Tuesday, October 14, 2014

TMC-Terrorist nexus in West Bengal and Police becomes incompetent for ruling party leanings

প্রশাসনের দুশ্চিন্তার সেই শ্যাডো জোনে ছায়া সন্ত্রাসের

দেবব্রত ঠাকুর (সৌজন্য - আনন্দবাজার পত্রিকা)

কলকাতা, ১৫ অক্টোবর, ২০১৪


চার রাস্তার সংযোগস্থল। তবে ফুটিসাঁকো কার্যত তিন জেলার মোড়!
বাদশাহি সড়কের উপরে ফুটিসাঁকো মোড়, জেলা বর্ধমান। যেখান থেকে বীরভূম সীমানা বলতে গেলে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। পশ্চিমের রাস্তা ধরে আট কিলোমিটার গেলে বীরভূমের কীর্ণাহার। সেখানে পথ দু’ভাগ একটির গন্তব্য নানুর হয়ে বোলপুর, অন্যটির সিউড়ি। ফুটিসাঁকো মোড় থেকে পূর্বমুখী রাস্তা গিয়েছে বর্ধমানের কেতুগ্রাম হয়ে কাটোয়া পেরিয়ে নবদ্বীপের দিকে। দক্ষিণমুখী পথ অজয়ের উপরে নতুনহাটের সেতু পার হয়ে রওনা দিয়েছে মঙ্গলকোট হয়ে বর্ধমান। উত্তরমুখী রাস্তা পাঁচ-ছ’কিলোমিটার গিয়েই ঢুকে পড়েছে মুর্শিদাবাদের চৌহদ্দিতে। পাঁচথুপি, কান্দি হয়ে সোজা বহরমপুর।
এ হেন ফুটিসাঁকোকে কেন্দ্রে রেখে ভদ্রলোক স্কেল দিয়ে অদৃশ্য বৃত্ত আঁকলেন। দেওয়ালে ঝোলানো পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রের গায়ে।
না, ভূগোলের ক্লাস নয়। বীরভূম, বধর্মান, মুর্শিদাবাদ প্রশাসনে একদা বিবিধ প্রশাসনিক গুরুদায়িত্ব সামলে আসা অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার বোঝাচ্ছিলেন অঞ্চলটির গুরুত্বের কথা। বীরভূমের জেলাশাসক বা বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক হিসেবে কাজ করার সুবাদে গোটা তল্লাটটি তাঁর কাছে নিজের হাতের তেলোর মতো চেনা। বললেন, “এই যে বৃত্তটা, এর ব্যাসার্ধ খুব বেশি হলে পনেরো-কুড়ি কিলোমিটার। অথচ বৃত্তের মধ্যে তিনটে জেলাই ঢুকে গিয়েছে! প্রশাসনেরও তাই মাথাব্যথার অন্ত নেই।” কেন?
প্রশাসনের কর্তাদের ব্যাখ্যা: রাজনৈতিক সংঘর্ষ হোক, কিংবা খুন-ডাকাতি-ধর্ষণ-রাহাজানি, যে কোনও অপরাধ ঘটানোর পরে অপরাধীরা হামেশা এমন অঞ্চলকে ‘স্ট্র্যাটেজিক জোন’ হিসেবে ব্যবহার করে। পুলিশের নাগাল এড়াতে অল্প সময়ে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় গিয়ে গা ঢাকা দিতে পারে। ঘুম ছোটে অফিসারদের। “আমরা প্রশাসনিক স্তরে এই ধরনের অঞ্চলকে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ শ্যাডো জোন হিসেবে চিহ্নিত করে থাকি।” জানাচ্ছেন প্রাক্তন আমলাটি।
এ বার অবশ্য রাজনৈতিক সংঘর্ষ বা চুরি-ছিনতাই-ডাকাতির ব্যাপার নয়। সাম্প্রতিক খাগড়াগড় বিস্ফোরণের প্রেক্ষাপটে ‘শ্যাডো জোনে’ সরাসরি পড়েছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কালো ছায়া। সন্ত্রাস-চক্রান্তের একই সূত্র খাস বর্ধমান শহরের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া, বীরভূমের নিমড়ে ও মুর্শিদাবাদের বেলডাঙাকে। সড়ক যাতায়াত সহজ হওয়ায় চক্রীদের কাছে কাজটা আরও অনায়াস হয়েছে বলে অনেকের অভিমত। কীর্ণাহারের এক প্রবীণ চিকিৎসকের কথায়, “রাস্তাঘাটের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। এখন তো আমরা প্রায়ই মুর্শিদাবাদ সীমানার গ্রামে পেশেন্ট দেখতে যাই! কখনও গাড়িতে, কখনও মোটরবাইকে।”
বস্তুত গ্রামবাংলার অধুনা ‘বাইক-বিপ্লব’ও প্রশাসনের ছায়া-অঞ্চলে বাড়তি মাত্রা জুড়েছে। প্রাক্তন ওই জেলাশাসক বলছেন, “আগে চুরি-ডাকাতি করে পালানোর সময় এখানকার অপরাধীরা কখনও গাড়ি ব্যবহার করত না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যেত, তারা মাঠ ভেঙে, আল ভেঙে পাশের জেলায় গা ঢাকা দিয়েছে। কখনও বা সাইকেলে চড়ে পালিয়েছে।” কিন্তু খাগড়াগড়-কাণ্ডে বিস্তর মোটরবাইকের যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি: খাগড়াগড়ের বাড়িতে যারা আনাগোনা করত, সকলেই আসত মোটরসাইকেলে চড়ে।
অর্থাৎ, মসৃণ সড়কযাত্রা ও মোটরবাইকের ব্যবহার সন্ত্রাসবাদীদের কাজকে আরও সহজ করে দিয়েছে। বিস্ফোরণের পরে পরেই বেশ কিছু নারী-পুরুষ পাততাড়ি গুটিয়েছে। তদন্তকারীরা বলছেন, উন্নত পথ-যোগাযোগের দৌলতে শিমুলিয়া বা বাবুরবাগ থেকে রওনা দিয়ে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে মুর্শিদাবাদে ঢুকে পড়া সম্ভব। আবার কাটোয়া হয়ে নদিয়ায় পৌঁছতে মোটরবাইক বা গাড়িতে আড়াই-তিন ঘণ্টাই যথেষ্ট। আর তার পরে সীমান্ত ডিঙিয়ে ও-পারে গা ঢাকা দেওয়াটা পোড় খাওয়া দুষ্কৃতীদের পক্ষে কঠিন নয়।
ফলে বর্ধমান-তদন্তের বৃত্তেও ক্রমশ কেন্দ্রে আসছে শ্যাডো জোন।


**************

তৃণমূল-ঘনিষ্ঠতার কথা মানল হাকিম

নিজস্ব সংবাদদাতা (সৌজন্য - আনন্দবাজার পত্রিকা)

কলকাতা, ১৫ অক্টোবর, ২০১৪


6
বর্ধমান ও মঙ্গলকোটে শাসক দলের বেশ কয়েক জন নেতার সঙ্গে তার ভালই ‘দোস্তি’ গড়ে উঠেছিল বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-কে জানাল খাগড়াগড় বিস্ফোরণে আহত আব্দুল হাকিম।
হাকিম আপাতত এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি। সোমবার সেখানেই তাকে দীর্ঘ জেরা করেছিল এনআইএ। মঙ্গলবার হাকিমের সঙ্গে কথা বলেন এনআইএ-র এসপি বিক্রম খালাটে। সিসিইউ-তে থাকাকালীন গত শুক্রবার আনন্দবাজারের প্রতিনিধিকে হাকিম জানিয়েছিল, মেহবুব রহমান-সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। একই কথা সে কবুল করেছে এনআইএ-র কাছেও। এক কর্তা জানান, এ বার হাকিমের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই নেতাদের সঙ্গে খুব শীঘ্রই কথা বলার চেষ্টা হবে। প্রয়োজনে তাঁদের তদন্তের আওতায় আনা হতে পারে।
এনআইএ-কে হাকিম জানিয়েছে, বছর তিনেক আগে শিমুলিয়ার ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে গিয়ে শাকিল আহমেদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তার পর আরও অনেকের সঙ্গে। এই শাকিলই খাগড়াগড় বিস্ফোরণে নিহত হয়। খাগড়াগড়ের বাড়িটি শাকিল ও সে একসঙ্গে ভাড়া নিয়েছিল বলে জানায় হাকিম। তবে এ ক্ষেত্রে হাকিমের ভূমিকাই ছিল মুখ্য।
কী রকম? তদন্তকারীরা জেনেছেন, বিস্ফোরণের বহুদিন আগে থেকেই স্থানীয় কয়েক জন তৃণমূল নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তুলেছিল হাকিম। গোয়েন্দাদের হাকিম বলেছে, খাগড়াগড়ে একটি মোবাইল রিচার্জের গুমটি তৈরি করেছিল সে। সেখানে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের অনেকেরই নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন। এ ভাবেই আলাপ জমে ওঠে। সেই সুবাদে মাঝেমধ্যে ছোটখাটো ঝামেলা হলে ওই নেতারাই তা সামলে দিতেন। এনআইএ-র দাবি, হাকিম জানিয়েছে, নিরুপদ্রবে নিজেদের কাজ সারতেই শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের হাতে রাখার চেষ্টা করত তারা। বিস্ফোরক তৈরি করা থেকে শিমুলিয়ায় জেহাদি তৈরির কাজেও হাকিম যুক্ত ছিল বলে এনআইএ-র ধারণা। যদিও হাকিম সে কথা সে মানতে চায়নি।
শুধু হাকিম নয়, শাকিল কী ভাবে নিজের কাজকর্ম বিস্তার করেছিল, তা-ও বোঝার চেষ্টা করছে এনআইএ। গত রবিবার এই সূত্রেই কলকাতার মেটিয়াবুরুজে গিয়ে স্থানীয় কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এনআইএ। ২০১২-র ৮ এপ্রিল মেটিয়াবুরুজের লোহাগলির মসজিদ তালাওয়ের একটি বাড়িতে খাগড়াগড়ের মতোই বিস্ফোরণে দু’জন মারা যায়। গোয়েন্দাদের ধারণা, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সঙ্গে মেটিয়াবুরুজের যোগ রয়েছে ও শাকিলই এই যোগসূত্র। দোকানের জন্য পোশাক সেলাই করানোর অছিলায় মাঝে-মধ্যেই মেটিয়াবুরুজে আসত শাকিল। এনআইএ-র এক অফিসারের বক্তব্য, “পোশাকের কাজের আড়ালে শাকিল মেটিয়াবুরুজে বিস্ফোরক পাচারের কাজ করত বলেই আমাদের ধারণা। শাকিল যে মেটিয়াবুরুজ থেকে তৈরি বোমা নিয়ে যেত, তারও কিছু প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে।”
এনআইএ-র মতে, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের একমাত্র জীবিত প্রত্যক্ষদর্শী হাকিম। তাই হাসপাতালে তার নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে সোমবারই আদালতে আবেদন করেছিল তারা। ওই আর্জির ভিত্তিতে কলকাতা নগর দায়রা আদালতের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারক কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) এবং এসএসকেএম হাসপাতালের সুপারকে হাকিমের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের পরেই এ দিন পুলিশের ২৩ জনের একটি দলকে হাকিমের নিরাপত্তায় রাখা হয়।
এ দিন রিউম্যাটোলজির নতুন ভবনের একটি কেবিনে হাকিমকে স্থানান্তরিত করা হয়। তার আগে এনআইএ-র অফিসাররা গিয়ে কেবিন দেখে আসেন। সকালে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা হাকিমকে পরীক্ষা করে জানান, হাকিমের ক্ষতস্থানে নিয়মিত ড্রেসিং দরকার। তবে তাকে হাসপাতালে রাখার প্রয়োজন নেই। হাসপাতাল সূত্রের খবর, হাকিমের অবস্থার অবনতি না হলে বুধ বা বৃহস্পতিবার তাকে ছাড়া হতে পারে।

**********

পড়শি রাজ্যেও গিয়েছে ফেরার ইউসুফদের ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা (সৌজন্য - আনন্দবাজার পত্রিকা)

কলকাতা, ১৫ অক্টোবর, ২০১৪, 

বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডের সন্দেহভাজনরা দেশের বাইরে পালাতে পারেনি বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। আশপাশের রাজ্যে গা-ঢাকা দিয়ে থাকাটাও কঠিন করে তুলতে তাঁরা এখন উঠে পড়ে লেগেছেন।
প্রধান অভিযুক্ত মহম্মদ ইউসুফ ফেরার। গা-ঢাকা দিয়েছে আরও ৯ জন। তদন্তে তাদের যে সব ছবি পাওয়া গিয়েছে, তার প্রতিলিপি ইতিমধ্যেই বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা বা উত্তরপ্রদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছে। সন্দেহভাজনরা কেন দেশ ছাড়তে পারেননি বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা? তাঁদের যুক্তি, দেশের বাইরে পালাতে চাইলে বাংলাদেশেই স্বাভাবিক গন্তব্য হওয়া উচিত এই জঙ্গিদের। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার জঙ্গি দমনে পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)-কে অভিযানে নামানোর ফলেই এ বাংলায় আসতে বাধ্য হয় জামাতের দুষ্কৃতীরা। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার বর্ধমান বিস্ফোরণের কথা জেনেছে। ফলে, বর্ধমান কাণ্ডের পরে বাংলাদেশের পুলিশের সামনে গিয়ে পড়তে চাইবে না ইউসুফরা। গোয়েন্দারা জেনেছেন বাংলাদেশের রাজশাহি জেলার আহলে হাদিস ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিই ছিল পালিয়ে গিয়ে ইউসুফদের মাথা গোঁজার ঠাঁই। কিন্তু, বর্ধমান কাণ্ডের পরে সেখানেও তল্লাশি অভিযান চালান হয়েছে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন।
ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, “বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডে যে নামগুলি পাওয়া গিয়েছে, নিয়মমাফিক সে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া চলছে। সীমান্ত এলাকাতেও যাতে দুষ্কৃতীরা ঘাঁটি গাড়তে না পারে, তার জন্যও নজরদারি চলছে, যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
তদন্তকারীরা বলছেন, বাংলাদেশ ছাড়া নেপালে পালিয়ে যাওয়ার একটি সম্ভাবনা ছিল। এর আগে ভারতীয় ভূখণ্ডে নাশকতামূলক কাজের পরে নেপালে পালিয়ে যাওয়ার নজির রয়েছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, নেপালের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এখন বন্ধুত্বপূর্ণ। তাই সেখানকার পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছ থেকে যথাসম্ভব সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীতে নেপাল পুলিশের সাহায্য নিয়েই ইয়াসিন ভাটকলের মতো জঙ্গিদের ধরা গিয়েছে। গোয়েন্দারা বলছেন লুকনোর জন্য ইউসুফরা কোনও ধর্মীয় স্থানই পছন্দ করে। নেপালে তেমন সুযোগ অল্প।
গোয়েন্দাদের ধারণা, তাই বেশি দূর যেতে পারেনি ইউসুফরা। নিম্ন অসমের সঙ্গে যে হেতু ইউসুফ-শাকিলদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল, তাই অসমে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার দিকটিও খতিয়ে দেখা হয়েছে। সেখানে কড়া নজরদারি শুরু করেছে এনআইএ। জামাতুল মুজাহিদিন জঙ্গিদের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যেই অসম থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফলে অসমে পালিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি হয়তো নেবে না ইউসুফরা। ধরপাকড় শুরু হয়েছে অন্য রাজ্যেও। চেন্নাইয়ে তিন যুবককে আটক করেছে পুলিশ। বর্ধমান কাণ্ডের সঙ্গে তাদের কোনও যোগাযোগ রয়েছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শাকিলের মোবাইল কললিস্ট থেকে জানা গিয়েছে, চেন্নাইয়ে সে বেশ কয়েক বার ফোন করেছিল।
এনআইএ-র এক কর্তার কথায়, “ইউসুফরা বিস্ফোরণের পরেও দু’তিন দিন শিমুলিয়ার মাদ্রাসায় ছিল বলে জানতে পেরেছি।” এই তথ্য জানা গিয়েছে ওদের মোবাইল ঘেঁটে। কিন্তু, তার পর থেকেই ইউসুফদের মোবাইল ফোন বন্ধ করা আছে। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, সম্ভবত কোথাও গিয়ে নতুন সিম নিয়েছে পলাতকেরা। কিন্তু, যে ভাবে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, তাতে খুব একটা শান্তিতে নেই তারা।

****************

বছরখানেক ধরে অন্যত্রও বিস্ফোরক বানিয়েছে শাকিলরা

সুরবেক বিশ্বাস (সৌজন্য - আনন্দবাজার পত্রিকা)

কলকাতা, ১৫ অক্টোবর, ২০১৪, 

খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পরে বর্ধমানে যে জঙ্গি মডিউল বা গোষ্ঠীটির হদিস মিলেছে, পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে বসে তারা অন্তত বছর খানেক ধরে আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বানিয়ে গিয়েছে এমনটাই মনে করছে এনআইএ।
জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার বক্তব্য, বর্ধমানের উপকণ্ঠে অস্ত্র ও বিস্ফোরকের গবেষণাগার তথা কারখানাটির হদিস ২ অক্টোবর মিলেছে ঠিকই, তবে রাজ্যের অন্য জায়গায় অন্তত এক বছর ধরে ওই একই চক্র আইইডি তৈরি করেছে। এর বেশির ভাগটাই বাংলাদেশে পাচার করা হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে তদন্তকারীরা। শুধু তা-ই নয়, তদন্তকারীরা জেনেছেন, জেহাদি ভাবধারায় এ দেশের এক দল পুরুষ ও মহিলাকে উদ্বুদ্ধ করে বাংলাদেশে নাশকতা ঘটানোর জন্য তাদের দিয়ে মারণাস্ত্র তৈরি করাতে মাসের পর মাস ‘ক্লাস’ নিত ভিনদেশ থেকে আসা কয়েক জন লোক। বিস্ফোরণ-কাণ্ডে ধরা পড়া রাজিয়া বিবি ওরফে রুমি কিংবা আলিমা বিবিদের এমন ভাবে মগজধোলাই করা হয়েছিল যে, ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও তারা অনায়াসেই অন্য দেশে নাশকতা ঘটানোর চক্রান্তে যুক্ত হতে পেরেছিল। গাজা ভূখণ্ডের সাম্প্রতিক সংঘর্ষে প্যালেস্তাইনি শিশুদের উপর ইজরায়েলি হামলার বাছাই করা ভিডিও পর্যন্ত মহিলাদের দেখিয়ে তাদের ‘উদ্বুদ্ধ’ করা হয়েছিল। গোয়েন্দাদের দাবি, ধৃত রাজিয়া ও আলিমা এবং বিস্ফোরণে জখম আব্দুল হাকিমকে জেরা করে এমনই ইঙ্গিত মিলেছে। তা ছাড়া, বর্ধমানের শিমুলিয়া মাদ্রাসা-সহ কয়েকটি সন্দেহজনক জায়গা থেকে মেলা নথিপত্রও একই দিকে ইশারা করছে। 
তদন্তকারীদের বক্তব্য, ধৃতদের মুখ থেকে এখনও এই ব্যাপারে সরাসরি কথা বার না-করা গেলেও তাদের জেরা করে বোঝা যাচ্ছে, ২০১২-তে ওই চক্রের সদস্যদের আইইডি তৈরির প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রাথমিক পাঠ শেষ হয়। পরের বছরই তারা পুরোদস্তুর ‘কাজে’ নেমে পড়ে। এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, “যা মনে হচ্ছে, খাগড়াগড়ে ওই কারখানা বা গবেষণাগার তৈরি হওয়ার বছর খানেক আগেই আইইডি উৎপাদনের ওই রকম অন্তত একটি জায়গা তৈরি করা হয়। আর সেখানে বানানো শ’য়ে শ’য়ে আইইডি এবং অন্যান্য মারণাস্ত্র পাচার করা হয়েছে বাংলাদেশে।” এনআইএ-র এক অফিসারের মতে, “প্রচুর সংখ্যায় আইইডি তৈরির বরাত তাদেরই দেওয়া হবে, যাদের এই ব্যাপারে ভাল রকম অভিজ্ঞতা রয়েছে। কাজেই, নিঃসন্দেহে খাগড়াগড়ে ডেরা বাঁধার অনেক আগেই হাত পাকিয়েছিল শাকিল, সুবহানেরা।”
খাগড়াগড়ের আগে কোথায় তৈরি করা হয়েছিল আইইডি উৎপাদনের সেই কারখানা?
ওই গোয়েন্দা-কর্তা বলেন, “আমরা সেটাই খুঁজে বের করারচেষ্টা করছি। তবে বিশেষ একটিসূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, সম্ভবত মুর্শিদাবাদ জেলায় বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কোনও জায়গাতেই ওই রকম এক বা একাধিক কারখানা তথা গবেষণাগার গড়ে তোলা হয়েছিল।” ওই কারখানার সম্ভাব্য জায়গা হিসেবে লালগোলা ও বেলডাঙাকে পাখির চোখ করে তল্লাশি চালাচ্ছেন ও খোঁজখবর নিচ্ছেন তদন্তকারীরা।
অন্তত বছর খানেক ধরে এহেন জঙ্গি কার্যকলাপ চললেও সেটা জেলা পুলিশ ও রাজ্য গোয়েন্দা শাখার (আইবি) নজর কী করে এড়িয়ে গেল, সেই প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের অন্দরেই। তাঁদের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে একই ভাবে ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরো, সেনা গোয়েন্দা ও বিএসএফের গোয়েন্দা শাখাও।
রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষকর্তা অবশ্য বলেন, “জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-সহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলা ওই জঙ্গি মডিউল সম্পর্কে আমাদের কাছে খবর ছিল না ঠিকই, তবে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে সম্প্রতি নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও বাংলাদেশ সীমান্তে আমরা নজরদারি অনেকটা বাড়িয়েছি।” ওই পুলিশ কর্তার কথায়, “আমরা এখনও মনে করি, ওই নজরদারি বাড়ানোর ফলেই মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বোমা তৈরির কারখানা সরিয়ে আনা হয়েছিল বর্ধমানের উপকণ্ঠে।”
ধৃত আব্দুল হাকিম এবং দুই মহিলা রাজিয়া ও আলিমার কাছ থেকেই এই ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের দাবি, জেরার সময়ে রাজিয়াকে বার বার প্রশ্ন করা হয়েছে, ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও কেন সে জেএমবি-র মতো বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠনের কাজে নিজেকে যুক্ত করতে গেল? তদন্তকারীরা জেনেছেন, ধর্মীয় ভাবাবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে ও নিয়মিত মাসোহারার বিনিময়েই তাদের এই বিপজ্জনক কাজে সামিল করা হয়।
এক গোয়েন্দা-অফিসারের কথায়, “রাজিয়া বিবিরা বাংলাদেশি নয়।
তার ঠাকুর্দাও নদিয়ার করিমপুরের বাসিন্দা। এর পরেও রাজিয়া কী করে বাংলাদেশের কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হল, সেটাই প্রশ্ন।” ওই অফিসার জানান, রাজিয়ার স্বামী, বিস্ফোরণে নিহত শাকিল আহমেদ জেএমবি-র সদস্য বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। “তবে শুধু স্বামীর সূত্রে নয়, মাসের পর মাস রীতিমতো ক্লাস নিয়ে রাজিয়াদের জেহাদি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। যার পরিণতিতে নাশকতায় সামিল হওয়ার সময়ে রাজিয়ার মাথায় থাকেনি, সে কোন দেশের নাগরিক,” বলছেন ওই অফিসার।

**********************

মোটরবাইক বিস্ফোরণে ধৃত এক পাণ্ডবেশ্বরে

নিজস্ব সংবাদদাতা (সৌজন্য - আনন্দবাজার পত্রিকা)

পাণ্ডবেশ্বর, ১৫ অক্টোবর, ২০১৪, 



তৃণমূলের বুথ কমিটির সভাপতির বাড়ির সামনে রাখা মোটরবাইকে বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। তৃণমূলের দাবি, ধৃত বিজেপি কর্মী। যদিও ধৃতের সঙ্গে দলের সরাসরি কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছে বিজেপি।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম কাজল ঘোষ। সে আলিনগর গ্রামেরই বাসিন্দা। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতের কাছ থেকে পাঁচটি ডিটোনেটর, একটি এক রাউন্ডের পিস্তল, চারটি কার্তুজ, একটি রাইফেলের ফাঁকা মাগাজিন, তিনটে পাওয়ার জেল, একটি  ডিল  করার যন্ত্র, সুতলি দড়ি, জাল তৈরীর সুতো, সার্কিট বোর্ড-সহ বেশ কিছু বিস্ফোরণের উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের দাবি, ধৃত জেরায় জানিয়েছে, পারিবারিক বিবাদের কারণেই সে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। দু’টি পাওয়ার জেলের সাহায্যে সে রবিবার গভীর রাতে মোটরবাইকে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। জেরায় সে আরও জানিয়েছে, পাণ্ডবেশ্বরের শ্যামলা পঞ্চায়েতের আলিনগর গ্রামে তৃণমূলের বুথ কমিটির সভাপতি ভীমসেন ঘোষের সঙ্গে গাছের মালিকানা নিয়ে তার বিবাদ চলছিল। ভীমসেনবাবু তাকে হুমকি দিচ্ছিলেন।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, মোটরবাইক বিস্ফোরণে খনিতে ব্যবহৃত ডিটোনেটর ব্যবহার করা হয়েছিল। ঘটনার তদন্তে নেমে কয়েকজন খনিকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেই সূত্রেই জানা যায় কাজলের কথা। ধৃত কাজল বাঁকুড়ার মেজিয়ায় একটি বেআইনি কয়লাখনিতে কাজ করত। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ওই খনিতে ধসের জেরে পাঁচ জন চাপা পড়ে মারা যাওয়ার পর সে ফিরে বাড়ি ফিরে আসে।
সোমবার ভীমসেনবাবু পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, রবিবার গভীর রাতে তাঁর পাঁচিল ঘেরা বাড়ির উঠোনে রাখা মোটরবাইকে বিস্ফোরণ ঘটায় অজ্ঞাতপরিচয় কিছু দুষ্কৃতী। বিস্ফোরণে মোটরবাইকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ডিটোনেটরের সঙ্গে তার সংযোগ করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। স্থানীয় তৃণমূল দাবি করেছিল, এই ঘটনার পিছনে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপির হাত রয়েছে। কাজল ঘোষের গ্রেফতারের খবর পাওয়ার পর জামুড়িয়া ব্লক (২) তৃণমূলের সহ সভাপতি সিদ্ধার্থ রাণা দাবি করেন, “কাজলবাবু বিজেপি কর্মী। মোটরবাইক কাণ্ড বিজেপির মস্তিষ্কপ্রসূত। ওরা ভাবছে এভাবে ভয় দেখিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের জব্দ করবে।” তাঁর আরও অভিযোগ, “লোকসভা নির্বাচনে বাবুল সুপ্রিয় জেতার পর গ্রামের পাঁচ জন বিজেপি কর্মীকে নিয়ে কাজলবাবু রাতের দিকে ভীমসেনবাবুর ঘরে ঢিল ছুঁড়ছিলেন। তখন গ্রামের লোকেরা ওদের ধরে ফেলেন।”
পারিবারিক বিবাদের কথা অস্বীকার করে ভীমসেনবাবুর দাবি, “আমি মোটরবাইকে বিস্ফোরণ ঘটার পর কাউকে দেখিনি। তাই নির্দিষ্ট কারও নামে অভিযোগ করিনি। পুলিশ তদন্তে করে একজনকে গ্রেফতার করেছে। পারিবারিক বিবাদ থাকলে কাজলের নাম সন্দেহের তালিকায় রাখতাম।”
যদিও বিজেপি ধৃতকে দলীয় কর্মী বলে মানতে চায়নি। বিজেপির জামুড়িয়া মণ্ডল কমিটির সভাপতি মৃণালকান্তি ঘোষ বলেন, “কাজলের সঙ্গে আমাদের দলের সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের সাজার ব্যবস্থা করুক।

No comments:

Post a Comment