নিহত তৃণমূল কর্মী শেখ মোজাম্মেল (সবুজ গেঞ্জি) ও
তাঁর আহত ভাই শেখ এনামুল।
তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
বাম জমানায় ছিল কেশপুর-নন্দীগ্রাম। তৃণমূলের শাসনে পাড়ুই!
ছবি সেই একই। গ্রাম জুড়ে সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব। বোমার ধোঁয়ায় ঢাকা চারপাশ। মাস্কেট থেকে মুহূর্মুহূ গুলি। রক্তাক্ত লাশ আর শয়ে শয়ে আতঙ্কিত মুখ।
লড়াইয়ের নেপথ্যে এলাকা দখল-পুনর্দখলের রাজনীতি। পাড়ুইয়ের মাখড়া গ্রামে সোমবার যা হল, বা গত কয়েক দিন ধরে যা হচ্ছে, তা সেই রাজনীতিরই অনিবার্য পরিণাম। লোকসভা ভোটে এ রাজ্যে বিজেপির উত্থানের পরে এই প্রথম এত বড় আকারে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ হলো শাসক দলের। ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও পুলিশের চোখের সামনে সেই সংঘর্ষে প্রাণ হারালেন তিন জন। এক জন বিজেপির। দু’জন তৃণমূলের।
স্থানীয় সূত্রের খবর, তৃণমূলের নিরঙ্কুশ আধিপত্য থাকা ইলামবাজার এবং পাড়ুইয়ের বিভিন্ন গ্রামে লোকসভা ভোটের কিছু আগে থেকেই উত্থান হয়েছে বিজেপির। যার জেরে এই এলাকা ক্রমশই হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। এ দিন মাখড়ায় বহিরাগত বাহিনী এনে জমি পুনর্দখল করতে চেয়েছিল তারা। বিজেপি বাধা দিয়েছে। সব মিলিয়ে ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে ‘অপারশন সূর্যোদয়’-এর প্রতিচ্ছবি। বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের অভিযোগ, “নন্দীগ্রামের মতো এখানেও যৌথ বাহিনীর (শাসক দল এবং পুলিশ) হামলা হয়েছে।”
গ্রামবাসীদের দাবি, এ দিন সকাল থেকেই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওই গ্রামে তাণ্ডব চালায় তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতী দল। বহিরাগত শ’দেড়েক দুষ্কৃতী হাতে মাস্কেট, বোমা, ভোজালি, দোনলা বন্দুক, পাইপগান, লাঠি, টাঙ্গি নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় গোটা গ্রাম। বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে ভাঙচুর করে, লুঠপাট চালায়। বিয়েবাড়ি তছনছ করে দেয়। শেখ তৌসিফ আলি নামে ১৯ বছরের এক তরুণের পেট ফুঁড়ে দেয় ওই দুষ্কৃতীদের গুলি। বিনা চিকিৎসায় সে পড়ে থাকে গ্রামের ভিতরে। দুষ্কৃতী-দাপটে তাকে কেউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাননি। ঘণ্টাদেড়েক বাদে গাড়ি করে বিজেপি সমর্থক পরিবারের ওই তরুণকে যখন সিউড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তত ক্ষণে সে মারা গিয়েছে।
অভিযোগ, গোটা ঘটনাটা গ্রামের বাইরে দাঁড়িয়ে দেখেছে পুলিশ, র্যাফ আর কমব্যাট ফোর্স। হামলা থামাবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেনি। অথচ, রবিবারই ওই এলাকায় গিয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত।
বাড়ির দেওয়ালে বোমার দাগ। সোমবার মাখড়া গ্রামে বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, তৃণমূলের হামলার প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে পাল্টা হামলা চালান গ্রামের বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরাও। দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক বোমাবাজি শুরু হয়। ঘণ্টা তিনেক পরে বোমাবাজি থামতে পুলিশবাহিনী গ্রামে ঢুকে তিন তৃণমূল কর্মীকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। শেখ সোলেমান (৪৫) এবং শেখ মোজাম্মেল (৪০) নামে দুই তৃণমূলকর্মী পরে মারা যান সিউড়ি হাসপাতালে। সোলেমানের বুকে গুলি লেগেছিল। আর মোজ্জামেলকে পিটিয়ে মারা হয়। পেটে গুলি খেয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন লাল বাস্কি ও শেখ এনামুল নামে আরও দুই তৃণমূলকর্মী। এনামুল ও মোজাম্মেল দুই ভাই এবং তাঁরা মাখড়া গ্রামেরই বাসিন্দা। লাল বাস্কির বাড়ি দুবরাজপুর থানার কলুষিতা গ্রামে। সোলেমান দুবরাজপুরের সালুঞ্চি গ্রামের বাসিন্দা।
এ দিন হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় দাবি করেছেন, তৌসিফ বাদে নিহত ও আহতেরা তাঁদের দলেরই কর্মী। তৌসিফের দিদি তনজিনা বিবি হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, “আমার ভাই রাস্তায় ঢালাইয়ের কাজ করছিল। তৃণমূলের বাইক-বাহিনী গ্রামে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। একটা গুলি ভাইয়ের পাঁজরের নীচে বিঁধে যায়।”
মাখড়া লাগোয়া চৌমণ্ডলপুরে গত শুক্রবার বোমা উদ্ধার করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন পাড়ুই থানার ওসি। সোমবার সকালে সেখানে যাওয়ার কথা ছিল জেলা বিজেপির প্রতিনিধি দলের। তাদের আটকাতেই তৃণমূলের চাপে পুলিশ-প্রশাসন রবিবার রাতারাতি ইলামবাজার ব্লকের মঙ্গলডিহি ও বাতিকার এই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে বলে বিজেপি-র অভিযোগ। মাখড়া গ্রামটি মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত।
১৪৪ ধারা থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে এত বড় দুষ্কৃতী দল মাখড়ায় ঢুকে পড়ল? কেন পুলিশ গ্রামের বাইরে দাঁড়িয়ে রইল? এই সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি জেলা ও রাজ্যের পুলিশকর্তাদের কাছে। ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জ) ত্রিপুরারি বলেন, “আমি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না। পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলুন।” পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া ফোন ধরেননি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনন্দ রায়-ও মন্তব্য করেননি। মন্তব্য করেননি আইজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মাও।
বীরভূম জেলা বিজেপি-র সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, তিনি এ দিন সকালেই খবর পান, ইলামবাজার ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা বীরভূম জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ জাফারুল ইসলামের নেতৃত্বে সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা শাল নদী পেরিয়ে কানপুর গ্রাম হয়ে মাখড়ায় ঢুকবে। এ রাজ্যে বিজেপির প্রথম ‘রাজনৈতিক শহিদ’, ইলামবাজারের কানুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ রহিম খুনে মূল অভিযুক্ত এই জাফারুলই। দিলীপবাবু বলেন, “আমি সঙ্গে সঙ্গে সে কথা বোলপুরের এসডিপিও সূর্যপ্রতাপ যাদব এবং পাড়ুইয়ের সিআই-কে জানাই। তবু পুলিশ কিছু করল না!”
সকাল ১০টা নাগাদ কিছু পুলিশকর্মী মাখড়া গ্রামে পুরুষদের ধরপাকড় শুরু করে। হাবুল মিস্টার ও শেখ প্রহ্লাদ নামে নিরীহ দুই গ্রামবাসীকে আটক করা হয় বলে অভিযোগ। এর পর বেলা ১১টা নাগাদ শাল নদী পেরিয়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনী প্রথমে হামলা চালায় মাখড়ার দক্ষিণপাড়ায়। ওই পাড়ার বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ, হামলার নেতৃত্বে ছিলেন জাফারুলই। ও দিকে, জনা পঞ্চাশেকের মোটরবাইক বাহিনী দু’দলে ভাগ হয়ে জাহানাবাদ-মোল্লাপাড়ার দিক থেকে গ্রামে ঢোকে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এলোপাথাড়ি বোমা ছুড়তে ছুড়তে দুষ্কৃতীরা প্রথমেই বিজেপি সমর্থক শেখ জিয়া আলির বাড়িতে হামলা চালায়। তিনি বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর, লুঠপাট চালানোর পরে দুষ্কৃতীরা পাশের বাড়িগুলিতে ভাঙচুর করতেও শুরু করে। এমনকী মারধরের হাত থেকে রেহাই পাননি মহিলারাও। বিজেপি সমর্থক পরিবারের মেয়েদের, এমনকী এক অন্তঃসত্ত্বারও শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। গ্রামের একাধিক তরুণী এ দিন বলেন, “তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী আমাদের মাথায় বন্দুক ধরে। ভোজালি দেখায়। রেপ করার হুমকি দেয়!”
হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেও আতঙ্ক যায়নি বাসিন্দাদের। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা শেখ আসগর আলি, শেখ আক্কেল আলির কথায়, “এত বয়স হয়ে গেল। আমাদের এলাকায় এমন গুন্ডামি আর লুঠতরাজ জীবনে কখনও দেখিনি! তৃণমূলের গুন্ডারা মুহূর্তের মধ্যে গোটা গ্রাম তছনছ করে দেয়। পুলিশ প্রথম দিকে গ্রামে ছিল। তবু হাত গুটিয়ে বসে রইল।” আক্রান্ত পরিবারের মহিলারা জানালেন, গুলি চলা শুরু হতেই পুলিশ গ্রাম ছেড়ে কেটে পড়ে।
দক্ষিণপাড়াতেই আজ, মঙ্গলবার বিয়ে হওয়ার কথা শেখ সুজলের। সেই উপলক্ষে বাড়িতে আত্মীয়েরা এসেছিলেন। প্যান্ডেল খাটানো হয়ে গিয়েছিল। রান্নার তোড়জোড় চলছিল। সুজলের ভাই শেখ উজ্জ্বল বলেন, “আগে তৃণমূল করতাম। এখন গ্রাম বাঁচাতে বিজেপি করি। সেই রাগেই তৃণমূলের বাহিনী আমাদের বাড়িতে হামলা করে। প্যান্ডেল ছিঁড়ে ফেলে বাড়িতে লুঠপাটে চালায়। মেয়েদের শাড়ি ধরে টানাটানি করে। বাড়ির একটা ছোট মেয়ের শ্লীলতাহানিও করে।” উজ্জ্বলদের পাশেই শেখ তৌসিফের বাড়ি। নিহত এই তরুণের বাবা, গ্রামের বিজেপি কর্মী শওকত আলি বলেন, “ছেলে রাস্তার কাজ করতে গিয়েছিল। তৃণমূল গুলি করে ওকে মেরে দিল! ওর তো কোনও দোষ নেই!”
তত ক্ষণে মোটরবাইক বাহিনী গ্রামে ঢুকে হামলা শুরু করেছে। উত্তরপাড়া, পশ্চিমপাড়া, মোড়লপাড়ায় মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়তে শুরু করেছে। সেই ধাক্কা সামলে ধীরে ধীরে প্রতিরোধ শুরু করেন এলাকার বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরাও। অভিযোগ, তাঁরাও পাল্টা বোমা মারতে শুরু করেন তৃণমূলের বাহিনীকে লক্ষ্য করে। নিজের বাড়িতেই পিটিয়ে মারা হয় স্থানীয় তৃণমূল কর্মী মোজাম্মেলকে। তাঁর দাদা এনামুলকেও বেধড়ক পেটানো হয়। গ্রামের মসজিদ লাগোয়া জমিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এনামুল যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে বলেন, “তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে আমি ওই দলে আছি। বিজেপির সন্ত্রাসে অনেক দিন গ্রামছাড়া ছিলাম। এ দিনই গ্রামে ফিরি। তার পরেই বিজেপি হামলা চালায়।” কিছু পরেই দক্ষিণপাড়ায় গুলি করে মারা হয় তৃণমূলকর্মী সোলেমানকে। পাল্টা হামলার মুখে পড়ে পিছু হটে তৃণমূলের বাহিনী।
বিজেপির বীরভূম জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল এ দিন অভিযোগ করেন, “দুবরাজপুর, ইলামবাজার থেকে শ’য়ে শ’য়ে দুষ্কৃতী ভাড়া করে মাখড়া গ্রাম দখলের ছক কষেছিল তৃণমূল। অনুব্রত মণ্ডল নিজে ইলামবাজারের পার্টি অফিসে বসে গোটা অপারেশন পরিচালনা করেছেন।”
তার জবাবে এ দিন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেছেন, “কিছু হার্মাদ সিপিএম ছেড়ে বিজেপি-তে গিয়েছে। তারাই এ দিন হামলা চালিয়ে আমাদের কর্মীদের মেরেছে।”
যা শুনে দুধকুমারের প্রতিক্রিয়া, “সশস্ত্র হামলা ঠেকাতে গ্রামবাসীরাই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ করেছেন। আর তাতেই হয়তো এ দিন তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা মারা গিয়েছে।”
**********
নিজস্ব সংবাদদাতা
পাড়ুই হিংসার তৃতীয় বলি তৃণমূল সমর্থক শেখ সোলেমান। সিউড়ি হাসপাতালে। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত
চপ-মুড়ি খাওয়ার সময় আছে। বাংলা সিনেমার গানের কলি গুনগুন করারও সময় ছিল বিস্তর। কিন্তু সোমবার সংঘর্ষ থামানোর সময় দেখা মেলেনি পুলিশের বীরভূমের পাড়ুই থানার মাখড়া গ্রাম সরব শুধু এই অভিযোগে। গ্রামবাসীর একটা বড় অংশের ক্ষোভ, গ্রাম থেকে বড়জোর এক কিলোমিটার দূরে হাজির থাকা পুলিশ, র্যাফ, কমব্যাট ফোর্স একটু সক্রিয় হলে তিনটে প্রাণ যেত না।
২০০৭ সালে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেই সিপিএম নন্দীগ্রাম ‘পুনদর্খল’ করে বলে অভিযোগ ছিল সে সময়ের বিরোধী দল তৃণমূলের। সাত বছর পরে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ এনেছে অন্যতম বিরোধী দল বিজেপি।
বিজেপি সমর্থক শেখ তৌসিফের পেটে বিঁধেছে গুলি। নিহত ওই তরুণের দাদা শেখ সাবির আলির অভিযোগ, “পুলিশ চেষ্টা করলে আমাদের গ্রামে যারা হামলা করতে ঢুকেছিল, তাদের সবাইকে ধরতে পারত। যে লোকগুলো বোমা-বন্দুক নিয়ে ঢুকেছিল, তাদের অস্ত্র কেড়ে নিতে পারত! একটা কাজও ওরা করেনি।” গ্রামের বাসিন্দা শেখ আজহার, শেখ জালেনুর, শেখ লালুদের ক্ষোভ, “পুলিশ এ দিন দূরে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছে। ওরা সংঘর্ষ থামাবে কী করে? ওরা তো চপ-মুড়ি খাচ্ছিল। আর গুনগুন করে গান গাইছিল।
(আরও....)
দখল-যুদ্ধের প্রত্যাবর্তন
মহেন্দ্র জেনা ও দয়াল সেনগুপ্ত
পেট ফুঁড়ে দিয়েছে গুলি। সিউড়ি হাসপাতালে মাখড়াগ্রামের শেখ তৌসিফ আলির নিথর দেহ। তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
ঝুড়িটা মাথা থেকে ছিটকে পড়তেই খোয়াগুলো ছড়িয়ে পড়েছিল চার দিকে।
সেকেন্ড কয়েক স্তব্ধতা। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা তৌসিফ এ বার নিজেও পড়ে গেল হাঁটু মুড়ে।
মাখড়া গ্রামের মাঝ বরাবর সিমেন্টের কাঁচা ঢালাইয়ের রাস্তা মাড়িয়ে তখন মরিয়া হয়ে ছুটছেন গ্রামবাসীরা।
চোখ বন্ধ করে সোমবার সকালের ছবিটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন শেখ সাবির আলি। মাখড়ায় তৃণমূলের ‘হার্মাদ’ বাহিনীর আক্রমণের প্রথম বলি, সতেরো বছরের তৌসিফের দাদা।
সোমবার সন্ধ্যায় বাড়ির উঠোনে শুয়ে এক টানা বলে চলেছেন, “ভাইটাকে একটু পানি দিতে পারলাম না রে...একটু পানি চেয়েছিল শুধু!”
এ দিন বেলা এগারোটা নাগাদ তৃণমূলের ‘আক্রমণ’ শুরু হতেই সাবির শুনেছিলেন, মোটরবাইকের আওয়াজ, আর থেকে থেকেই ‘ফট ফট’ শব্দ। অচেনা শব্দটা ‘ঠাওর’ করতে পারেননি তিনি। সাবির বলছেন, “গুলি চলছে ঠাওর করতে পারিনি। অন্যদের পালাতে দেখে কাজ ফেলে আমিও পালাতে যাব, দেখি ভাইয়ের মাথা থেকে ঝুড়িটা ঝড়াৎ করে পড়ে গেল।” আর, তার পরেই চোখের সামনে দেখলেন মুখ থুবড়ে পড়ে যাচ্ছে তৌসিফ। ছুটে যেতেই শুনেছিলেন, “ভাইটা বার কয়েক বলল, পানি-পানি। আমি এ দিক ও-দিক তাকিয়ে কোথাও পানি খুঁজে পেলাম না।” গ্রামের অন্যদের সঙ্গে পাঁজাকোলা করে তৌসিফকে ‘নিরাপদ’ আশ্রয়ে নিয়ে গেলেও পানি আর দেওয়া হয়নি তার মুখে। সে আক্ষেপটা যাচ্ছে না সাবিরের।
তিনি বলছেন, “হাসপাতালে নিয়ে গেলেও ভাইটা হয়তো বেঁচে যেত। কিন্তু বোমা-গুলির মধ্যে সে সুযোগটাও পেলাম কই! তিন ঘণ্টা পড়ে থেকে চোখের সামনে দেখলাম ভাইটা আস্তে আস্তে নেতিয়ে গেল।”
গ্রাম দখলের ‘লড়াই’ থিতিয়ে গেলে তৌসিফকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সিউড়ি সদর হাসপাতালে। সেই হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে তার দিদি তনজিরা বিবির আক্ষেপ, “ভাইটা রাস্তার কাজ করছিল। তৃণমূলের বাইক-বাহিনী তাকেও রেয়াত করল না গো!” তৌসিফের বাবা শওকত আলি গুলি চালাচালির সময়ে বাড়ি ছিলেন না। বলছেন, “শুনলাম ছেলেটা রাস্তায় কাজ করছিল। আমি বিজেপি করি বলে ছেলেটাকেও মারতে হবে?”
(আরও....)
নিজস্ব প্রতিবেদন
মারের জবাবে পাল্টা মার! সেই এলাকা দখল এবং পুনর্দখল ঘিরে রক্তপাতের রাজনীতি! পুলিশ-প্রশাসনের সেই একই নিষ্ক্রিয় ভূমিকা! বীরভূমের পাড়ুইয়ে গ্রামদখল ঘিরে রাজনৈতিক সংঘর্ষ মনে করিয়ে দিচ্ছে কয়েক বছর আগে বাংলার সেই চেনা ছবি।
পাড়ুইয়ে কয়েক দিন আগে পুলিশের উপরে হামলা এবং এ বার সংঘর্ষে তিন জনের মৃত্যুর ঘটনায় সামনে এসেছে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির বিবাদ। এই ঘটনাপ্রবাহ অনেককেই মনে করিয়ে দিচ্ছে বাম জমানায় কেশপুর-নন্দীগ্রামে সশস্ত্র লড়াইয়ের কথা। তৎকালীন শাসক দল সিপিএমের শিবির ছেড়ে সেই সময় বিরোধী দল তৃণমূলে নাম লেখানোর প্রবণতা যত বাড়ছিল, তত উত্তপ্ত হচ্ছিল রাজ্য-রাজনীতি। বামফ্রন্ট সরকারের শেষ কয়েক বছর রাজনৈতিক সংঘর্ষ বারেবারেই শিরোনামে এসেছে, যার অভিঘাত পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় সরকার পর্যন্ত। সোমবারের ঘটনার পরে দেখা গেল, সব একই আছে, বদলছে শুধু দলগুলির ভূমিকা। তৃণমূল এখন শাসক। আর তাদের ফেলে আসা বিরোধীর জায়গাটা নিয়েছে বিজেপি
শিশুকোলেই গ্রাম ছাড়লেন হালিমারা
গ্রামে তাণ্ডবের আতঙ্কে এলাকা ছাড়ছেন মাখড়া
গ্রামের বাসিন্দারা।
দুপুর দেড়টা। মাখড়া গ্রামের দক্ষিণপাড়ার
কংক্রিটের রাস্তায় দেখা মিলল হালিমা বিবির। সঙ্গে বছর চারেকের মেয়ে। হাতে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ নিয়ে হনহন করে হাঁটছেন। মুখেচোখে আতঙ্ক। কোথায় যাচ্ছেন, জানতে চাওয়ায় বললেন, “গ্রামই ছাড়ছি!”
কেন ছাড়ছেন?
বছর সাতাশ-আঠাশের অন্তঃসত্ত্বা হালিমার জবাব, “এ দিন আমাদের গ্রামে যা হল, তার পরে আর কোন ভরসায় এখানে থাকব। আমার স্বামী আগেই পালিয়েছেন। বাড়ির উঠোনে বোমা মারল তৃণমূলের গুন্ডারা। ভয়ে পড়ে যাই। চিকিত্সক জানিয়েছেন, আগামী মাসেই আমার সন্তান জন্ম দেওয়ার কথা। জানি না, পড়ে যাওয়ার ফলে গর্ভস্থ সন্তানের কী হবে!” জানালেন, ইলামাবাজারে বাপের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন।
শুধু হালিমা বিবিই নয়, এ দিন সশস্ত্র দুষ্কৃতী বাহিনীর হামলার পর থেকে আতঙ্কে কাঁটা হয়ে রয়েছেন মাখরার অধিকাংশ সাধারণ মানুষই। হালিমার মতোই গ্রাম ছেড়েছেন আরও অনেক মহিলা। তাঁদের মধ্যে অনেকে তৃণমূল সমর্থক। অনেকে বিজেপি সমর্থক পরিবারের বউ বা মেয়ে। কিছুটা এগোতেই স্থানীয় হাঁসড়া বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী রেশমা খাতুন পথ আটকাল। মা ফজিলা বিবিকে ডেকে নিয়ে রেশমা বলল, “এ দিন সকালে বাবা শেখ জিয়ার আলিকে পুলিশ শাসিয়ে গিয়েছে, যে কোনও সময় গ্রেফতার করবে। আমার বাবার দোষ, তিনি বিজেপি করেন।” দক্ষিণপাড়ার যে-সব বাড়িতে এ দিন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব ও লুঠপাট চালিয়েছে বলে অভিযোগ, তারই একটি হল রেশমাদের বাড়ি। রেশমার কথায়, “তৃণমূলের গুন্ডারা এ দিন আমাদের বাড়িতে ঢুকে বোমা ছুড়েছে। সোনাদানা, টাকা লুঠ করেছে।, বাড়ির আসবাবপত্র ভেঙে তছনছ করেছে। আমাকে অশ্রাব্য গালিগালাজও করে।” প্রতিবেশী আঙ্গুরা বিবির অভিযোগ, স্থানীয় কাচপুকুর পাড়ে বসে পরের পর বোমা বেঁধেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। সেখান থেকে নাগাড়ে বোমা ছোড়া হয়েছে দক্ষিণপাড়ায়।
(আরও.....)
********************
দয়াল সেনগুপ্ত ও মহেন্দ্র জেনা
আতঙ্কে গ্রাম ছাড়ছেন মাখড়ার বাসিন্দারা। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
রক্ত ঝরা সংঘর্ষের পরে কেটে গিয়েছে গোটা একটা দিন। মাখড়া গ্রামে আতঙ্কের ছায়াটা একই রকম স্পষ্ট।
সোমবার যখন পাড়ুইয়ের ওই গ্রামে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ছে, গুলি ছুটছে, তখন পুলিশ আসেনি। তারা এসেছিল সংঘর্ষ থামার পরে। মাখড়া গ্রামে পুলিশের দেখা মিলল না মঙ্গলবারও। আতঙ্কিত বাসিন্দাদের ভয় কাটাতে গ্রামে আসেননি বীরভূম জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কোনও কর্তাই। এ দিনও এক দল পুলিশ অবশ্য চোখে পড়েছে। তা অবশ্য মাখড়া থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে কুলতোড় সেতুর কাছে! আর এক দল ছিল মাখড়া থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের হাঁসড়া স্কুল মোড়ে, ইলামবাজার-বোলপুর পিচ রাস্তার ধারে। পুলিশের এই ভূমিকায় আতঙ্ক আরও চেপে বসছে এলাকায়। তাই দলে দলে গ্রাম ছাড়ছেন বাসিন্দারা। গ্রামের মসজিদ থেকে সমানে গ্রাম না ছাড়ার জন্য আবেদন জানানো সত্ত্বেও তল্পিতল্পা গুটিয়ে যে যেমন পারছেন গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।
আর যাঁরা গ্রামে থেকে যাচ্ছেন, তাঁরা মরিয়া হয়ে এককাট্টা হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, পুলিশ না থাকার সুযোগে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা ফের যে কোনও সময় হামলা চালাতে পারে। তাই নিজেরা এক হওয়া দরকার। মঙ্গলবার গ্রামে গিয়ে দেখা গিয়েছে, কোথাও গ্রামবাসীরা যৌথ উদ্যোগে রান্নাবান্না করছেন। কোথাও একযোগে চলছে পরিবেশন এবং খাওয়াদাওয়া।
(আরও.....)
মহেন্দ্র জেনা ও দয়াল সেনগুপ্ত
ফের আক্রমণের আতঙ্কেই দিন কাটল মাখড়া-র। অথচ এমন পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীদের পাশে যাদের দাঁড়ানোর কথা, মঙ্গলবার সারা দিন গ্রামের কোথাও সেই পুলিশেরই দেখা মেলেনি। অবশ্য গ্রাম থেকে কিলোমিটার দেড়েক দূরে হাঁসড়া স্কুল মোড় এবং প্রায় চার কিলোমিটার দূরের কুলতোড় সেতুর কাছে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তারা গ্রামের ভেতরে ঢোকেনি। কিন্তু কেন? এই প্রশ্ন উঠলেও পুলিশের তরফে এ দিন কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
নতুন করে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও সোমবারের দুষ্কৃতী হামলায় এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এক জনও গ্রেফতার হয়নি। এমনকী, জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও আটক করা হয়নি কারওকে। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই ঘটনায় পাড়ুই থানায় এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। পুলিশ কি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করবে? মেলেনি সেই প্রশ্নের উত্তরও।
এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সোমবারের তাণ্ডব-চিহ্ন ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। আতঙ্কের জেরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গ্রাম ছাড়তে দেখা যায় বেশির ভাগ পরিবারের মহিলাদের। সিংহ ভাগ পুরুষ যদিও পাহারার দায়িত্ব নিয়ে গ্রামেই রয়ে গিয়েছেন।
গবাদি পশুকে নিয়ে গ্রাম ছাড়ছেন মাখড়ার বাসিন্দারা। ছবি বিশ্বজিত্ রায়চৌধুরী।
কিন্তু গ্রাম কেন ছাড়ছেন?
এক মহিলা বললেন, “গ্রামের দু’টি তাজা প্রাণ চলে গেল পুলিশের চোখের সামনে। তারা কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। এর পর আর কোন ভরসায় থাকব এখানে? ফের হামলা হবে না, সেই নিশ্চয়তা কোথায়?” অন্য এক মহিলার কথায়, “এত বড় একটা ঘটনার পরেও গ্রামের কোথাও কোনও পুলিশ দেখছেন? তারাই যেখানে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে, সেখানে আমরা রাত কাটাবো কেমন ভাবে?”
(আরও.....)
**********************
**********************
Wednesday , October 29 , 2014
|
PRONAB MONDAL |
|
Policemen wait 2km outside Makhra village in Birbhum at 1.15pm on Monday. The force was waiting for reinforcements to arrive. |
|
Moyna Khatun, the 12-year-old girl who became unconscious after a bomb exploded on the tin roof of her house, has been shifted to a relative’s house 4km away in Belpata. “I don’t want to go back,” Moyna said. Pictures by Indrajit Roy |
Calcutta, Oct. 28: A Birbhum policeman who was part of the contingent that waited for over two hours to enter Makhra village citing lack of reinforcements has said the team was “sufficiently armed” to tackle the attackers and just needed “an order to act”.
“We were around 30 in the contingent and had seven Insas rifles, two 9mm pistols, two weapons to fire rubber bullets and two units of tear gas shells. We were sufficiently armed to tackle the 300-odd people who were closing in on the village from two sides,” the policeman said.
He added: “The only thing we did not have was an order to act.”
The armed police contingent waited for over two hours from 12.30pm on an approach road 2km from Makhra village. They were seen eating bread, puffed rice and rosogollas.
Asked yesterday about the two-hour wait for reinforcements, additional superintendent of police Ananda Roy had said: “It was not possible to enter the village in such a volatile situation. So we had to wait for reinforcements.”
Roy and sub-divisional police officer S.P. Yadav, who were leading the contingent, could not be contacted today. The decision by the police to wait for reinforcements came three days after a team was beaten back in nearby Choumandalpur during a raid to recover bombs.
The account by the policeman, who requested not to be identified, captures the “helplessness” of the state’s law-enforcers, who have been hobbled by political interference since the Left regime.
Violence FIRs
Four FIRs were lodged at Parui police station today in connection with the Makhra violence.
While two of the FIRs were lodged by the family members of Mozammel Haque and Suleman Sheikh, the Trinamul supporters who were killed in the violence, the third was lodged by the family of Taushik Ali, who was killed after being hit by a bullet while laying a road. The fourth FIR was lodged by the police.
Taushik’s family has named 20 people in the FIR, including the Trinamul block president.
|
|
SNEHAMOY CHAKRABORTY |
|
When The Telegraph’s photographer Indrajit Roy entered Birbhum’s Makhra village on Monday afternoon, 15 minutes after the attackers had retreated, he found Moyna Khatun (left), a 12-year-old girl, lying on the ground near the kitchen of her home. Roy recounted: “Around 2.15pm, Snehamoy Chakraborty (this newspaper’s Birbhum correspondent) and I were walking through the village along with a few other journalists when we entered the house of a farmer, Azhar Ali, whose son had got married on Sunday. We had heard that the attackers had ransacked his house and thrown away the food that had been cooked for the guests. “On entering, we saw Ali’s daughter Moyna lying unconscious near the kitchen. Azhar said that about half an hour earlier, Trinamul activists had hurled bombs near the door of their house before ransacking it. Traumatised by the sound of the bombs, Moyna had fainted, Ali said. “We were struck by the sight of three elderly ladies and some children squatting beside her and others standing around, unsure of how to respond. The family appeared to be in such a state of panic that they did not seem to have the wits about them to splash water on the girl’s face and try to revive her. “By then, we had been told that an adjoining house was on fire. We advised the family to take the girl to a hospital and carried on. We don’t know what happened thereafter.” An intensive care specialist, who has not seen or examined the girl, said on the basis of the information provided by this newspaper that it was “highly unlikely” that mere sound of the bombs, however loud, could have caused someone to become unconscious or remain unconscious for 30 minutes. But bombs typically trigger shock waves that rip through the air and can hurl people or cause internal injuries that can lead to long periods of unconsciousness, he added. A CT scan can determine whether she has suffered any such injury, the doctor said. Picture by Indrajit Roy |
Oct. 27: Three persons were killed in Birbhum today when suspected Trinamul supporters attacked a BJP-dominated village in a “recapture raid” that is being compared to the infamous and self-destructive Nandigram operation by the CPM in 2007.
A political turf war has been going on in Birbhum for the past few weeks — an explosive phase was in evidence on Friday when a police party was beaten back with bombs by suspected BJP supporters in Choumandalpur, 7km from Makhra village where today’s raid took place.
What happened today was more alarming than usual for several reasons — not least because the audacity of the attackers and the failure of Bengal police to act were exposed on a day the nation’s top security officials were in the state to probe the Burdwan blast case. ( )
The following information has been put together on the basis of accounts from villagers and police sources.
First death
The first person to die was a 24-year-old man, Taushik Ali, who was working on a village road project.
MAKHRA (BIRBHUM), October 29, 2014
The HinduVillagers mourn the death of Sheikh Tousif Ali in Makhra village on Tuesday. Photo: Kathakali Nandi
Miscreants hurled bombs despite Section 144 being imposed on Makhra
On Monday, when the police came knocking on the doors of Ashrafa Bibi (name changed) to inform her family members that they should flee the village or else they would be attacked, they did as they were told. As the villagers rushed out of their homes, masked miscreants targeted them with country-made guns and bombs, killing three persons.
“The police stood silent while miscreants hurled bombs at us as we were trying to escape. This happened despite Section 144 being imposed on the village,” says Bibi. Prohibitory orders were clamped after police personnel on a raid were attacked last Friday in the neighbouring Choumondalpur village.
While the real motive remains unknown, villagers claim that the miscreants were supporters of the All India Trinamool Congress (AITC) belonging to other villages. The attack on Makhra was to terrorise the locals, they charged.
The village comprises mostly Muslims who, of late, have shifted their allegiance to the Bharatiya Janata Party (BJP).
|
MAKHRA (BIRBHUM): Police in West Bengal's Birbhum district on Tuesday made an attempt to defend their inaction which left three people dead.
But the move has raised questions like why did the police turn the other way while marauders forced into Makhra village when the SDO himself had enforced prohibitory orders on October 25? According to a section of villagers, police had made a public announcement that prohibitory orders had been clamped in Batikar and Mangaldihi gram panchayat areas which sweeps across the violence-stormed villages.
Not only that, the three deaths could not prod police to go beyond that five-minute route march before sundown. They remained within the security of their camps in Hansra high school, a km away. If villagers are to be believed, the two-pronged attack on Makhra was preceded by a police patrol team. This could not be independently confirmed.
MAKHRA (BIRBHUM): Trapped in a no-win situation, Birbhum police on Tuesday made a feeble attempt to defend their inaction which left three dead, including one barely out of his teens. But the more they tried to defend themselves, the deeper they were caught in the mud.
Why did the police turn the other way while marauders forced into Makhra village when the SDO himself had enforced Sec 144 CrPC on October 25? According to a section of villagers, police had made a public announcement that prohibitory orders had been clamped in Batikar and Mangaldihi gram panchayat areas, which sweeps across the violence-stormed villages.
MAKHRA ( BIRBHUM): The shamiana hasn't been pulled down. The guests who had arrived for Tuesday's wedding are debating whether they should stay back for the burials once the bodies arrive. Sk Azhar Ali, the bridegroom's father, has a bigger problem - his son Usman is so terrorized by Monday's violence that he slipped out of his home last night and is refusing to return to Makhra. Few people want to stay here tonight.
It isn't only Usman. Many people are making a beeline to flee Makhra before the sun sets. It is nothing short of an exodus.
A visibly nervous Azhar says he has called off the marriage. Pointing at the haystack that had been set ablaze, he says: "They targeted my home and looted ornaments, cash and even food - 20 kg chicken and 10 kg fish. My son Usman couldn't bear to see Tousif Sk, our neighbour, shot dead. He fell into an epileptic fit at the sight of the bullet-ridden body. He didn't want to stay last night; he still doesn't want to return."
Related :
Police recovered huge cache of bombs from Sattora healh centre at Parui
Parui OC attacked, by Bengal ruling party, admitted in ICU