সম্পাদকীয় ১ (সৌজন্য - আনন্দবাজার পত্রিকা)
যুক্তরাষ্ট্রীয় সুবিধাবাদ
৯ অক্টোবর, ২০১৪,
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রীয় আদর্শের ধ্বজা তুলিয়া ধরিতে সতত তত্পর, কিন্তু তাঁহার আচরণ সেই আদর্শের ক্ষতি সাধন করিতেছে, উপরন্তু দেশ এবং রাজ্যের বিপদ বাড়াইতেছে। বর্ধমানের বিস্ফোরণ এবং আনুষঙ্গিক ঘটনাবলির তদন্তের ভার জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) হাতে অবিলম্বে তুলিয়া দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে অনুরোধ জানানো তাঁহার প্রাথমিক কর্তব্য ছিল, তাহার পরিবর্তে তাঁহার দল সেই জরুরি হস্তান্তরে বাধা দেওয়ার জন্য ক্রমাগত সওয়াল করিতেছে, এমনকী বর্ধমানে মিছিল বাহির করিতেছে, কে বলিতে পারে অচিরে হয়তো আইনমন্ত্রী তাঁহার নেত্রীর আদেশে দিল্লিতে সপারিষদ ধর্নায় বসিবেন। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, রাজ্যের ঘটনা বিষয়ে তদন্তের অধিকার রাজ্যের, এনআইএ কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা, তাহার হস্তক্ষেপ চলিবে না, যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদা লাঞ্ছিত হইবে।
ইহা সম্পূর্ণ কুযুক্তি। বর্ধমানের ঘটনার কার্যকারণসূত্র সম্পর্কে ইতিমধ্যেই যে সব সংকেত মিলিয়াছে তাহাতে ইহাকে ‘রাজ্যের ব্যাপার’ বলিয়া ধরিয়া লইবার কোনও উপায় নাই। ষড়যন্ত্রের জাল রাজ্যের সীমানা, এমনকী দেশের সীমান্ত অতিক্রম করিয়া সুদূরবিস্তৃত, এমন অনুমানই প্রবল। সেই ষড়যন্ত্রের ভয়াবহ চরিত্রও স্পষ্ট। এমন একটি বড় আকারের সন্ত্রাসী চক্রান্তের তদন্ত করিবার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো বা দক্ষতা রাজ্য প্রশাসনের নাগালে থাকিবার কথা নহে, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে তদন্ত প্রক্রিয়ায় সমন্বয় সাধনের কাজও তাহার পক্ষে সাধ্য নহে। এই কারণেই এনআইএ-র সৃষ্টি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁহার দল এমন একটি ভয়ানক বিপদের মোকাবিলাতেও সংকীর্ণ ‘মর্যাদার লড়াই’ লড়িতে ব্যস্ত, ইহা তাঁহাদের নিকটেও প্রত্যাশিত ছিল না। এই ক্ষুদ্র দলতন্ত্রসর্বস্ব মানসিকতার স্পষ্ট প্রমাণ ইহাই যে, পাঁচ বছর আগে বেদিক ভিলেজে হাঙ্গামার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বিরোধী নেত্রীর আসনে বসিয়া তদন্তের ভার সদ্যোগঠিত এনআইএ-র হাতে অর্পণের দাবিতে রাজ্য মাথায় করিয়াছিলেন। নিতান্তই স্থানীয় ‘সিন্ডিকেট’ ঘটিত সেই হাঙ্গামা কি বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর মতে আল-কায়দা অপেক্ষাও বিপজ্জনক ছিল? এমন উত্কট দ্বিচারিতা দেখিয়া সন্দেহ হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক যে, যুক্তরাষ্ট্রীয় আদর্শ আসলে সুবিধাবাদের হাতিয়ারমাত্র। নরেন্দ্র মোদীর কর্তব্য, কালক্ষেপ না করিয়া তদন্তের ভার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে তুলিয়া দেওয়া। সন্ত্রাস লইয়া খেলা, নৈব নৈব চ।
যদি-বা ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় অধিকার’-এর দাবি তুলিবার কোনও যুক্তিগত ভিত্তি থাকিত, রাজ্য সরকার নিজেই তাহা নষ্ট করিয়াছে। ‘আমরাই তদন্ত করিব’ বলিতে চাহিলে যথেষ্ট তত্পর ভাবে তদন্ত করিতে হয়। একের পর এক ঘটনায় বর্তমান সরকার সেই তত্পরতার বিপরীত মেরুতে অবস্থান করিয়াছে। সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে রাজ্যের তদন্তকারীদের কীর্তি ইতিমধ্যে সর্বজনবিদিত, এখন ক্রমশ শোনা যাইতেছে, পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাসী চক্রান্ত সম্পর্কে সতর্কবার্তা শুনিয়াও রাজ্য প্রশাসন এই বিষয়ে তদন্তে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় নাই। এই অভিযোগ সংকেত দেয়, রাজ্য প্রশাসনের পরিচালকরা হয় অপদার্থ অথবা নির্বোধ। এমনকী বিস্ফোরণ ঘটিয়া যাইবার পরে উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরকগুলিকে যে ভাবে ফাটাইয়া দেওয়া হইয়াছে, তাহাও অত্যন্ত বিস্ময়কর। অক্ষমতাবশতই হউক, অন্য কোনও রহস্যময় কারণেই হউক, যাঁহারা গুরুতর বিষয়ের তদন্তে এমন সমস্ত অকল্পনীয় ত্রুটির শিকার, তাঁহারাই তো ‘রাজ্যের হাতে অধিক ক্ষমতা’র দাবি উড়াইয়া দেওয়ার হাতিয়ার কেন্দ্রের হাতে তুলিয়া দিতেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বিভিন্ন বিষয়ে অনেক কিছু জানেন বলিয়া দাবি করেন। অধিকার চাহিলে কর্তব্য পালন করিতে হয়, এই প্রাথমিক পাঠটুকুও তাঁহার হয় নাই?
Also See: Mamta's illegal acts - Must read editorials from a reputed newspaper
Also See: Mamta's illegal acts - Must read editorials from a reputed newspaper
No comments:
Post a Comment