Saturday, September 27, 2014

Mamta destroys democracy, pushed Bengal towards anarchy

সম্পাদকীয় ১

নৈতিকতার দায়

২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, 
(সৌজন্য - আনন্দবাজার পত্রিকা)




মুড়ি নারকেল খাওয়াইবার সুপরামর্শে রাজ্যের অন্ধকারগুলি ঢাকা পড়িতেছে না। কলিকাতা হাইকোর্ট দ্ব্যর্থহীন ভাষায় পাড়ুই মামলায় রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করিয়াছে। শুধু পাড়ুই মামলাতেই নহে, রাজনৈতিক চাপের নিকট মেরুদণ্ড বিসর্জন দেওয়া পুলিশের অভ্যাস হইয়া উঠিয়াছে। সারদা-কাণ্ড বড় উদাহরণ। তাপস পাল-কাণ্ডেও পুলিশ ধ্যানমগ্ন ছিল। শুধু পুলিশ নহে, যতগুলি প্রতিষ্ঠানকে নষ্ট করা সম্ভব, তাহাদের নিরপেক্ষতা লঙ্ঘন করা সম্ভব, সরকার করিয়াছে। রাজ্যের মানবাধিকার কমিশন নীরব হইয়াছে, মহিলা কমিশন সরকারের সানাই বাজাইতে ব্যস্ত। অন্ধকারের শাসন প্রতিষ্ঠা করিতে যাহা করণীয়, মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁহার পাইক-বরকন্দাজরা কিছুই বাদ রাখেন নাই। পশ্চিমবঙ্গের সরকার যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অনাগ্রহী, বিভিন্ন সাম্প্রতিক মামলায় আদালতের পর্যবেক্ষণে কথাটি স্পষ্ট। সিবিআই আদালতের দ্বারস্থ হইয়া জানাইয়াছে, সারদা মামলার তদন্তে যত রকম অসহযোগিতা সম্ভব, রাজ্য পুলিশ করিতেছে। দেখা যাইতেছে, রাজ্যের শাসকদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কোনও প্রতিষ্ঠানের উপরই কাহারও আর ভরসা নাই। পুলিশ, আমলাতন্ত্র যে ভাবে রাজনৈতিক প্রভুদের নিকট জোড়হস্ত হইয়াছে, তাহাতে ভরসা থাকিবার কারণও নাই। সেই কারণেই সিবিআইয়ের মুখাপেক্ষী না হইলে এই রাজ্যে তদন্ত হয় না, আদালতের দ্বারস্থ না হইলে সুবিচার মেলে না। এই অন্ধকার অতি অস্বাভাবিক।
পশ্চিমবঙ্গে কেন, গোটা দেশের ইতিহাসেই এমন সুতীব্র পক্ষপাতী, দলতন্ত্রে বিশ্বাসী ও নীতিজ্ঞানহীন শাসক বিরল। এই অন্ধকারে আইনের শাসন বজায় রাখিবার দায় হইতে আমলাতন্ত্র ও পুলিশের কর্তারা অব্যাহতি পাইবেন না। পাড়ুই মামলায় কলিকাতা হাইকোর্ট রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশককে তলব করিয়াছিল। তিনি আদালতে সরকারের প্রতিনিধিরূপেই উপস্থিত ছিলেন বটে, কিন্তু শুধু সেটুকুই নহে। তাহা ব্যক্তি জিএমপি রেড্ডিরও উপস্থিতি। সেই ব্যক্তি, দেশের সংবিধান যাঁহাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব দিয়াছে। তিনি যখন আদালতে দাঁড়াইয়া অনুব্রত মণ্ডলকে নির্দোষ ঘোষণা করিতেছিলেন, অথবা কলিকাতার নগরপাল যখন যাদবপুর কাণ্ডে নিরস্ত্র পুলিশের উপর সশস্ত্র বহিরাগতদের চড়াও হওয়ার আষাঢ়ে গল্প ফাঁদিতেছিলেন, তখন তাঁহারা এই সংবিধানের অবমাননা করিয়াছেন। তাঁহারা নিজেদের সত্তার অবমাননা করিয়াছেন।
যাহা করিয়াছেন, উপরমহলের নির্দেশেই— এমন কথা বলিয়া নৈতিকতার বিচার পার হইবার উপায় তাঁহাদের নাই। ক্ষেত্রবিশেষে উপরমহলের আদেশ অমান্য করাই যে নৈতিক কর্তব্য, এই কথাটি বিভিন্ন সময়ে উচ্চারিত হইয়াছে। যথা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে নাত্সি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় প্রসিদ্ধ নুরেমবার্গ মামলায়। সেই মামলার সূত্রে সঙ্কলিত ‘নুরেমবার্গ নীতি’র চতুর্থ অনুচ্ছেদ স্পষ্ট বলিতেছে, এমন পরিস্থিতি উপস্থিত হইতেই পারে যেখানে চাকুরির সংকীর্ণ কর্তব্যের সহিত বৃহত্তর নৈতিকতার বিরোধ প্রত্যক্ষ। তখনও যদি কেহ নৈতিকতাকে অগ্রাধিকার না দেন, উপরমহলের অন্যায় আদেশ অমান্য করিবার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যদি তাহা না করেন, তবে তিনি অপরাধী। আদেশ অমান্য করিবার মধ্যে কর্তব্যে অবহেলা নাই, বরং বৃহত্তর কর্তব্যের প্রতি প্রশ্নাতীত দায়বদ্ধতা রহিয়াছে। সেই কর্তব্য নৈতিকতার নিকট, নিজস্ব ন্যায়বোধের নিকট। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আমলাতন্ত্র বা পুলিশ মন্ত্রিসভার নির্দেশ মানিয়া চলিবে, ইহাই প্রত্যাশিত। কিন্তু, সরকার এই রাজ্যে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখিতে পারে নাই। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রের পক্ষে যাহা শোচনীয়, এখন তাহাই গণতন্ত্রকে রক্ষা করিতে পারে। পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকদের বিবেকের কণ্ঠ শুনিলে হয়তো পশ্চিমবঙ্গ বাঁচিবে।


মমতার নিজের পুলিশে আস্থা নেই, পাশে চান দিল্লিকেই

No comments:

Post a Comment