ধৃতরা জামাতের লোক, বলল এনআইএ
নিজস্ব প্রতিবেদন
২৫ অক্টোবর, ২০১৪,
শাকিলের বোরখা কারখানায় তদন্তে এনআইএ-র ডিজি শরদ কুমার। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
বোমা বানাতে গিয়ে একটি বিস্ফোরণে দু’জন নিহত এবং এক জন আহত— এক কথায় বলতে গেলে খাগড়াগড়ের ঘটনার নির্যাস এটুকুই। কিন্তু শুক্রবার সেই খাগড়াগড়েই সটান চলে এলেন খাস এনআইএ-র ডিজি শরদ কুমার। কারণ আর কিছুই নয়, এনআইএ সূত্রেই বলা হচ্ছে, ডিজি নেহাত একটি বিস্ফোরণস্থল দেখতে আসেননি। এসেছেন এমন জায়গায়, যেখান থেকে ভিন দেশেও নাশকতা ঘটানোর প্রস্তুতি চলছিল।
শুক্রবার, ডিজি-র সফরের দিনই সন্ধেবেলা এনআইএ তার প্রেস বিবৃতিতে এই প্রথম খোলাখুলি জানিয়ে দিল— প্রাথমিক তদন্তে প্রকাশ, খাগড়াগড়ে অভিযুক্ত এবং তাদের সহকারীরা সকলেই বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাত উল মুজাহিদিনের (জেএমবি) সদস্য। এর মধ্যে রাজিয়া বিবি, আলিমা বিবি, বদর-এ আলম ওরফে হাসেম মোল্লা এবং আব্দুল হাকিম ইতিমধ্যেই ধরা পড়েছে। তারা এখানে বসে বাংলাদেশে পাচার করার জন্য আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বানানোর কাজে যুক্ত ছিল। এনআইএ জানিয়েছে, তারা জেএমবি-র কাজকর্মের হদিস পেতে তদন্তে সম্ভাব্য সব ক’টি দিকই খতিয়ে দেখবে। জেএমবি-র পিছনে আর্থিক মদতের উৎসও চিহ্নিত করা হবে।
খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ হয় ২ অক্টোবর। ১১ অক্টোবর এনআইএ তদন্তে নামে। এনআইএ সূত্রের খবর, খাগড়াগড়ে হাসান চৌধুরীর বাড়ির দোতলায় সন্ত্রাসবাদীরা বিস্ফোরক, আইইডি ও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র তৈরির পুরোদস্তুর একটি গবেষণাগার গড়ে তুলেছিল। এই গবেষণাগারই এ দিন স্বচক্ষে দেখতে এসেছিলেন ডিজি। খাগড়াগড়ের ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে বাদশাহি রোডের একটি বাড়িতে গত ১৬ অক্টোবর এনএসজি (ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড) তল্লাশি চালিয়ে ৩৫টি হ্যান্ড গ্রেনেড ও চারটি সকেট বোমা উদ্ধার করেছিল। খাগড়াগড় থেকে ডিজি এ দিন যান বাদশাহি রোডের বাড়িতেও। খাগড়াগড়ের মতোই আরও একটি গবেষণাগারের হদিস মিলেছিল মুশির্দাবাদের বেলডাঙাতেও। যে কারণে বর্ধমান থেকে ডিজি হেলিকপ্টারে চলে যান বহরমপুরে এবং সেখান থেকে গাড়িতে পৌঁছন বেলডাঙায়। এনআইএ-র এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, “আমাদের ডিজি তিন রকম তিনটি জায়গায় গেলেন। একটি, বিস্ফোরক ও আইইডি-র গবেষণাগার। দ্বিতীয়টি, আইইডি মজুত রাখার জায়গা। তৃতীয়টি খাগড়াগড়ের আগে যেখানে গবেষণাগার ছিল, সেই জায়গা।”
শুক্রবার সকালে বর্ধমানের সাই
কমপ্লেক্সে পৌঁছলেন এনআইএ-র ডিজি শরদ কুমার। নিজস্ব চিত্র। |
তদন্ত সেরে কলকাতা ফিরছেন এনআইএ-র
ডিজি শরদ কুমার। বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের ছবি। |
এ দিন বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ বিএসএফের হেলিকপ্টারে বর্ধমানের নবাবহাটে স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া (সাই)-এর মাঠে নামেন ডিজি। সঙ্গে ছিলেন এনআইএ-র আইজি সঞ্জীব সিংহ এবং খাগড়াগড় কাণ্ডের তদন্তকারী অফিসার বিক্রম খালাটে। নবাবহাট থেকে সোজা তাঁরা চলে আসেন খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থলে। দোতলা বাড়িটি খুঁটিয়ে দেখেন এনআইএ-র সর্বোচ্চ কর্তা। ওই বাড়ির মধ্যেই এখনও বেশ কিছু জিনিস রাখা হয়েছে। বাড়িতে ঢোকার মুখে ডিজিকে তৃণমূলের অস্থায়ী পার্টি অফিসটিও দেখান অন্য অফিসারেরা। ডিজি-সহ এনআইএ-র কর্তারা বাড়ির ছাদেও ওঠেন। মিনিট পনেরো ওই বাড়িতে কাটিয়ে ডিজি জানান, তিনি বাদশাহি রোডে রেজাউল করিমের বাড়িটি দেখতে চান। নইলে বাদশাহি রোডে যাওয়া হবে বলে আগে থেকে জেলা পুলিশও জানত না।
এর আগে ১১ অক্টোবর এনআইএ-র তদন্তকারী দল যে দিন বর্ধমানে তদন্তে গিয়েছিল, সে দিন জেলা পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই এলাকা পরিদর্শন করেছিল তারা। এ দিন কিন্তু এনআইএ-র দলের সঙ্গে বর্ধমান থানা আইসি আব্দুল গফফর ছাড়া জেলা পুলিশ বা সিআইডি-র আর কেউ ছিলেন না। হেলিপ্যাডে ডিজিকে স্বাগত এবং বিদায় জানাতে অবশ্য পুলিশ সুপার এসএমএইচ মির্জা উপস্থিত ছিলেন। তা ছাড়া হেলিকপ্টার পাহারা এবং ডিজি-র নিরাপত্তার জন্য এ দিন বিএসএফের এক দল জওয়ানের বর্ধমানে আসার কথা ছিল। সেই মতো মালদহ থেকে এ দিন ভোরে জওয়ানরা রওনাও দিয়েছিলেন। কিন্তু সময়ে পৌঁছতে পারেনি। বীরভূম থেকেই তাঁরা ফিরে যান। ডিজি-র হেলিকপ্টার পাহারায় জেলা পুলিশই বহাল ছিল।
এ দিন খাগড়াগড়েও এলাকা কর্ডন করে কড়া পুলিশি ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। পুরো এলাকায় এনআইএ-র তদন্তকারী এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা ছাড়া তাই আর কাউকে দেখা যায়নি। ডিজি বেরিয়ে যাওয়ার পর খাগড়াগড়ের বাসিন্দারা বেরিয়ে এসে পুলিশি বাড়াবাড়ি এবং লাগাতার তদন্তের জেরে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে বলে ক্ষোভ উগরে দেন। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদেরও এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। বাদশাহি রোডে রেজাউলের বাড়িতে মিনিট কয়েক কাটিয়ে ডিজি ফিরে যান নবাবহাটের হেলিপ্যাডে। মুর্শিদাবাদের উদ্দেশে রওনা হন তাঁরা। বেলা ১২ টা ৫৫ মিনিটে বহরমপুর সার্কিট হাউস থেকে তাঁর কনভয় রওনা দেয় বেলডাঙার উদ্দেশে। দুপুর সওয়া ১টা নাগাদ তিনি পৌঁছন বেলডাঙায়। বড়ুয়া পাওয়ার হাউসপাড়ায় শাকিলের ভাড়া করা ওলিওল ইসলামের বাড়িতে প্রায় ১৫ মিনিট ছিলেন ডিজি। সেখান থেকে তিনি চলে যান ফারাজিপাড়ায় বোরখা তৈরির কারখানায়, ছিলেন মিনিট পাঁচেক। শিশু মাদ্রাসা বাজারে শাকিলের দোকান ‘বোরখা ঘরে’ ডিজি নামেননি। গাড়ি থেকেই দেখে নেন ডেরাটি।
দুপুর সওয়া ২ টো নাগাদ কনভয়ের মুখ ঘুরে যায় বহরমপুরের দিকে। ২টো ৪০ মিনিটে বহরমপুর সার্কিট হাউসে ফিরেই শরদ কুমার বৈঠকে বসেন বিএসএফ-এর ডিআইজি এবং মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপারের সঙ্গে। সূত্রের খবর, ডিআইজি জিতেন্দ্র কুমার রদলা এবং এসপি সি সুধাকরের কাছে সীমান্ত এলাকার অপরাধ নিয়ে খবরাখবর নেন ডিজি। অনুপ্রবেশ, জাল নোটের কারবার, জাল নথি দিয়ে পাসপোর্ট তৈরির চক্র নিয়ে তিনি বিশদ তথ্য চান। সেই সঙ্গে সীমান্তের কতটুকু অংশে কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে, কোথায় নেই, সে সব নিয়েও আলোচনা হয়। বিকেল ৩টে ৫ মিনিট নাগাদ তাঁর কপ্টার উড়ে যায় কলকাতার উদ্দেশে।
বিকেলে কলকাতায় ফিরে সল্টলেকের সিআরপি অতিথি নিবাসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শরদ কুমার বলেন, “তদন্ত পর্যালোচনা করার জন্য আমি কলকাতায় এসেছি। মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানে গিয়েছি। এই মামলায় যারা পলাতক, তাদের গ্রেফতার করার জন্য আমরা কিছু কৌশল বার করেছি।” পলাতকদের হদিস দিলে আর্থিক পুরস্কার ঘোষণার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করছে এনআইএ। শীঘ্রই এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য এনআইএ-র ওয়োবসাইটে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সঙ্গে তেলেঙ্গানার করিমনগরে গত ফেব্রুয়ারি মাসের একটি ব্যাঙ্ক ডাকাতির যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে এনআইএ। ওই ডাকাতির টাকার একাংশ খাগড়াগড়ের জঙ্গিদের কাছে পৌঁছেছিল বলে তদন্তকারীদের একাংশের ধারণা। কারণ ওই ডাকাতিতে জড়িতরা জেল পালানো সিমি সদস্য বলে সন্দেহ। তা ছাড়া খাগড়াগড়ে উদ্ধার টাকার বান্ডিলে করিমনগরের ব্যাঙ্কের ছাপ মিলেছে বলে খবর। এ দিন এনআইএ-র ডিজিকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বলেন, “আমি এ ব্যাপারে কিছু বলব না। কারণ, তাতে তদন্ত প্রভাবিত হবে।” সন্ধেয় সিআরপি-র অতিথিনিবাসে এনআইএ-র অফিসারদের সঙ্গে ফের আলোচনায় বসেন ডিজি। সূত্রের খবর, খাগড়াগড় তদন্তের গতিপ্রকৃতি ছাড়াও এ রাজ্যে এনআইএ-র স্থায়ী ঘাঁটি তৈরির ব্যাপারেও এ দিন আলোচনা হয়েছে।
আসছেন ডোভাল
এনআইএ-র ডিজির পরে রাজ্যে আসছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। আগামী সোমবার তাঁর আসার কথা। সূত্রের খবর, তৃণমূল সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরানের জামাত-যোগ এবং সারদার টাকা বাংলাদেশে যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে যে সব তথ্য ঢাকা দিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনা করতে চান ডোভাল। কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, পড়শি দেশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতেই আসছেন ডোভাল। তিনি খাগড়াগড় কাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতি জানতে বর্ধমানেও যেতে পারেন।
*****************
হাকিমকে কত দিনে হেফাজতে পাবেন, ধন্দে এনআইএ কর্তারা
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা, ২৫ অক্টোবর, ২০১৪,
বাঁ পায়ে একটি ক্ষত। সেখানে স্প্লিন্টার ঢুকেছিল। তিন সপ্তাহ কেটে গেল, শুকোনোর নাম নেই। আহত ব্যক্তি অবশ্য গোড়া থেকেই হাসপাতালে। প্রথম সাত দিন বর্ধমানে, তার পরে কলকাতায়। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের একমাত্র জীবিত প্রত্যক্ষদর্শী সেই আবদুল হাকিমকে শেষমেশ কবে নাগাদ হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে পারবে এনআইএ?
শুক্রবার জাতীয় তদন্ত সংস্থার খোদ শীর্ষ কর্তার উপস্থিতিতে আয়োজিত তাবড় অফিসারদের বৈঠকে ঘুরে-ফিরে উঠে এল সেই প্রশ্ন।
পশ্চিমবঙ্গে সফররত এনআইএ’র ডিজি শরদ কুমার এ দিন বিকেলে সল্টলেকে সিআরপি’র অতিথিনিবাসে বৈঠকে বসেছিলেন। এজেন্সির তদন্তকারীরা তাঁর সামনেই হাকিম-প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। বছর তেইশের যুবকটিকে ৯ অক্টোবর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে এনে এসএসকেএমে ভর্তি করা হয়েছে। এনআইএ-সূত্রের খবর, হাকিমের ক্ষতস্থানে আগামী সোমবার ফের স্কিন গ্রাফটিং (শরীরের অন্য জায়গার চামড়া কেটে লাগানো) হবে। সে ক্ষেত্রে আরও সপ্তাহখানেকের আগে তাকে হেফাজতে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই ডিজি-কে জানিয়েছেন অফিসারেরা।
এবং এত দিন ধরে হাকিমের হাসপাতালে থাকাটা তাঁদের কাছে যে খুব স্বাভাবিক ঠেকছে না, তেমন ইঙ্গিতও কোনও কোনও অফিসার ডিজি-কে দিয়েছেন বলে এজেন্সি-সূত্রে জানা গিয়েছে। এনআইএ’র বক্তব্য: হাকিমকে এসএসকেএমের কেবিনে কয়েক দফায় যেটুকু জেরা করা গিয়েছে, তাতে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। বীরভূমের মহম্মদবাজারের দেউচা গ্রামের বাসিন্দাটি নিজেকে জমিয়ত-উল-মুজাহিদিনের সদস্য হিসেবে দাবি করে জানিয়েছে, তিন বছর ধরে সে জঙ্গি কার্যকলাপে লিপ্ত। বর্ধমানের স্থানীয় কিছু তৃণমূল নেতার সঙ্গে খাগড়াগড়-কাণ্ডের কুশীলবদের নিয়মিত যোগাযোগের কথা সে স্বীকার করেছে। পাশাপাশি ভারত ও বাংলাদেশের নানা শহরে একযোগে ধারাবাহিক নাশকতার ছক সম্পর্কেও হাকিমের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
সন্ত্রাস-যজ্ঞের এ হেন চক্রীকে হাতে পাওয়া নিয়ে এনআইএ’র মনে প্রশ্ন জেগেছে কেন?
কারণ, গত কয়েক দিনের অভিজ্ঞতা। ১১ অক্টোবর এসএসকেএমে হাকিমের পা থেকে স্প্লিন্টার বার করা হয়। হাসপাতালের এক কর্তা ও হাকিমের স্বাস্থ্যে নিয়মিত নজরদার চিকিৎসকদের এক জন ১৫ তারিখে জানিয়েছিলেন, পর দিনই হাকিমকে ছেড়ে দেওয়া হবে। “এমন লোককে হাসপাতালে রাখাটা বেশ ঝুঁকির। রোগীদের তো বটেই, আমাদের পক্ষেও।”— মন্তব্য করেছিলেন তিনি। এ-ও বলেন, “আমরা ১৪ তারিখেই হাকিমকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এনআইএ বলেছে, প্রস্তুতির জন্য ওদের একটা দিন দরকার। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, ১৬ তারিখে ছাড়া হবে।” এসএসকেএমের কর্তাটি সে দিন জানিয়েছিলেন, স্প্লিন্টার বার করার পরে চার দিন বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। রোগীকে আর হাসপাতালে ভর্তি রাখার প্রয়োজন নেই। শুধু নিয়মিত ড্রেসিং দরকার।
কিন্তু রাতারাতি মত বদলে যায়।
১৬ তারিখ সকালে হাকিমকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য হাসপাতালে গিয়ে এনআইএ’র অফিসারেরা জানতে পারেন, তার ক্ষতস্থানের সিটি স্ক্যান-সহ বিবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। বেলা বারোটা নাগাদ হাসপাতালের তরফে ওঁদের জানানো হয়, হাকিমকে ছাড়া যাবে না, কারণ সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট আসেনি। অফিসারেরা তার পরেও অপেক্ষা করেছিলেন। বিকেলে তাঁদের বলা হয়, পর দিন, অর্থাৎ ১৭ অক্টোবর হাকিমের স্কিন গ্রাফটিং হবে। ১৭ তারিখ গ্রাফটিংয়ের পরে এসএসকেএম-সূত্রে বলা হয়, কালীপুজোর এক দিন আগে বা পরে হাকিমকে ছাড়া হবে।
এরই মধ্যে ২২ তারিখে খাগড়াগড়-কাণ্ডের মামলা শুনানির জন্য ওঠে। এনআইএ কোর্টকে জানায়, এসএসকেএম-কর্তৃপক্ষ হাকিমের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে এক-এক সময়ে এক-এক রকম কথা বলায় তদন্ত-পরিকল্পনা ছকতে সমস্যা হচ্ছে। কলকাতার নগর দায়রা আদালতের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারক এসএসকেএম-কর্তৃপক্ষকে সে দিন নির্দেশ দেন, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে হাকিমের শারীরিক অবস্থা সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে হবে। এবং সে দিন রাতেই এসএসকেএম থেকে লিখিত ভাবে এনআইএ-কে জানানো হয়, হাকিমের ক্ষতস্থান শুকোচ্ছে না। গ্রাফটিং সফল হয়নি। তাই ২৭ অক্টোবর ফের গ্রাফটিং হবে।
হাকিমের শারীরিক অবস্থা ঠিক কী রকম? এসএসকেএমের সেই কর্তাটিই এ দিন বলেন, “কিচ্ছু বলা যাবে না। মুখ খোলা বারণ।” আর এক কর্তার মন্তব্য, “হাকিমের ব্যাপারে এমনিতেই চাপে রয়েছি। ওকে ছাড়ার কথা বলে বাড়তি চাপ নিতে চাই না।” হাকিমকে না-ছাড়ার জন্য কারা চাপ দিচ্ছেন জানতে চাইলে কর্তাটি এড়িয়ে যান।
খাগড়াগড়-কাণ্ডে বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার প্রাথমিক রিপোর্টেই বলা ছিল, ২ অক্টোবর বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ বাদে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে, হাকিম জখম অবস্থাতেই স্ত্রী আলিমা বিবির সঙ্গে মিলে কিছু কাগজপত্র, মোবাইল ও সিমকার্ড আগুনে ফেলে দিচ্ছে। সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ ও জঙ্গি-যোগের প্রমাণ নষ্ট করাই ওদের মতলব ছিল বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন এসপি। ৩ অক্টোবরে পাঠানো রিপোর্টটি গিয়েছিল সিআইডি-র এডিজি রামফল পওয়ারের কাছেও। ৩ অক্টোবর থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডি-র হাতেই ন্যস্ত ছিল খাগড়াগড়ের তদন্তভার। অথচ ওই আট দিনে সিআইডি একটি বারও হাকিমকে জেরা করেনি! কেন? সিআইডি-র এক অফিসারের ব্যাখ্যা, “ভেবেছিলাম, ও তো হাসপাতালে আছে, সুস্থ হলে জেরা করা যাবে। আমরা তল্লাশি অভিযান আর ধৃত দুই মহিলাকে (রাজিয়া-আলিমা) জেরায় জোর দিয়েছিলাম।’’ অন্য দিকে এনআইএ জানাচ্ছে, হাসপাতালে হাকিমকে অল্প জেরা করেই তদন্ত বিস্তর এগিয়েছে। “হেফাজতে নিলে ওকে দীর্ঘ সময় ধরে জেরা করা যাবে। জঙ্গি চাঁইদের অনেকের ছবি দেখানো যাবে, বাজেয়াপ্ত কিছু নথি সম্পর্কেও সে তথ্য দিতে পারে। এ সব হাসপাতালে সম্ভব নয়।”— বলছেন এনআইএ-র এক অফিসার। সে জন্য ওঁদের এ ভাবে অপেক্ষায় রাখা হচ্ছে কেন?
এসএসকেএমের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রের বক্তব্য, হাকিমের পায়ের ক্ষতটাই গোড়া থেকে সমস্যায় ফেলেছে। হাসপাতালে ওর চিকিৎসার জন্য তৈরি মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যেরা তার শরীরে অন্য সমস্যা খুঁজে পাননি। প্রদীপবাবুর কথায়, “ক্ষতস্থান না-শুকোনোয় গ্রাফটিংয়ের সিদ্ধান্ত হয়। এ সব ক্ষেত্রে তা-ই হয়। কিন্তু হাকিমের গ্রাফটিং সফল হয়নি। এমন নজিরও বহু রয়েছে। সবই আদালতকে জানানো হবে।”
চিকিৎসকেরা জানান, সোমবার ফের গ্রাফটিংয়ের পরে অন্তত এক সপ্তাহ হাকিমকে হাসপাতালে থাকতে হবে। তার পরে ওকে হাসপাতালে রাখার কোনও কারণ নেই। বস্তুত বেশি দিন রাখা হলে হাসপাতাল থেকেই হাকিমের সংক্রমণ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কায় ডাক্তারদের কেউ কেউ। তাঁদের মতে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাকিমকে ছুটি দেওয়াই শ্রেয়।
হাকিমের দ্রুত হাসপাতাল-মুক্তি সম্পর্কে এনআইএ তবু সংশয়ে। ওদের সংশয় অমূলক কি না, আগামী সপ্তাহেই পরিষ্কার হবে।
***************
জহিরুলের খোঁজ পেলে থানায় জানান: ইমাম
গৌরব বিশ্বাস ও কল্লোল প্রামাণিক
থানারপাড়া, ২৫ অক্টোবর, ২০১৪,
এই মসজিদেই জহিরুল সম্পর্কে ঘোষণা করা হয়। —নিজস্ব চিত্র।
সন্ত্রাসে জড়ায়নি গ্রাম। নাম জড়িয়েছে গ্রামের বাসিন্দা এক যুবকের। কিন্তু এলাকা ছেড়ে বেরোলেই খাগড়াগড়-কাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে উড়ে আসা আলটপকা মন্তব্য, বাঁকা চাউনি আর ফিসফাস—কমবেশি এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে নদিয়ার থানারপাড়ার গমাখালি গ্রাম আর লাগোয়া এলাকার অনেক বাসিন্দার। সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়ি টানতে এগিয়ে এল এক মসজিদ। শুক্রবার নমাজ পড়ার আগে ‘থানারপাড়া দহপাড়া জুম্মা মসজিদ’-এর ইমাম নমাজ পড়তে আসা বাসিন্দাদের অনুরোধ করলেন জঙ্গি কার্যকলাপে নাম জড়ানো গমাখালি গ্রামের জহিরুল শেখের খোঁজ পেলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ-প্রশাসনকে সে খবর জানাতে।
ইমাম জাবের আলির কথায়, “জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস—শুধু ইসলাম নয়, পৃথিবীর কোনও ধর্ম সমর্থন করে না। এক জনের জন্য গোটা এলাকার বদনাম আমরা সহ্য করব না।”
২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে হত শাকিল আহমেদের স্ত্রী রাজিয়া বিবির এক আত্মীয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে জহিরুলের নাম পান গোয়েন্দারা। গমাখালিতে তার বাড়ি থেকে ১০ অক্টোবর ৪১টি জিলেটিন স্টিক উদ্ধার করে সিআইডি। জহিরুল ৭ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ। অথচ, তার খোঁজে গমাখালিতে পুলিশ-গোয়েন্দাদের যাতায়াত লেগেই রয়েছে। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) গোয়েন্দারাও সোমবার ঘুরে এসেছেন সেখান থেকে।
মসজিদ কমিটির সভাপতি সেলিম রেজা বলেন, “খাগড়াগড়-কাণ্ডে জহিরুলের নাম জড়িয়েছে শুনে আমরা চমকে উঠেছিলাম। কারণ, যখন এলাকায় ছিল ওর রকমসকম দেখে কারও সন্দেহ হয়নি।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জহিরুল বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার পর থেকে নানা মহলের সন্দেহ বাড়তে থাকে। তবে সে সন্দেহ শুধু জহিরুল বা তার পরিবারের উপরেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক বাসিন্দার কথায়, “ট্রেনে-বাসে হয়তো এলাকার কয়েক জন এক সঙ্গে গল্প করতে করতে যাচ্ছি। সহযাত্রীদের কেউ জানতে চাইলেন ‘বাড়ি কোথায়’? জবাব শুনে অনেকেরই দৃষ্টিটা যেন কেমন বদলে গেল! কেউ-কেউ উল্টোপাল্টা দু’-একটা কথাও শুনিয়ে দিল।” গোটা ব্যাপারটাই অস্বস্তিকর ঠেকছিল এলাকার বাসিন্দাদের কাছে। তাঁদের এই অস্বস্তি অনেককে মনে পড়িয়ে দিয়েছে শাহরুখ খান অভিনীত ‘মাই নেম ইজ খান’ ছবিটার কথা। সেখানে শাহরুখ যে চরিত্রটা করেছিলেন, সে একটা সময় খালি বলত, ‘মাই নেম ইজ খান অ্যান্ড আই অ্যাম নট এ টেরোরিস্ট’।
সেলিম জানান, এক দিকে যখন এলাকার বহু বাসিন্দাদের কাছ থেকেই তাঁরা এলাকার বাইরের ‘অস্বস্তিকর’ অভিজ্ঞতা শুনছেন, অন্য দিকে তখন জহিরুলের খোঁজ পেতে মসজিদ কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হন পুলিশ ও এনআইএ-র গোয়েন্দারা। ইমাম জাবের আলি বলেন, “জহিরুলের জন্য গোটা এলাকার বদনাম হচ্ছে। কী ভাবে ওর সঙ্গে জঙ্গিদের যোগ রয়েছে তা গোয়েন্দাদের কাছে থেকে জেনে দিন কয়েক আগে ঠিক করা হয়, এলাকাবাসীকে সচেতন করা হবে।”
থানারপাড়ার এই মসজিদে ফি শুক্রবার হাজারখানেক মহিলা-পুরুষ নমাজ পড়তে আসেন। এ দিন নমাজ পাঠ শুরু হওয়ার আগে ইমাম সকলের উদ্দেশে আবেদন করেন, জহিরুল সম্পর্কে কোনও তথ্য বা জহিরুলের খোঁজ পেলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ-প্রশাসনকে জানাতে। নমাজ শেষে বেরিয়ে এলাকার আব্দুল
কুদ্দুস মণ্ডল, সামসুজ্জোহারা বলছিলেন, “ইমাম ও মসজিদ কর্তৃপক্ষের কথাটা হেলাফেলা করার মতো নয়। সতর্ক থাকব।”
জহিরুলের বাবা জুয়াদ আলি শেখও এসেছিলেন নমাজ পড়তে। কোনও মতে বললেন, “ছেলের জন্য আজ সবার সামনে মসজিদের ঘোষণা শুনতে হল! বিশ্বাস করুন, ও কোথায় আছে, জানি না। জানলে আমিই প্রথমে মসজিদ ও থানায় খবর দেব।”
*****************
‘একে ৪৭’ লেখা ডায়েরিতে, দাবি ‘ও সব গজল’
গৌরব বিশ্বাস
কলকাতা, ২৫ অক্টোবর, ২০১৪,
এনআইএ দল কথা বলছে জহিরুলের স্ত্রী খানসা বিবির সঙ্গে। শুক্রবার কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।
স্বামীর নাম জড়িয়েছে খাগড়াগড়ের জঙ্গি-যোগে। স্ত্রী-র ডায়েরির পাতায়-পাতায় লেখা ‘জেহাদ’, ‘রক্ত’-এর মতো শব্দ, ‘হাতে তুলে নাও তরোয়াল, একে ৪৭’-এর মতো বাক্য। এ সব কী? জবাব এল, “গজল।” শুক্রবার ‘জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা’র (এনআইএ) গোয়েন্দাদের মুখোমুখি বসে এমনই জবাব দিয়েছেন খানসা বিবি। খাগড়াগড়-কাণ্ডে নদিয়ার থানারপাড়ার গমাখালি গ্রামের সন্দেহভাজন জহিরুল শেখের স্ত্রী।
জহিরুল পলাতক। খানসারও খোঁজ মিলছিল না। তবে এ দিন নিজস্ব সূত্রে নদিয়ারই করিমপুর থানা এলাকায় খানসার সন্ধান পায় এনআইএ। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, মুখোমুখি টানা আড়াই ঘণ্টার কথাবার্তায় খানসা তাদের কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। কিন্তু তদন্তে এগনোর মতো বিশেষ সূত্র দেননি। এই মুহূর্তে বছর তেইশের বধূটি রয়েছেন এনআইএ-র নজরে।
এনআইএ-র দুই গোয়েন্দা এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হন করিমপুরে। তিন মাসের মেয়েকে কোলে নিয়ে উঠোনে বসা খানসার সঙ্গে শুরু হয় তাঁদের কথাবার্তা। গোয়েন্দাদের খানসা জানান, বিয়ের আগে তাঁর নাম ছিল শমিতা খাতুন। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত থানারপাড়ার একটি হাই-মাদ্রাসায় পড়েছেন। পরে বারবাকপুরের মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছেন।
বর্ধমানের মঙ্গলকোটের শিমুলিয়ায় যেখানে মহিলাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হত বলে এনআইএ-র সন্দেহ, সেখানে তিনি গেলেন কেন, কী করে? এনআইএ সূত্রের দাবি, প্রশ্নোত্তর-পর্বের এই জায়গা থেকে ‘বিভ্রান্তিকর’ তথ্য দিতে শুরু করেন জহিরুলের স্ত্রী। প্রথমে তিনি বলেন, “আরবি-শিক্ষার জন্য ওখানে গিয়েছিলাম।” কিন্তু শ্বশুরবাড়ি বা বাপের বাড়ি লাগোয়া এলাকায় আরবি ভাষা শিক্ষার জন্য একাধিক মাদ্রাসা থাকতেও তাঁকে শিমুলিয়ায় যেতে হল কেন? জবাব দেননি বধূটি।
গোয়েন্দাদের দাবি, জহিরুলের সঙ্গে তাঁর কবে বিয়ে হয়েছিল, তা নিয়েও ধন্দ তৈরির চেষ্টা করেছেন খানসা। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে গোয়েন্দারা জানতেন, বিয়ে হয়েছে ২০১০-এ। কিন্তু এ দিন তরুণী দাবি করেছেন, তাঁর বিয়ে হয় ২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল।
খানসা ঠিক কবে শিমুলিয়ায় গিয়েছিলেন গোয়েন্দাদের খটকা রয়েছে তা নিয়েও। কারণ, এ দিন এক বার তিনি জানিয়েছেন, বিয়ের দু’মাস আগে থেকে তিনি আরবি শিক্ষার জন্য শিমুলিয়ায় গিয়েছিলেন। এক বার বলেছেন, “বিয়ের পরে স্বামীর সঙ্গে গিয়ে কিছু দিন শিমুলিয়ায় ছিলাম। তখন ওই মাদ্রাসায় পড়তাম।”
কিন্তু শিমুলিয়ায় জহিরুল কেন গিয়েছিল বা সেখানে থাকার সময় সে কী কাজ করত— খানসাকে জেরা করে সে প্রশ্নের জবাব গোয়েন্দারা পাননি। মহিলা দাবি করেছেন, তিনি জানেন না। শিমুলিয়ায় অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হত কি? এ প্রশ্নের জবাবে বধূটি বলেছেন, “শরীর ঠিক রাখার জন্য প্রতিদিন সকালে ১৫-২০ মিনিট ব্যায়াম করানো হতো। এর বেশি কিছু জানি না।”
খাগড়াগড়-কাণ্ডে ধৃত আলিমা বিবি বা রাজিয়া বিবিরা কি তাঁর সহপাঠী ছিলেন? বধূটি নিরুত্তর। বিস্ফোরণে হত শাকিল আহমেদ বা আহত আবদুল হাকিমকে কে দেখেছিলেন শিমুলিয়ায়? জবাব আসেনি এ প্রশ্নেরও।
জহিরুল কোথায় আছে জানতে চেয়েও সদুত্তর পাননি বলে দাবি গোয়েন্দাদের। খানসা তাঁদের জানিয়েছেন, ঈদের সময় তিনি জহিরুলের সঙ্গে গমাখালির শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন। ঈদের পরেই (৭ অক্টোবর) জহিরুল ‘কাজে’ চলে যায়। খানসা ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে মায়ের সঙ্গে চলে আসেন বাপেরবাড়ি। তার পর থেকে জহিরুল স্ত্রী এবং ছেলেমেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে না।
এর পরে কথা শুরু হয় খানসার ডায়েরি (জহিরুলের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল) নিয়ে। ডায়েরিতে লেখা ‘জেহাদ’ বা ‘একে ৪৭’-এর প্রসঙ্গ তুলে গোয়েন্দারা জানতে চান, “জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন না কি?”
জবাব আসে, “এ সব গজলের লাইন। আমি গজল শুনতে ভালবাসি। তা থেকে পছন্দের শব্দ ডায়েরিতে লিখেছি।”
No comments:
Post a Comment