Friday, October 24, 2014

Corruption at West Bengal Home Guard employment

হোমগার্ড নিয়োগ

পেনসিলের আঁচড়েই রহস্যের আঁচ

দেবজিৎ ভট্টাচার্য (সৌজন্য - আনন্দবাজার পত্রিকা)

২৪ অক্টোবর, ২০১৪


পেনসিলেরই আঁচড়েই মালুম হচ্ছে অনিয়মের গন্ধ!
মুর্শিদাবাদে হোমগার্ড নিয়োগ ঘিরে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় শিল্প-সচিব চঞ্চলমল বাচোয়াতকে মাথায় রেখে রাজ্য সরকার দু’সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়েছে। কিন্তু তারই মধ্যে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক নবান্নে যে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন, তাতেই স্পষ্ট দুর্নীতির ইঙ্গিত। ডিএমের রিপোর্ট বলছে, নিয়োগ পরীক্ষার ‘স্কোর শিট’-এ পেনের বদলে পেনসিলে নম্বর লেখাকে কেন্দ্র করেই যাবতীয় বিতর্কের সূত্রপাত।
কেলেঙ্কারির জেরে রাজ্য পুলিশের ডিজি (হোমগার্ড) রবীন্দ্রজিৎ সিংহ নালোয়া এবং মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরকে ইতিমধ্যে কম্পালসারি ওয়েটিং (পদ নেই, কাজও নেই)-এ পাঠানো হয়েছে। পেনসিল-রহস্য ফাঁস হল কী ভাবে?
মুর্শিদাবাদ প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলায় যে কমিটির মাধ্যমে হোমগার্ড নিয়োগ হয়, পদাধিকারবলে ডিজি (হোমগার্ড) তার চেয়ারম্যান, এসপি হলেন মেম্বার কনভেনর। সদস্য হিসেবে থাকেন জেলাশাসকের এক বা একাধিক প্রতিনিধি। এবং মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও তাঁর রিপোর্টের সঙ্গে কমিটির এমন একাধিক সদস্যের যে লিখিত বয়ান জুড়ে দিয়েছেন, তাতেই মিলেছে দুর্নীতির হদিস। ওই সদস্যেরা ডিএম’কে জানিয়েছেন, পরীক্ষা চলাকালীন ডিজি (হোমগার্ড) তাঁদের বলেন স্কোর শিটে কলমের বদলে পেনসিল দিয়ে নম্বর লিখতে। সই করতে বলা হয় কলম দিয়ে। সদস্যদের দাবি, তাঁরা এই অনিয়মের প্রতিবাদ করলে ডিজি বলেছিলেন, তিনি নিজে তো বটেই, এসপি-ও একই ভাবে স্কোর শিট তৈরি করবেন। খোদ চেয়ারম্যানের মুখে এ কথা শুনে তাঁরা ‘সরল বিশ্বাসে’ নির্দেশ পালন করেন বলে কমিটির একাধিক সদস্য ডিএম’কে জানিয়েছেন।
মুর্শিদাবাদের চার ডব্লিউবিসিএস অফিসারকে নিজের প্রতিনিধি হিসেবে হোমগার্ড নিয়োগ কমিটিতে রেখেছিলেন জেলাশাসক। তাঁদের এক জন, কল্লোল ভট্টাচার্য গত ২৭ নভেম্বর জেলা প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, তিনি সব মিলিয়ে ১৩ দিন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হাজির ছিলেন, এবং ডিজি-র নির্দেশ মেনে স্কোর শিটে আগাগোড়া পেনসিলেই নম্বর লিখে কলমে সই করেছেন।
এখানে প্রশ্ন উঠেছে, অনিয়মের নির্দেশ কেন মান্য করলেন তাঁরা? কেনই ডিজি’র অন্যায় অনুরোধ সম্পর্কে জেলাশাসকের কাছে প্রতিকার চাইলেন না? প্রশাসনের একাংশের যুক্তি, পেনসিলে নম্বর লেখা কখনওই উচিত নয়, কাম্যও নয়। কারণ, পেনসিলের লেখা মুছে বদল করা সহজ। পেনসিলে নম্বর লিখে পেনে সই করার পরে যদি দেখা যায় শিটের নম্বর বদলে গিয়েছে, তখন সত্য প্রমাণ করা কঠিন হবে। এ হেন অনিয়ম নিয়ে জেলাশাসকও কেন তাঁর প্রতিনিধিদের কাছে ব্যাখ্যা চাইলেন না, সে প্রশ্নও উঠেছে প্রশাসনের অন্দরে।
এখানেই শেষ নয়। স্কোর শিট সংগ্রহের জন্য ডিজি’র তরফে ‘অস্বাভাবিক’ তাড়াহুড়োর প্রসঙ্গও রিপোর্টে রয়েছে। কী রকম?
ডিএম’কে কল্লোলবাবু জানিয়েছেন, গত ১৩ অগস্ট ডিজি তাঁকে ফোন করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জেলার পুলিশ গেস্ট হাউসে চলে আসতে বলেন। কল্লোলবাবু জেলা পরিষদের কাজে বহরমপুরের বাইরে ছিলেন, সঙ্গে গাড়িও ছিল না। তা শুনে ডিজি নিজের গাড়ি পাঠিয়ে তাঁকে গেস্ট হাউসে তুলে এনে বলেন, সম্মিলিত স্কোর শিটে তখনই সই করে দিতে। কল্লোলবাবুর বক্তব্য, তিনি সব স্কোর শিটে সইসাবুদ করে দিলেও ডিজি’র তাড়াহুড়োর কারণে সব নথি খতিয়ে দেখতে পারেননি। জেলাশাসকের রিপোর্টও বলছে,  চূড়ান্ত স্কোর শিট তৈরির সময়   কমিটির চেয়ারম্যান, মেম্বার কনভেনর ও সব সদস্যের একযোগে সই করার কথা। কিন্তু মুর্শিদাবাদে সে নিয়ম মানা হয়নি।
ফলে ডিএমের প্রতিনিধিরা নিজের দেওয়া নম্বর দ্বিতীয় বার মিলিয়ে দেখার সুযোগ পাননি বলে রিপোর্টের দাবি। পাশাপাশি জেলা প্রশাসন-সূত্রের খবর: ডিএমের রিপোর্ট নবান্নে পৌঁছানোর আগে মুর্শিদাবাদের এসপি হুমায়ুন কবীরও ডিজি (হোমগার্ড)-কে একটি চিঠি লিখেছিলেন, যেখানে নালোয়ার বিরুদ্ধে কার্যত নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগই তুলেছেন তিনি। কী রকম?
হুমায়ুন বলেছেন, কৃতকার্যদের তালিকা চূড়ান্ত করার জন্য তাঁকে গত১৩ অগস্ট পুলিশ গেস্ট হাউসে ডেকে পাঠিয়েও ডিজি অন্যত্র চলে যান। বলে যান, পরের দিন এসে কাজ শেষ করবেন। কিন্তু পর দিনও দিনও ডিজি বহরমপুরে পা দেননি। উল্টে ১৬ অগস্ট ফোন করে বলেন, এসপি’র স্কোর শিট যেন কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এসপি’র দাবি, তার প্রস্তুতি চলাকালীন জেলার সিনিয়র অ্যাডজুট্যান্ট (হোমগার্ড)-এর কাছে তিনি জানতে পারেন, ১৩ অগস্ট অফিসারদের পেনসিলে লেখা স্কোর শিটের সঙ্গে বেশ কিছু ফাঁকা শিট-ও কলকাতায় নিয়ে গিয়েছেন নালোয়া! এসপি লিখেছেন, এটা জানার পরে তিনি আর কোনও নথি ডিজি’কে পাঠাননি। ৪ সেপ্টেম্বর ডিজি সস্ত্রীক পুলিশ অতিথিশালায় এসে ওঠেন। খবর পেয়ে তিনি সেখানে যান। ডিজি তাঁকে বলেন কৃতকার্যদের চূড়ান্ত তালিকায় সই করে দিতে। কিন্তু তিনি করেননি। কেন?
চিঠিতে হুমায়ুন ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ডিজি’র ওই তালিকার সঙ্গে পরীক্ষকদের বানানো তালিকার বিস্তর অমিল ছিল। তাই তিনি সই করতে চাননি। এসপি’র অভিযোগ: এতে ডিজি ও তাঁর স্ত্রী এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেন যে, তিনি গেস্ট হাউস ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হন। ডিজি তখন পুলিশ অফিসে গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে কান্ননকে দিয়ে তালিকায় সই করান বলে চিঠিতে লিখেছেন হুমায়ুন।
রিপোর্টে বা চিঠিতে যা-ই লিখে থাকুন, রত্নাকর ও হুমায়ুন এ প্রসঙ্গে মুখে কিছু বলতে চাননি। নালোয়াও মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ইতিমধ্যে পুরো ব্যাপারটায় জড়িয়ে গিয়েছে শাসকদলের নামও। জেলা-সূত্রের খবর, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ হোমগার্ডের চাকরির জন্য বেশ কিছু কর্মী-সমর্থকের নাম সুপারিশ করেছিলেন মুর্শিদাবাদ প্রশাসনের কাছে। এঁদের কারও কারও নাম প্রাথমিক তালিকায় উঠেছিল। ‘বঞ্চিত’ প্রার্থীরা তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের দ্বারস্থ হন। অনেকে অভিযোগ করেন, চাকরি পাওয়ার জন্য তাঁরা জমিজমাও বন্ধক রেখেছিলেন। তার পরেও চাকরি না-হওয়ায় তাঁরা অকূলপাথারে।
বস্তুত মুর্শিদাবাদের প্রায় সব থানা এলাকা থেকেই এমন অভিযোগ তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে পৌঁছেছে বলে সূত্রের দাবি। সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ মান্নান হোসেন বলেন, “আমি তৃণমূলে আসার আগে ঘটনাটি ঘটেছে।
দলের বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক আমার কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁদের কথা শুনে আমার মনে হয়েছে, অভিযোগের সারবত্তা আছে। আমি রাজ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে পরীক্ষা বাতিলের আর্জি জানিয়েছি।” কিন্তু তৃণমূলের বেশ কিছু নেতার দিকেও তো আঙুল উঠেছে?
মান্নানের জবাব, “ওঁদের অনেকের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। তবে ওঁদের মধ্যে যে আমাদের লোকজন একেবারে নেই, তা বলছি না। দলের রাজ্য নেতৃত্বকে সব জানানো হয়েছে। তৃণমূলে দুর্নীতির কোনও স্থান নেই।”

****************


CM relief fund to be filled by Tax payers' money?

No comments:

Post a Comment