Wednesday, September 10, 2014

Mamta party TMC sent Sardha money to West Asia

যুক্ত তৃণমূলের নবরত্ন, বিদেশে দু’শো কোটি

প্রেমাংশু চৌধুরী (সৌজন্য - আনন্দবাজার পত্রিকা)

নয়াদিল্লি, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৩:২৬:৫৪


তৃণমূলের ‘নবরত্ন’-কে বাঁচাতে মাঠে নেমেছিলেন ২০ জন নেতা। রাজ্য প্রশাসনের আমলাদের কাছে নির্দেশ গিয়েছিল, ফাইল না দেখানোর। মুখ বন্ধ রাখার। তৃণমূলের সাংসদদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরাও সহযোগিতা করেননি।
উদ্দেশ্য ছিল একটাই যাতে সারদা কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত কোনও তথ্যই কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে না পৌঁছয়। তার পরেও অবশ্য কিছু প্রমাণ থেকে গিয়েছে। এবং তা হাতেও এসেছে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘গুরুতর জালিয়াতি তদন্ত সংস্থা’ তথা এসএফআইও-র। কাল তারা কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের কাছে এক গোপন রিপোর্ট দিয়েছে। এসএফআইও জানিয়েছে, সারদা গোষ্ঠীর অন্তত ২০০ কোটি টাকা আমেরিকা ও পশ্চিম এশিয়ায় পাচার করা হয়েছে। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে সারদার বিদেশে টাকা পাচারের তদন্ত করবে সিবিআই। 
ওই গোপন রিপোর্টে বলা হয়েছে, তৃণমূলের মোট ৯ জন শীর্ষনেতা সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত ছিলেন। সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর দলের ২০ জন নেতাকে সারদা কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। যাঁদের প্রধান কাজ ছিল, সারদার সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের জড়িত থাকার প্রমাণ মুছে ফেলা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের এই নবরত্ন সভার সদস্য কারা, তা নিয়ে অবশ্য এসএফআইও-কর্তারা মুখ খুলতে নারাজ। সূত্রের খবর, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জন এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য। কেউ কেউ তাঁর দলের সাংসদ।
সব প্রমাণ কি মুছে ফেলা গিয়েছে?
স্পষ্ট উত্তর, না। এসএফআইও-র গোপন রিপোর্ট বলছে, সারদা গোষ্ঠীর পর্যটন সংস্থা সারদা ট্যুর্স অ্যান্ড ট্রাভেল্সের মাধ্যমে মোট ২০০ কোটি টাকা আমেরিকা ও পশ্চিম এশিয়ায় পাচার করা হয়েছে। মূলত হাওয়ালা চক্রের মাধ্যমেই এই টাকা বিদেশে পাঠানো হয়। সারদার এই পর্যটন সংস্থার সঙ্গেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে রেল মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা আইআরসিটিসি চুক্তি করেছিল। সাধারণ মানুষের থেকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার ‘ট্যুর প্যাকেজ’-এর নাম করে ওই টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু ওই টাকাই আমেরিকা ও পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে বেআইনি ভাবে পাচার করে দেওয়া হয়।
এসএফআইও-র রিপোর্ট বলছে, সারদা গোষ্ঠী লগ্নিকারীদের থেকে জোগাড় করা প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা নয়ছয় করেছে বলে প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল্স একাই ১,১০০ কোটি টাকা নয়ছয় করেছে। যার মধ্যে ২০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। এসএফআইও সূত্রের বক্তব্য, “এমন নয় যে সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারির পরিমাণ মাত্র ২,৫০০ কোটি টাকা। আমরা এই পরিমাণ টাকা নয়ছয়ের প্রমাণ পেয়েছি। এই পুরো অর্থটাই সাধারণ মানুষকে প্রতারণার অর্থ।” কলকাতার ফুটবল ক্লাবগুলিতেও সারদা কেলেঙ্কারির টাকা খাটানো হয়েছিল বলে প্রমাণ মিলেছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, সারদা গোষ্ঠীর টাকা নানা রকম ব্যবসায়িক লেনদেনের মাধ্যমে অন্যান্য সংস্থায় পাঠানো হয়। পরে আবার তা সারদা গোষ্ঠীর সিন্দুকেই ফিরে আসে। বেআইনি লেনদেনকে এ ভাবে আইনি মোড়ক দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল।
এসএফআইও-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, তৃণমূলের যে সব সাংসদ ও নেতাকে দিল্লিতে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল, তাঁরা সব রকম তথ্য দিতে রাজি হননি। গত বছরের অক্টোবর মাসে দিল্লিতে এসএফআইও কুণাল ঘোষ ও সৃঞ্জয় বসুকে জেরা করা হয়। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব-কর্তা দেবব্রত সরকারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসএফআইও-র রিপোর্ট বলেছে, কুণাল ঘোষের কাছে মূলত সারদার টাকা কোথায় পাচার হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়। সুদীপ্ত সেনের বিদেশের যোগাযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সারদার টাকা কলকাতার ফুটবল ক্লাবগুলিতে কোথায় লগ্নি করা হয়েছে, তা নিয়েও কুণালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।
কুণালকে গত ১৮ অক্টোবর দিল্লিতে আট ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ২৩ অক্টোবর সৃঞ্জয়কে জেরা করে এসএফআইও। তাঁর মিডিয়া সংস্থার সঙ্গে সারদা গোষ্ঠীর চুক্তির পাশাপাশি মোহনবাগান ক্লাবের সঙ্গে সারদার আর্থিক লেনদেনের বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়েছিল। ২০১০ সালে সারদা গোষ্ঠী মোহনবাগান ক্লাবের যুগ্ম-স্পনসর হিসেবে তিন বছরের চুক্তি করে। ওই চুক্তির ঠিক দু’মাস আগে সারদা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সরকারি স্পনসর হয়েছিল। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে দেবব্রত ওরফে নিতু সরকারকে জেরা করা হয়।
সিবিআই সূত্র বলছে, বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়ে সন্দেহের তির দু’জনের দিকে। এক জন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ। এই সংখ্যালঘু সাংসদের সঙ্গে বাংলাদেশ ও পশ্চিম এশিয়ায় বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ রয়েছে। অন্য জন তৃণমূলের এক নেত্রীর স্বামী। বহু দিন ধরেই দুবাইয়ে ব্যবসা রয়েছে তাঁর। দু’জনকেই সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
গত বছরের এপ্রিলে কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক সারদা গোষ্ঠীর বেআইনি কাজকারবার নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরে এসএফআইও বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করে। কলকাতাতেও দফতর খোলা হয়। কিন্তু মন্ত্রককে তারা জানিয়েছে, তদন্তে নেমে প্রতি পদে পুলিশ ও রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের অসহযোগিতার মুখে পড়তে হয়েছে। আমলারা কোনও ফাইল দেখাতে চাননি। খোলেননি মুখ। তথ্য ও নথি দেয়নি পুলিশ। এসএফআইও-কর্তাদের মনে হয়েছে, এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের উপরমহল থেকে অলিখিত নির্দেশ জারি হয়েছিল। সারদা তদন্তে নেমে একই রকম অসহযোগিতায় ভুগতে হয়েছে ইডি ও সিবিআইকেও।

No comments:

Post a Comment