Monday, August 11, 2014

Hide to save ruling party leaders involved in Saradah fraud case in West Bengal

টানাহেঁচড়ায় নিখোঁজ সারদার নথি-আলমারি


ছবি, সৌজন্যে আনন্দবাজার পত্রিকা । লেখা সৌজন্যে এ বি পি আনন্দ

সরকারি সূত্রের খবর, এক সময়ে মহাকরণে রাজ্য পুলিশের তৎকালীন ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়ের ঘরে ওই আলমারিটি ছিল। ডিজি-র অফিস নবান্নে উঠে আসার সময় অন্যান্য জিনিসপত্রের সঙ্গে আলমারিটিও পাঠানো হয়। তার পর থেকেই সেটির আর খোঁজ নেই। সারদা-মামলার তদন্তভার হাতে নিয়ে সিবিআই যখন যাবতীয় নথিপত্র চেয়ে রাজ্য পুলিশের উপরে চাপ বাড়াচ্ছে, তখন রহস্য তৈরি হচ্ছে উধাও আলমারি ঘিরে।
পুলিশকর্তারা অবশ্য কোনও রহস্যের কথা মানতে নারাজ। তাঁদের অনেকেই বলছেন, গত অক্টোবরে মহাকারণ থেকে আসা অনেক আলমারি নবান্নের দোতলা ও তিনতলার একাধিক ঘরে ডাঁই করে রাখা হয়েছে। তার মধ্যে ওই আলমারিটি থাকতে পারে। এ বছরের গোড়ায় পুলিশ ডিরেক্টরেট নবান্ন থেকে ভবানী ভবনে স্থানান্তরিত হয়। তখনও বেশ কিছু আলমারি সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই আলমারিগুলির মধ্যেও সারদার নথি-ভর্তি আলমারিটি থাকতে পারে। সব মিলিয়ে হয় নবান্ন, না হয় ভবানী ভবন এই দুই জায়গার কোথাও আলমারিটি রয়েছে বলে পুলিশকর্তারা নিশ্চিত।
রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএম প্রভুশেখর রেড্ডির কথায়, “আলমারি হারিয়েছে বা নিখোঁজ বলাটা ঠিক হবে না। সবই আছে।” কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও কারণে যদি ওই আলমারিটি পাওয়া না যায়, তা হলে তো সারদা মামলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিই মিলবে না? রেড্ডির জবাব, “আমরা সারদা-মামলার অনেক নথি সিবিআই-কে দিয়েছি। বাদবাকি যা আছে, সব দিয়ে দেব। মনে রাখতে হবে পুলিশের যাবতীয় তদন্ত রিপোর্টের প্রতিলিপি কোথাও না কোথাও থাকে। এক জায়গায় না পেলে আরেক জায়গা থেকে তা পাওয়া যাবে।”
কিন্তু এত দিন পরে আলমারির খোঁজ পড়ল কেন? সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, সারদা মামলার নথি পাওয়ার জন্য চাপ বাড়িয়েছে সিবিআই। এমনকী, মামলার প্রয়োজনে রাজ্যের গড়া স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিমের (সিট) প্রথম চেয়ারম্যান নপরাজিত মুখোপাধ্যায়কেও ডাকতে পারে তারা। নপরাজিতবাবু ‘সিট’-এর চেয়ারম্যান থাকার সময়ে কী ভাবে তদন্ত করিয়েছেন, জেলা থেকে আসা রিপোর্টে তিনি কী নোট দিয়েছেন, তা-ও দেখতে চাইতে পারে সিবিআই। তিনি তা দেখাতে না পারলে তাঁর আমলে ‘সিট’-এর কাজকর্ম নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে।
এই অবস্থায়, তাঁর আমলে ‘সিট’-এর যে কাজকর্ম হয়েছে, তার নথিপত্র ঠিকঠাক আছে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন নপরাজিতবাবু। পুলিশ সূত্রের খবর, একেবারে গোড়ায় বিধাননগরের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় যে মামলা হয়েছিল, তার তদন্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখে তিনি বেশ কিছু অসঙ্গতি পেয়েছিলেন। এর পরেই সারদা সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত কী ভাবে হবে, সে ব্যাপারে সব জেলার পুলিশ সুপারের কাছে নপরাজিতবাবু ১৫ দফা নির্দেশিকা পাঠান। এসপি-দের রিপোর্ট পাওয়ার পরে তাতে নিজের মতামত লিখে সংশ্লিষ্ট ফাইলটি অফিসকর্মীদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন তিনি। তদন্ত রিপোর্ট সম্বলিত যাবতীয় ‘ফাইল’ এবং নপরাজিতবাবুর পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত ‘নোট’ ওই আলমারিতেই রাখা হতো। ফলে কাগজপত্রের খোঁজ করতে গিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই আলমারিটির খোঁজখবর নেন প্রাক্তন ডিজি। কিন্তু সেটির সন্ধান মেলেনি।
আলমারি না-পাওয়া গেলেও নথিপত্র পেতে অসুবিধা হবে না, বর্তমান ডিজি-র এই দাবির সঙ্গে সহমত নন অনেক পুলিশকর্তাই। তাঁদের বক্তব্য, বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন, তার প্রতিলিপি অন্যত্র মিলবে। কিন্তু, ‘সিট’-এর প্রধান হিসেবে নপরাজিতবাবু তার উপরে কী মন্তব্য করেছিলেন, তা এক মাত্র ওই আলমারিতে থাকা ফাইল থেকেই জানা সম্ভব। ফলে, আলমারি না-মেলা পর্যন্ত প্রাক্তন ডিজির উদ্বেগ থেকে যাবে বলেই মত ওই পুলিশকর্তাদের। নপরাজিতবাবু নিজে অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “আমি অবসর নিয়েছি। এখন পুলিশ বিভাগের ব্যাপারে কথা বলা সাজে না।” ২০১৩-এর ৩১ সেপ্টেম্বর অবসর নেন নপরাজিতবাবু। তার চার দিনের মাথায়, ৫ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রীর দফতর, তাঁর হাতে থাকা ৭টি দফতর ও রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টরেট মহাকরণ থেকে নবান্নে সরানোর কাজ শুরু হয়। অন্য আসবাবের সঙ্গে ডিজি-র ঘরের বহু  আলমারিও যায় নবান্নে। কিন্তু, কিছু জরাজীর্ণ আলমারি নবান্নের ঝাঁ চকচকে অফিসের সঙ্গে মানানসই হচ্ছিল না বলে কয়েকটি ঘরে সেগুলি ডাঁই করে রাখা হয়।
ফেব্রুয়ারিতে রাজ্য পুলিশের সদর দফতর সরানো হয় ভবানী ভবনে। তখনও মহাকরণ ও নবান্ন থেকে পুলিশের কিছু আসবাবপত্র সেখানে পাঠানো হয়। বারবার জায়গা বদলের কারণে কিছু আসবাবপত্র ও ফাইল ওলটপালট হতেই পারে বলে দাবি প্রশাসনের বহু কর্তার। কিন্তু জরুরি নথিভর্তি আসবাব ঠিক মতো সরানো হল কি না, তা ঠিক জায়গায় পৌঁছলো কি না, সে  সংক্রান্ত তদারকিতে খামতি নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। 

No comments:

Post a Comment