Wednesday, November 26, 2014

মুখরক্ষার পথ খুঁজল মুখ লুকনো পুলিশ

দল-দাপটে তলানিতে বল, ফাইলও তাই ঢাল পুলিশের

নিজস্ব সংবাদদাতা (সৌজন্য - আনন্দবাজার পত্রিকা)

১৬ নভেম্বর, ২০১৪


1
ঘটনাচক্রে সে দিন কিছুটা আগেই বাড়ি ফিরেছিলেন উত্তর কলকাতার একটি থানার ওসি। খবরের চ্যানেল খুলে রাতে সপরিবার খেতে বসে কয়েক মুহূর্ত বাদেই কার্যত ‘হে ধরণী দ্বিধা হও’-দশা তাঁর।
থানায় প্রাণভয়ে উর্দিধারীর টেবিলের তলায় মুখ লুকোনোর দৃশ্য সহ্য করতে না-পেরে তড়িঘড়ি চ্যানেল পাল্টে দিয়েছেন ওই প্রবীণ পুলিশ অফিসার। কিন্তু তার থেকেও বেশি আহত হয়েছেন ঘটনার ২৪ ঘণ্টা বাদেও লালবাজারের শীর্ষস্তর থেকে কোনও কড়া পদক্ষেপ হয়নি বলে। শনিবার দুপুরে তাঁর খেদোক্তি, “ছেলেমেয়েকে বলেছি, আর যা-ই করিস, পুলিশের চাকরি তোদের করতে দেব না।”
এ দিন সন্ধের ট্রেনে বাড়ি ফেরার পথে আর এক পুলিশকর্মীর সংশয়, “পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে রাস্তায় অন্যায় দেখলেও প্রতিবাদের সাহস পাব না। কোনও রাজনৈতিক নেতাকে ধমক দিয়ে ফেললে, নাকখত দিয়েও তো পার পাব না!”
আলিপুর থানায় ঢুকে পুলিশের উপরে হামলা, টেবিলের তলায় ঢুকে গাবদা ফাইল দিয়ে মুখ আড়াল করে পুলিশের প্রাণ বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টার দৃশ্য এখন রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ার মুখরোচক খাদ্য। একটি ব্যঙ্গচিত্রে উর্দিধারী স্বামী বাড়ি থেকে বেরোনোর মুহূর্তে ঘরণীর প্রার্থনা, ‘দুগ্গা দুগ্গা, মানুষটা যেন আজ মারধর না-খেয়ে ফেরে!’ অবসরে কিছুটা কবিতার চর্চা করেন কলকাতা পুলিশের এক ইনস্পেক্টর। তাঁর মনে পড়ছে বহুচর্চিত কয়েকটি পঙ্ক্তি। “এক সময়ে শুনতাম, ‘পুলিশ, কবির সামনে টুপিটা তুই খুলিস।’ ক্রমশ দেখছি, কবি নয় নেতাদের জুতোয় মাথা ঠুকতেই প্রায় টেবিলের তলায় ঢুকে পড়ছি!” (আরও.....)



আলিপুর থানা

মুখরক্ষার পথ খুঁজল মুখ লুকনো পুলিশ

নিজস্ব সংবাদদাতা  (সৌজন্য - আনন্দবাজার পত্রিকা)

১৬ নভেম্বর, ২০১৪


2

থানার চেয়ারে সেই কার্তিক কর। 

শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে তিনি এখন পরিচিত মুখ। পুলিশমহলে তো বটেই, হাটে-বাজারে আমজনতার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুও বটে। তিনি কার্তিক কর। আলিপুর থানার কনস্টেবল। শুক্রবার বিধান রায় কলোনির ক্ষিপ্ত তৃণমূল সমর্থকদের হামলায় যিনি থানার মধ্যেই টেবিলের আড়ালে লুকিয়ে প্রাণে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন। আলিপুর থানার পুলিশকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, “শুক্রবার ক্ষিপ্ত জনতা যখন থানার সামনে ভিড় জমিয়েছিল, তখন গোটা পরিস্থিতি জানানো হয়েছিল লালবাজারের কন্ট্রোল রুমে। কিন্তু সেখান থেকে কোনও নির্দেশ না আসায় হামলাকারীদের প্রতিহত করা যায়নি। উল্টে নিজেদেরই প্রাণে বাঁচার কৌশল খুঁজতে হয়েছে।”
সেই ঘটনার রেশ কাটিয়ে শনিবার সাতসকালেই আলিপুর থানায় হাজির হয়েছিলেন কার্তিকবাবু। কী পরিস্থিতিতে তাঁকে বাধ্য হয়ে টেবিলের পিছনে আশ্রয় নিতে হয়েছিল, ওই ঘটনার পর থেকে দফায় দফায় ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে ওই পুলিশকর্মীকে। তাঁর নিজের মুখে সে কথা শুনে এবং টিভিতে-কাগজে ওই ছবি দেখার পরে ছোট-মেজো-বড় সব সহকর্মীই কার্তিকবাবুর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা বলছেন, “কার্তিকবাবু আদতে খুবই সাদামাটা, নিরীহ মানুষ। মুখে হাসি লেগেই থাকে। এমন মানুষের ও রকম উত্তেজিত জনতার হামলার সামনে পড়ে হতবাক হওয়ারই কথা।” আলিপুর থানার একাধিক পুলিশকর্মী জানান, ওই ‘ঝড়ের’ মুখে পড়লে তাঁরাও হয়তো এমনই করতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশকর্তাদের একাংশ বলছেন, শুধু আলিপুর থানার পুলিশই নয়, কার্যত একই অবস্থা গোটা রাজ্যের পুলিশের। কোথাও শাসকদলের মারামারি ঠেকাতে গিয়ে মাথায় ঢিল খাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা, কোথাও বা পেটে তির নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে সমাজরক্ষকদের। ওই পুলিশকর্তাদের মতে, যে ভাবে বাহিনীকে ঠুঁটো করে রাখা হচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে পুলিশ-লাইন কিংবা থানা আক্রমণের ঘটনা বাড়বে বৈ কমবে না। এবং পুলিশকে তা দেখেও হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে। কারণ, ‘অ্যাকশন’ নিতে গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যে অনুমতির দরকার হয়, প্রয়োজনের সময়ে তা মিলছে না।(আরও.....)

মমতার নিজের পুলিশে আস্থা নেই, পাশে চান দিল্লিকেই

No comments:

Post a Comment