরে একটি মাদ্রাসায় গিয়ে বেশ কয়েক বার জঙ্গি কার্যকলাপের প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলেও গোয়েন্দাদের কাছে খবর।
বারো বছর আগেই, ২০০২ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মাদ্রাসা বোর্ডের অনুমতি ছাড়া চলা সব মাদ্রাসা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, বিজ্ঞান, গণিত, সাহিত্য পড়িয়ে দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মূলস্রোতে সামিল করার বদলে এই ধরনের মাদ্রাসায় তাদের শুধু শাস্ত্রশিক্ষায় আবদ্ধ রাখা হচ্ছে। এতে কিছু ক্ষেত্রে এক ধরনের মৌলবাদী চিন্তাধারারও প্রসার ঘটে। নাশকতার বীজ বপন হয়। এই নিয়ে হইচই হওয়ায় পরে অবশ্য কথার ‘অপব্যাখ্যা’ হচ্ছে দাবি করে তিনি পিছিয়ে যান।
গোয়েন্দাদের মতে, অনুমতি ছাড়া চলা এ ধরনের বেশির ভাগ মাদ্রাসায় সাধারণত ধর্মশাস্ত্রের চর্চা হয়। কিছু মাদ্রাসায় শাস্ত্রচর্চার আড়ালে আসলে জঙ্গি কার্যকলাপ ও প্রশিক্ষণ চলছে বলে খবর। এই মাদ্রাসাগুলিকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনা গেলে ঝুঁকি অনেকটাই কমবে বলে অনেকে মনে করেন। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রকম বহু সংখ্যক মাদ্রাসাকে সরকারি অনুমোদন দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বেশির ভাগ মাদ্রাসা আগ্রহ না দেখানোয় তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।
বর্ধমানের খাগড়াগড়ের মাদ্রাসা। ছবি: উদিত সিংহ
বুদ্ধবাবুর আশঙ্কা যে একেবারে অমূলক ছিল না, তা গোয়েন্দাদের তদন্তে অনেকটাই স্পষ্ট। সিআইডি অফিসারদের দাবি, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান এবং নদিয়া এই তিন জেলার বেশ কয়েকটি মাদ্রাসায় জঙ্গি কার্যকলাপের সূত্র খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। হাসেম মোল্লা এবং আব্দুল হাকিমকে জেরা করে যা তথ্য মিলেছে, তাতে ওই সব মাদ্রাসার বেশ কয়েকটিতে বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণ শিবিরও হয়েছে বলে জানতে পেরেছে সিআইডি।
বিস্ফোরণের পরে খাগড়াগড়ের বাড়ি থেকে রাজিয়া বিবি ও আলিমা বিবি নামে যে দুই মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের জেরা করেই মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া গ্রামের একটি মাদ্রাসার হদিস পায় সিআইডি। তাদের দাবি, জেরায় দুই মহিলা ওই মাদ্রাসায় আবাসিক ছাত্রীদের জেহাদের প্রশিক্ষণ দিতে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে। আলিমা এক সময়ে ওই মাদ্রাসাতেই পড়ত। বিস্ফোরণে অন্যতম অভিযুক্ত, মঙ্গলকোটের কুলসুনো গ্রামের আবুল কালাম বছর দুয়েক আগে পর্যন্ত এই মাদ্রাসাতেই থাকত। আবাসিকদের জন্য বাজারও করত।
এ দিন দুপুরে সেই ‘শিমুলিয়া মহিলা মাদ্রাসা’য় হানা দেয় পুলিশ। মাটির দেওয়াল, খড়ের চাল ও টিনের দরজা দেওয়া গোটা চারেক ঘর তখন খাঁ-খাঁ করছে। কোনও জিনিসপত্রও নেই! স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর কয়েক আগে পাড়ারই রাজমিস্ত্রি বোরহান শেখের দেওয়া চার কাঠা জমিতে মাদ্রাসাটি তৈরি হয়। সেখানে ৩৫-৪০টি মেয়ে থাকত। বেশির ভাগেরই বাড়ি নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মেয়েদের মুখ সব সময়ে বোরখায় ঢাকা থাকত। গ্রামবাসীদের সঙ্গে তারা মেলামেশা করত না। কেউ সেখানে যায়, সেটাও পছন্দ করত না। এই ধরনের মাদ্রাসা সাধারণত চলে স্থানীয় মানুষের দানে। কিন্তু এই মাদ্রাসাটির জন্য কোনও দিন গ্রামের কারও কাছে সাহায্য চাওয়া হয়নি বলেই জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ দিন বোরহান শেখের খোঁজ পায়নি পুলিশ। পাশাপাশি, এক শিক্ষককেও তারা খুঁজছে।
মঙ্গলকোটের কুলসুনো গ্রামের বাড়িতে আবুল
কালামের মা হাবিবা বিবি। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
খাগড়াগড়ের মাদ্রাসা থেকে উধাও হয়ে যাওয়া পাঁচ যুবকের খোঁজেও তল্লাশি শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। প্রাথমিক ভাবে এই পাঁচ জনের মধ্যে দু’এক জনকে ধরতে পারলেই বর্ধমানের ঘটনা সম্পর্কে বহু তথ্য পাওয়া যাবে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। তাঁদের বক্তব্য, পলাতক ওই পাঁচ জনেরই বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে। ঘটনার পরে ওই পাঁচ জনের মধ্যে দু’জন সম্ভবত সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে চলে গিয়েছে। বাকি তিন জনের খোঁজ চলছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ধৃতেরা এবং পলাতকদের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু জায়গার যোগের কথা জানা গিয়েছে। ওই সব ঠিকানাতেও তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
গোয়েন্দারা জানান, খাগড়াগড়ের মাদ্রাসাটি সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এদের খরচ জোগান স্থানীয় বাসিন্দারা। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, মাদ্রাসার সবাইকে তাঁরা খুব একটা চিনতেন না। তবে ধর্মীয় স্থান হিসেবে চিহ্নিত বলে এলাকার মানুষ কোনও সন্দেহের চোখে মাদ্রাসাটিকে দেখেননি।
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, পলাতকদের পরিচয়ও প্রাথমিক ভাবে ঠিক করে বলা সম্ভব নয়। কারণ, এদের অনেকেরই একাধিক ভোটার পরিচয়পত্র রয়েছে বলে সন্দেহ। কিছু দিন অন্তর তাদের নাম পাল্টানোর বিষয়টিও তদন্তে উঠে এসেছে। এমনকী, তারা জাল পাশপোর্টও রাখে। ফলে, তাদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত সঠিক পরিচয় বলা সম্ভব নয়। তবে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ওই পাঁচ জনের চার জনের বয়স ২৬-২৮-এর মধ্যে। এক জন ৩৫-৪০ বছর বয়সী।

More: Mamta tries to hide her party's involvement in Burdwan Blast

No comments:

Post a Comment