Monday, August 25, 2014

মমতার দুনীতির ফলে নষ্ট করতে হচ্ছে আলু, বঞ্চিত জনগণ


আলুর গতি ধাপার মাঠ, মন্ত্রী বলছেন জানা নেই

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা, ২৫ অগস্ট, ২০১৪, ০৩:২৪:২২

আলাদা করা হচ্ছে নষ্ট হয়ে যাওয়া আলু। রবিবার মিলনমেলায়। 

যাওয়ার কথা হেঁশেলে। তার বদলে আলুর অন্তিম যাত্রা ধাপার মাঠেই!
কারণ, জবরদস্তিতে লাভ হয়নি। কাঠখড় পুড়িয়ে ১৪ টাকা কিলোগ্রাম দরে জ্যোতি আলু বিক্রির চেষ্টাও ফলপ্রসূ হয়নি। অগত্যা মিলনমেলায় ডাঁই করা আলু যাচ্ছে ধাপায়। তবে কৃষি বিপণন মন্ত্রী নাকি তা জানেনই না! তিনি বলছেন, “খোঁজ নিচ্ছি।”
ভিন্ রাজ্যে রফতানির আলুর লরি আটকে জোরজবরদস্তি করে আলুর জোগান বাড়াতে গিয়ে দু’সপ্তাহ আগে মিলনমেলায় আলুর গুদাম খুলেছিল রাজ্য সরকার। চাহিদা ও জোগানের স্বাভাবিক বাজার-নীতি গায়ের জোরে অস্বীকার করার চেষ্টা সফল হয়নি। সরকারের বেঁধে দেওয়া ১৪ টাকায় নয়, বাজারে ২২ টাকা কেজি দরেই বিকোচ্ছে জ্যোতি আলু। আর মিলনমেলায় ডাঁই করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ আলু গিয়েছে পচে! ৯ অগস্ট সেখানে ৩০ হাজার কুইন্টাল আলু আসে। পক্ষকালের মধ্যে তার ১০% অর্থাৎ তিন হাজার কুইন্টাল আলু পচে গিয়েছে। পচা আলু পুরসভার গাড়ি বোঝাই করে ফেলা হচ্ছে ধাপায়।
মিলনমেলার দুই, তিন ও চার নম্বর হ্যাঙারে ডাঁই করা ছিল ৫৮ হাজার বস্তা। প্রায় ৩০ হাজার কুইন্টাল আলু। রবিবার দেখা যায়, দুই ও চার নম্বর হ্যাঙার খালি। তিন নম্বরে আলু বাছাই চলছে। এসি চালু। পচা আলুর দুর্গন্ধে টেকা দায়। তা সরাতে কয়েকটি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। একটি গাড়ির চালক প্রদীপ মণ্ডল বললেন, “ধাপায় পচা আলু ফেলতে এক-এক বারে ৩০ বস্তা গাড়িতে তুলছি।”
মিলনমেলার হ্যাঙারে রাখা আলুর ধাপা-যাত্রার কথা তিনি জানেন না বলেই দাবি করছেন কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়। তিনি বলেন, “কলকাতা পুরসভা বিষয়টা দেখছে। ওদের সঙ্গে কথা বলে জানতে হবে।” কী বলছে পুরসভা? “বিষয়টি পুর বাজার বিভাগ দেখছে,” বলে দিলেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। তবে সরকারি নির্দেশেই যে মিলনমেলায় আলুর রক্ষণাবেক্ষণ চলছে, তা বুঝিয়ে দিয়ে মেয়র-পারিষদ (বাজার) তারক সিংহ বলেন, “সরকার আমাদের যেমন নির্দেশ দিচ্ছে, সে-ভাবে কাজ হচ্ছে।”
পুরসভার বাজার বিভাগ একটি অফিস খুলেছে মিলনমেলায়। ওই অফিসের ভারপ্রাপ্ত এক কর্মী বলেন, “এ ভাবে রাখলে সব জায়গাতেই আলু পচবে। রবিবার পচে যাওয়া ১১০ বস্তা আলু ফেলা হয়েছে। আমাদের প্রাথমিক হিসেব বলছে, ৮-১০% আলু নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”
ধাপায় আলু ফেলার জন্য ছাড়পত্র সহজে মিলছে না। কারণ, পুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কর্মীরা কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি ছাড়া ভিতরে যেতে দিচ্ছেন না। ধাপার কিছু সাফাইকর্মী জানান, পচা আলু কয়েক দিন ধরেই ফেলা হচ্ছে ওখানে। পচা আলুর বস্তার উপরেই অন্য জায়গা থেকে সংগৃহীত জঞ্জাল চাপা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সরকার ফরমান দিয়েছিল, ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানো যাবে না। অন্য রাজ্যে পাঠানোর পথে আলুর লরি ধরা শুরু হয় ২৮ জুলাই। আটক করা সেই আলুই নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ১৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার জন্য আনা হয়েছিল মিলনমেলায়। কিন্তু আলু ধরার পড়ে মিলনমেলায় আনতে সময় লেগেছে আনেকটাই। তার মধ্যেই গরমে প্রচুর আলু নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ক্রেতারা তা নিতে চাননি। ৮-৯ টাকা দরে বিক্রির চেষ্টা করেও লাভ হয়নি।
ব্যবসায়ীদের একাংশের বক্তব্য, শুধু কলকাতায় আলু ডাঁই করে ফেলে না-রেখে সরকার যদি আশপাশের এলাকায় তা বিক্রির চেষ্টা করত, কিছুটা লাভ হতে পারত। অন্তত এত আলুর ধাপা-প্রাপ্তি ঠেকানো যেত।

No comments:

Post a Comment