Monday, October 20, 2014

Not all Madrasas are terrorists hubs, but don't hide those who shelters terrorists

প্রবন্ধ ১

পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান: ভুল ভাবে দেখব কেন

সেমন্তী ঘোষ (সৌজন্য - আনন্দবাজার পত্রিকা)

২১ অক্টোবর, ২০১৪, ০০:০১:৩৮

3

বিকল্পের অধিকার। রাজ্যের একটি মাদ্রাসায় পরীক্ষা দিতে বসেছে ছাত্রীরা, ফেব্রুয়ারি ২০১২

প্রথম দিকে খবরের কাগজে পড়ছিলাম, পশ্চিমবঙ্গের কিছু ‘ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান’-এর সঙ্গে জঙ্গি কার্যকলাপের যোগ পাওয়া গিয়েছে। কয়েক দিন ধরে চলল এই পরোক্ষ ইঙ্গিত। হঠাৎ দেখলাম, মাদ্রাসা শব্দটা চলেই এল কাগজের বিবরণে। জানা গেল, এমন কিছু তথ্যপ্রমাণ মিলছে যে শব্দটাকে আর পাশ কাটানোর উপায় নেই। টিভি চ্যানেলে অবশ্য এখনও কুণ্ঠা। বিজেপি ছাড়া প্রায় সকলেই অত্যন্ত দ্বিধা ও অনিচ্ছার সঙ্গে মাদ্রাসা শব্দটি মুখে আনছেন। বলে দিচ্ছেন, ব্যাপারটাকে ‘ও ভাবে’ দেখলে হবে না, মাদ্রাসা খুবই দরকারি প্রতিষ্ঠান, তাই বিষয়টা ‘ঠিকমতো’ বুঝতে হবে। কিন্তু ‘ঠিকমতো’টা কী রকম, তা পরিষ্কার হচ্ছে না, কেননা হয় তাঁরা মাদ্রাসা নিয়ে আলোচনায় মোটে রাজি নন, নয়তো তাতে স্বচ্ছন্দ নন।
দেখতে দেখতে দুশ্চিন্তা হয়। কেবল দুশ্চিন্তা নয়, ভয়। মাদ্রাসা কথাটা উচ্চারণ করতে বা লিখতে যেখানে এত অস্বস্তি, এবং উল্টো দিকে, মাদ্রাসা কথাটা উচ্চারণ করলেই যেখানে এত প্রতিক্রিয়া, সেখানে সত্যিকারের ভয়ের যে বিষয়, সেই আলোচনায় পৌছনো যাবে তো শেষ পর্যন্ত? একটি মাদ্রাসা মানেই তো সব মাদ্রাসা নয়, কিংবা মাদ্রাসা মানেই তো গোটা মুসলমান সমাজ নয়। তা হলে মাদ্রাসা কথাটা বলতে গিয়েই সমস্ত মুসলমান বাঙালিকে হারিয়ে ফেলার এই আশ্চর্য আতঙ্ক নিয়ে আমরা মূল সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করব কী করে?
একই সমস্যা অনুপ্রবেশ নিয়েও। লক্ষণীয়, পশ্চিমবঙ্গের ভোটমঞ্চে বিজেপির আবির্ভাবের আগে অনুপ্রবেশ শব্দটা কেমন অচ্ছুত ছিল। যেন ও কথা মুখ দিয়ে বার করেছ মানেই তুমি মুসলিমদের গাল দিচ্ছ। বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল’-এর সম্মিলিত এই ‘পলিটিক্যাল কারেক্টনেস’ সর্বৈব ভাবেই ‘পলিটিক্যাল’, রাজনৈতিক, রাজনীতির ক্ষুদ্রতর অর্থে। কোনও দলীয় রাজনীতির মুসলিম-মনস্কতার অন্দরেই আসলে সমব্যথা নেই, মুসলিম মানুষদের প্রতি সত্যিকারের সহমর্মিতা নেই, আছে কেবল তাঁদের সংখ্যাটা ভোটের চরকিতে হারিয়ে ফেলার হিলহিলে ভয়। এই ভয়ের পথ ধরেই এক দিকে জঙ্গিদের জন্য রাজ্যময় ‘সেফ করিডর’ তৈরি হয়, অন্য দিকে রাজ্যে হিন্দুত্বের রাজনীতি জমাট হয়ে বসব-বসব করে।
অনুপ্রবেশকারীরা সকলেই মুসলিম নন, সেটা হওয়ার কোনও কারণও নেই। কয়েক দশক জুড়ে দেখা গিয়েছে নানা ধর্মের, নানা জাতের অনুপ্রবেশকে কী ভাবে প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে এ রাজ্যের রাজনীতি, রাজনীতির নিজেরই স্বার্থে। কিন্তু এই মুহূর্তে পরিস্থিতি অন্য রকম। হঠাৎই অনুপ্রবেশ কথাটাকে টেনে এনেছে বিজেপি। তাদের সদর্প ঘোষণা, ও পার থেকে যে হিন্দুরা আসছেন তাঁরা শরণার্থী, আর মুসলিমরা, অনুপ্রবেশকারী! তেমন প্রতিবাদও হচ্ছে না কথাটার। অ-বিজেপিরা ধরেই নিয়েছেন, অনুপ্রবেশকারীরা একশো ভাগই মুসলিম, তাই অনুপ্রবেশ মানেই মুসলমান, মুসলমান মানেই অনুপ্রবেশ, এ নিয়ে একটি কথাও যেন মুখ ফসকে না বেরোয়! তাই অনুপ্রবেশ যে একটি জরুরি সমস্যা, এবং সেই সমস্যার যে একটা ঠিকঠাক সমাধান দরকার, তেমন কথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এখনও শোনা যায়নি।
ঠিক যেমন, বর্ধমানের জঙ্গি সংযোগ নিয়ে কিছুই শোনা যায়নি তাঁর মুখে। অথচ জঙ্গলমহলে গিয়ে কিন্তু তিনি বলেছেন, ‘দেখবেন, এখানে যেন আবার ও-সব না হয়।’ এই নীরবতা গুরুতর, কেননা ধরেই নেওয়া যায়, তিনি বা তাঁর দল যথেষ্ট চিন্তিত এ বিষয়ে। যদি সত্যিই প্রমাণ লোপাটের ব্যবস্থা হয়ে থাকে, যদি অপরাধীকে সত্যিই আড়াল করা হয়ে থাকে, তবে তার পিছনে সম্ভবত জঙ্গিপনার প্রতি সচেতন প্রশ্রয় নেই। আছে কেবল, মুসলিম সমর্থন হারিয়ে ফেলার ঘুম-কাড়া ভয়!
অথচ একটা অত্যন্ত সহজ ‘যুক্তি’ (‘লজিক্যাল প্রোপোজিশন’) হল, মুসলিমদের মধ্যে জঙ্গি আছে বলে সব মুসলিমই জঙ্গি নয়! জঙ্গিসংযুক্ত মাদ্রাসা নিয়ে কথা বললে এগুলোর সঙ্গে যুক্ত যাঁরা, তাঁরা চটতে পারেন, কিন্তু ‘সব মুসলিম’ চটবেন না, কেননা ‘সব মুসলিম’ জঙ্গিমনস্ক তো ননই, ‘সব মুসলিম’ মাদ্রাসাতেও যান না। এমনকী যাঁরা মাদ্রাসায় যান, তাঁরাও মাদ্রাসাটি জঙ্গিসংযুক্ত জেনে সেখানে যান না, আর মাদ্রাসাটিকে জঙ্গি-সংযুক্ত জানতে পারলে সেটা সমর্থনও করেন না। যদি সংখ্যার কথাই ধরা যায়, তবে এই মুসলিমরা জঙ্গিদের চেয়ে লক্ষগুণ বেশি। জঙ্গিপনাকে প্রশ্রয় দিয়ে এত লক্ষ মুসলিম ভোট পাওয়ার ভাবনা যদি কেউ ভাবেন, একেবারে ভুল ভাবছেন!
মুশকিল হল, খবরের দুনিয়ায় যেহেতু ভয়ঙ্কর খবর ছাড়া কিছুর জায়গা হয় না, ‘সেনসেশনাল’ ছাড়া অন্য কথা প্রচার-যোগ্যতা অর্জন করে উঠতে পারে না, তাই ভয়হীনতার স্বাভাবিক, দৈনন্দিন বিবরণগুলো ‘খবর’ হয়ে আত্মপ্রকাশ করে না। কোন মাদ্রাসায় জঙ্গিপনা চলছে, সেটা সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞাপিত ও বিজ্ঞাপিত হয়। আর কোন মাদ্রাসা দিনের পর দিন ছেলেমেয়েদের পড়িয়ে-শুনিয়ে চলেছে, সেটা খবরযোগ্যতার ধারেকাছেও আসে না। জঙ্গিপনায় যুক্ত মুসলিমদের হাল-হকিকত মুখে মুখে ফেরে, সর্বজনজ্ঞানে উন্নীত হয়। তাঁদের চেয়ে সংখ্যায় লক্ষ গুণ বেশি রাজ্যের যে মুসলিমদের হাজারো এটা-ওটা ভাবনার মধ্যে জঙ্গি শব্দটা জায়গাও পায় না মোটে, তাঁদের কথা আমরা কাগজে পড়ি না, তাই জানি না, শুনি না।      
সমস্যাটা হল, এই দ্বিতীয় দলের কথা শুনি না বলে তাঁরা নেই, এটাই ধরে নিই। আর প্রথম দলের কথা শুনি বলে তাঁদের থাকাটা রমরম করে আমাদের চার পাশে বাজতে থাকে। এই ভাবে খবর হয়ে ওঠে অতি-খবর, বাস্তব হয়ে ওঠে অতি-বাস্তব। তার মধ্যেই দুটো-তিনটে কথা ছিটকে খবর হয়ে ওঠার হাঁচোড়পাচোড় চেষ্টা করে, তার পর ব্যর্থ হয়ে তলিয়ে যায়। এই রকম একটা-দুটো ছিটকানো কথাতেই আমরা জানতে পারি খাগড়াগড়ের সেই দুই মেয়ের ধর্মভীরু বাবার কথা, যিনি অভিযুক্ত মাদ্রাসাটিতে মেয়েদের পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত ছিলেন তারা ধর্মশিক্ষা পাচ্ছে বলে, কিন্তু এখন সব দেখেশুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এ কোথায় তিনি কন্যাদের ঠেলে দিয়েছেন তাই অনুধাবন করে। কিংবা জানতে পারি, জঙ্গিপুর মুনিরিয়া হাই মাদ্রাসায় আয়োজিত ইমামদের সভার কথা, যেখানে উদ্বিগ্ন ইমামরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, শিশুদের শিক্ষাদানের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামগুলির সম্প্রীতি রক্ষার কাজে তাঁদেরই এগিয়ে আসতে হবে, সন্ত্রাসের বীজ অঙ্কুরেই নষ্ট করতে হবে। জানতে পারি, কলকাতায় রবিবার অ্যাকাডেমি চত্বরে সভাটির কথা, যেখানে অন্য নানা কথার পাশাপাশি বিপথগামী মাদ্রাসাগুলিকে কী ভাবে বন্ধ করা যায়, সেই আলাপও চলছিল।
মাদ্রাসা শিক্ষার আদৌ প্রয়োজন আছে কি না, মাদ্রাসা চালু রাখার যুক্তি বা প্রতিযুক্তি ঠিক কী কী, কোনও মাদ্রাসার জঙ্গিসংযোগ তৈরি হলে কী করণীয়: মাদ্রাসা শুনলেই ক্ষেপে উঠে, কিংবা মাদ্রাসা শব্দটা না উচ্চারণ করে, কিংবা মাদ্রাসা শব্দ উচ্চারণ-মাত্রেই প্রবল রক্ষণাত্মক হয়ে গেলে কিন্তু এই অতি জরুরি আলোচনাগুলি শুরুই করা যাবে না। অথচ, যে ধর্মশিক্ষার জন্য মাদ্রাসার প্রয়োজন, সেই ধর্মশিক্ষার পথটাই যে খুঁজেপেতে ব্যবহার করে অনিষ্টকামীরা, এটা কেবল পশ্চিমবঙ্গে বা ভারতে বা আমেরিকায় সত্যি নয়, পাকিস্তানে, ইরাকে, সিরিয়াতেও সত্যি। পাকিস্তানের প্রবীণ গবেষক আকবর আহমদ একটি অসামান্য বই লিখেছিলেন (জার্নি ইনটু ইসলাম, ২০০৭) তাঁর বহু দেশের অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে, যাতে পড়েছিলাম কী ভাবে পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন মাদ্রাসাকে ব্যবহার করা হয় সন্ত্রাস ছড়ানোর কাজে কিন্তু সেই সন্ত্রাসের লক্ষ্য ভিন্ন ধর্ম বা ভিন্ন সংস্কৃতি নয়, বরং মুসলিমরাই। কখনও সেই সন্ত্রাসের লক্ষ্য শিয়ারা, কিংবা সুন্নিরা, কিংবা অন্য কোনও গোষ্ঠীর মুসলিমরা। অর্থাৎ মাদ্রাসা ক্ষেত্রবিশেষে অসহিষ্ণুতা ও জঙ্গিপনার কেন্দ্র হয়, আর ধর্মচর্চার আবরণটা সেই কার্যক্রমের উপযুক্ত আড়াল হয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক জাল ধরে জঙ্গি ইসলামি সংগঠনের টাকাপয়সা, লোকবল, অস্ত্রশস্ত্র পৌঁছয় সেখানে। সুতরাং ধর্মশিক্ষার প্রয়োজনেও এ রাজ্যে মাদ্রাসা সত্যিই কতটা দরকার, এবং মাদ্রাসা দরকারি ধরে নিলেও সেগুলিকে ঠিক পথে রাখার উপায় কী, এ সব কেবল অ-মুসলিম নয়, মুসলিমদেরও উদ্বিগ্ন হয়ে ভাবার বিষয়। তাঁরা তা ভাবছেনও।
তাঁরা যে ভাবছেন, তার প্রমাণ গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে। পাকিস্তান, ইরাক, ইরান, সিরিয়া, সর্বত্র। ঘরের কাছে বাংলাদেশ দেখিয়ে দিচ্ছে, কত প্রতিকূলতার মধ্যেও কতখানি করা সম্ভব। মৌলবাদী তাণ্ডব সেখানে প্রাত্যহিক। কিন্তু যত বেশি দুর্দশা ঘটাতে পারত সেই তাণ্ডব, সেটা হয়নি, হয় না, কেননা গোটা সমাজ বার বার হাত মিলিয়ে চেষ্টা করে জঙ্গিপনার টুঁটি টিপে ধরার। সীমান্তবর্তী জেলাগুলির গ্রামে গ্রামে প্রতি দিন চলে গ্রামবাসী বনাম মৌলবাদী সংঘর্ষ। এই গ্রামবাসীরা মুসলিম রাষ্ট্রের মুসলিম নাগরিক। তাঁদেরই অনেকে আবার মৌলবাদী বা সন্ত্রাসী না হয়েও দারিদ্র ও অশান্তির চোটে ভারতের দিকে যাত্রা করেন, অনুপ্রবেশকারীতে রূপান্তরিত হন। তাঁদের সঙ্গে মিশে যায় জঙ্গিরাও। জঙ্গিরা অনুপ্রবেশকারী বলে সব অনুপ্রবেশকারীরই জঙ্গি-যোগ থাকে না।
বাস্তব হলেও এই বিরাট-সংখ্যক অনুপ্রবেশ গ্রহণযোগ্য নয়। ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের কি এত অতিরিক্ত মানুষকে নিজের দেশে আত্মস্থ করে নেওয়ার পরিস্থিতি আছে? নেই। সুতরাং এই মানুষগুলোর বিষয়ে একটা নীতি দরকার। কিন্তু এই নীতিটা কী জন্য দরকার? ‘মুসলিম’ সমস্যা নয়, ‘অনুপ্রবেশ’ সমস্যা সমাধানের জন্য। মুসলিম আর অনুপ্রবেশের মধ্যে, কিংবা মুসলিম আর মাদ্রাসার মধ্যে এ ভাবে সহজ সমার্থক চিহ্ন জুড়ে দেওয়া অঙ্কের ভয়ঙ্কর ভুল, অকারণ সংঘর্ষ ডেকে আনার ভুল। যে  রাজ্যের এক-তৃতীয়াংশ মুসলিম, সেখানে এই ভুলের দাম প্রতিটি পরিবারকে চোকাতে হতে পারে।
বন্ধ হোক এই আগুনখেলা। হিন্দু সমস্যা বা মুসলিম সমস্যা নয়, পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা যে আজ গুরুতর হয়েছে, সব পক্ষ সেটা স্বীকার করুক। একত্র আলোচনা করুক। যদি একত্র আলোচনায় রুচি না থাকে, তবে না-হয় নিজেদের সমাজের মধ্যেই আলোচনা চলুক। কিন্তু সমস্যাটা যে ধর্মের নয়, সমাজের, অর্থনীতির, রাজনীতির, প্রত্যেকের খেয়াল থাকুক। এবং সমস্যাটা যে সমগ্র রাজ্যের, প্রত্যেক রাজ্যবাসীর— সেটাও।

**************

প্রবন্ধ ২

মাদ্রাসা সম্পর্কে আগে জেনে নেওয়া ভাল

কাজি মাসুম আখতার (সৌজন্য - আনন্দবাজার পত্রিকা)

২১ অক্টোবর, ২০১৪, ০০:০১:৫২
4

বৃক্ষরোপণ। রাজ্যের একটি মাদ্রাসায়। ২০০৮

রাজ্যের অনুমোদনহীন খারেজি মাদ্রাসাগুলি সন্ত্রাসবাদীদের আখড়া— প্রায় এক দশক আগে মন্তব্য করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বর্ধমান বিস্ফোরণের সূত্রে মন্তব্যটি নতুন মাত্রা পেয়েছে।  এই কাণ্ডকে ঘিরে তদন্তে যে-ভাবে জঙ্গি কার্যকলাপে মাদ্রাসার যোগসূত্র উঠে এসেছে, তা সত্যিই উদ্বেগের। মনে হতেই পারে যে মাদ্রাসাগুলিই যেন জঙ্গি তৎপরতার মূল কেন্দ্র। বিষয়টি গভীর উদ্বেগের, কারণ এই প্রশ্নে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য।
মাদ্রাসা সম্পর্কে বিভ্রান্তির পিছনে রয়েছে মাদ্রাসা তথা ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অ-মুসলিমদের একাংশের অজ্ঞতা ও উপেক্ষা। বিভ্রান্তি শুরু হয় ‘মাদ্রাসা’ শব্দটি থেকেই। বিদ্যালয়কে যেমন ইংরাজিতে স্কুল বলা হয়, তেমনই আরবিতে বলা হয় ‘মাদ্রাসা’। পশ্চিমবঙ্গে মূলত তিন ধনের মাদ্রাসা রয়েছে। ১) অনুমোদন প্রাপ্ত ও সরকারি অনুদান প্রাপ্ত। ২) অনুমোদন প্রাপ্ত, কিন্তু সরকারি অনুদানে বঞ্চিত। ৩) অনুমোদনবিহীন ও অনুদানবিহীন। রাজ্যে প্রথম ধরনের মাদ্রাসার সংখ্যা ৬১৪টি। যার মধ্যে হাইমাদ্রাসা ৫১২টি এবং সিনিয়র মাদ্রাসা ১০২টি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ-এর অধীনে থাকা হাই মাদ্রাসাগুলির পাঠ্যক্রম একেবারেই সাধারণ বিদ্যালয়গুলির অনুরূপ। বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক স্তরে পড়ুয়ারা সাতশো নম্বরের যে আধুনিক পরীক্ষা দেয়, মাদ্রাসার পড়ুয়াদের তার সঙ্গে অতিরিক্ত একশো নম্বরের ‘ইসলাম পরিচয়’ ও ‘কমপালসারি অ্যাডিশনাল’ হিসেবে তৃতীয় ভাষা আরবি-র পরীক্ষায় বসতে হয়, যার নম্বর রেজাল্টের মোট নম্বরের সঙ্গে যুক্ত হয় না। পার্থক্য এইটুকুই। বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে সংস্কৃত শিক্ষার বিকল্প বলা যায়। হাই মাদ্রাসার উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠক্রম ও পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভাবে সাধারণ বিদ্যালয়ের মতো উচ্চ মাধ্যমিক কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণাধীন। এখানে ধর্মীয় শিক্ষার কোনও বালাই নেই। সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিযুক্ত কিছু হাই মাদ্রাসায় শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই অ-মুসলিম। পড়ুয়াদের মধ্যেও অ-মুসলিম রয়েছে। সরকারি বেতন কাঠামোয় মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতন বিদ্যালয় শিক্ষকদের সমান। তাই অনেক উচ্চ ডিগ্রিধারী শিক্ষককেও হাই মাদ্রাসায় দেখা যায়।
সিনিয়র মাদ্রাসার ক্ষেত্রে মাধ্যমিক স্তরে (আলিম) এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে (ফাজিল) পাঠক্রমে ধর্মীয় শিক্ষার ভাগ তুলনায় বেশি। তবে হাই ও সিনিয়র, দুই ধরনের মাদ্রাসাই সাধারণ স্কুলের মতো জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দফতর কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। মাদ্রাসাগুলিও সর্বশিক্ষা মিশন বা শিক্ষা দফতর প্রদেয় বিভিন্ন গ্রান্ট সমান ভাবে পায়। সঙ্গে বাড়তি হিসাবে পায় সংখ্যালঘু দফতর সূত্রে প্রাপ্ত আর্থিক অনুদান।
এ ছাড়া রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর অনুমোদিত প্রায় পাঁচশো শিশুশিক্ষা কেন্দ্র (চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত) এবং মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্র (অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত)। এখানে শিক্ষকরা সাম্মানিক বেতনস্বরূপ সামান্য অর্থ পান। পরিকাঠামোর উন্নয়নেও সরকারি অনুদান বরাদ্দ হয়। মাদ্রাসা পর্ষদের পাঠক্রম অনুযায়ী পঠনপাঠন হয়।
পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় ধরনের মাদ্রাসার সংখ্যা ২৩৫টি। এগুলি মাদ্রাসা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত এবং মাদ্রাসা পর্ষদের পাঠক্রম অনুযায়ী পরিচালিত। তবে সরকারি অনুদান থেকে তারা বঞ্চিত। বিভিন্ন ধরনের দান এবং পড়ুয়াদের বেতন এই মাদ্রাসাগুলির আয়ের উৎস।
বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডের প্রেক্ষিতে বিতর্ক উঠেছে তৃতীয় ধরনের মাদ্রাসাগুলি নিয়ে। যার নাম খারেজি মাদ্রাসা। খারেজি কথার অর্থ ‘বাহিরে’। এ কথার অর্থ অনুমোদনের বাহিরে অর্থাৎ অনুমোদনহীন। রাজ্যে এমন মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার, যদিও, সম্ভবত ভ্রান্তিবশত, মুখ্যমন্ত্রী দশ হাজার খারেজি মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু অনুমোদন দেবেন, অনুদান দেবেন না— তাই মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় সাড়া দেয়নি খারেজি মাদ্রাসাগুলি। অনুমোদনের শর্তস্বরূপ নিজস্ব জমি, বাড়ি, পর্যাপ্ত শিক্ষক, পড়াশুনোর পরিবেশ ইত্যাদি না থাকায় মাদ্রাসাগুলি অনুমোদন প্রাপ্তির জন্য আবেদনই করেনি। তাই ঘোষণার তিন বছর পরে মাত্র ২৩৫টি খারেজি মাদ্রাসা অনুমোদন পেয়ে মাদ্রাসা পর্ষদের পাঠক্রম অনুসরণ করছে।
অত্যন্ত গরিব মুসলিম পরিবারের সন্তানরাই সাধারণত খারেজি মাদ্রাসার পড়ুয়া হয়। সন্তানদের হাফেজ, ইমাম বা মোয়াজ্জেম তৈরি করাই এখানে অভিভাবকদের মূল লক্ষ্য। তা ছাড়া, অধিকাংশ খারেজি মাদ্রাসা আবাসিক হওয়ায় প্রায় বিনা ব্যয়ে অনাথ বা হতদরিদ্র পড়ুয়ারা দু’বেলা অন্ন গ্রহণের সুযোগ পায়। সাধারণত বাড়ি-বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা ‘দান’ বা ‘জাকত’ এই সব মাদ্রাসার অর্থ জোগানের উৎস। মূলত মসজিদ লাগোয়া ছোট কয়েকটি কক্ষ নিয়েই খারেজি মাদ্রাসাগুলি গড়ে ওঠে। কিছু খারেজি মাদ্রাসায় বাংলা-ইংরাজি পড়ানো হলেও আরবি-উর্দুসহ ধর্মশিক্ষা দেওয়াই এই সব মাদ্রাসার মূল লক্ষ্য।
এই খারেজি মাদ্রাসাগুলি একাধিক সমস্যায় জর্জরিত। প্রথমটি হল যোগ্য নজরদারির সমস্যা। আর্থিক সাহায্য তো দূরের কথা, সরকার তথা মুসলিম সমাজের অগ্রসর সচেতন অংশের বিন্দুমাত্র নজরদারি থেকে বঞ্চিত এগুলি। বর্ধমানের শিমুলিয়া মাদ্রাসা-সহ আরও কয়েকটি খারেজি মাদ্রাসার বিরুদ্ধে যে-ভাবে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগ উঠেছে, তা সম্ভব হয়েছে যোগ্য নজরদারির অভাবেই।
দ্বিতীয়ত, ফুরফুরা, দেহবন্দ, আহলে হাদিস বা বেরেলি গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত খারেজি মাদ্রাসাগুলির পরিকাঠামো বা শিক্ষার পরিবেশ মন্দের ভাল হলেও অধিকাংশ খারেজি মাদ্রাসার পরিকাঠামোগত দৈন্য দশা বড়ই প্রকট। ফলস্বরূপ প্রকৃত শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত অসচেতন এই সব মাদ্রাসার পড়ুয়াদের বিভ্রান্ত করা বেশ সহজ। ধর্মীয় আবেগে ইন্ধন দিয়ে এই পড়ুয়াদের উগ্রবাদী কর্মে লিপ্ত করাও অনেক সময় কঠিন নয়।
তৃতীয়ত, মাত্র দুই-আড়াই হাজার টাকা বেতনের অদক্ষ শিক্ষক দ্বারা পরিকাঠামোহীন মাদ্রাসায় পড়ুয়ারা না পায় উন্নত অর্থকরী আধুনিক শিক্ষা, না পায় উন্নত জ্ঞানভিত্তিক ধর্মশিক্ষা বা আরবি-উর্দু শিক্ষা। অর্থ না বুঝে আরবি ভাষা শিক্ষায় ভাষাজ্ঞান বা ধর্মজ্ঞান কোনওটাই সম্পূর্ণ হয় না। বস্তুত, শুধু খারেজি মাদ্রাসায় কেন, দেহবন্দ, মোরাদাবাদ, সাহারনপুর ইত্যাদি ইসলাম ধর্ম ও ভাষা শিক্ষা কেন্দ্রের মতো পশ্চিমবঙ্গের কোথাও উন্নত আরবি ভাষা বা ধর্মচর্চার কেন্দ্র নেই। এ রাজ্যে শিক্ষা নেওয়া মাদ্রাসা শিক্ষক, এমনকী কলেজের আরবি ভাষার শিক্ষকদের মধ্যেও খুব কমই আরবিতে দু’পাতা রচনা লেখার ক্ষমতা রাখেন। আরবি শিখতে কলকাতার গোলপার্কে রামকৃষ্ণ মিশনে দৌড়তে হয় হিন্দু-মুসলমান সকলকেই। প্রসঙ্গত, কোনও ভাষাই কোনও একটি ধর্মের একচেটিয়া হতে পারে না। আরবি বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ভাষা। মিশরে এই আরবি ভাষাতেই ডাক্তারি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়। পশ্চিম এশিয়ায় ডাক্তারি ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় নিযুক্তদের একটা বড় অংশ ভারতীয় হিন্দু। পেশাগত কারণেই তাঁদের আরবি শিখতে হয়।
বর্ধমানকাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক, গুঁড়িয়ে দেওয়া হোক অপরাধী মাদ্রাসাগুলিকে। শুধু স্বাগত জানানো নয়, মুসলিম সমাজকে এই প্রচেষ্টায় পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে। এবং, শুধু সরকারের নয়, মুসলিম সমাজপতি বা অগ্রসর অংশকে এগিয়ে আসতে হবে খারেজি মাদ্রাসাগুলির প্রকৃত উন্নয়নে বা নজরদারিতে। চেষ্টা করতে হবে খারেজি মাদ্রাসাগুলিকে সরকারি অনুমোদনের আওতায় আনার।
তবে মনে রাখতে হবে, অনুমোদন না পেলেও সংবিধানের ৩০ নং ধারা অনুযায়ী সংখ্যালঘুদের ‘ধর্ম শিক্ষা কেন্দ্র’ খোলার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। সুতরাং, অনুমোদনহীন মাদ্রাসাকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দেওয়ার যে প্রচেষ্টা চলছে, তাও ভ্রান্তিকর ও বিদ্বেষমূলক। রাজ্য বা দেশ জুড়ে চলছে বহু টোল বা চতুষ্পাঠী, যেখানে বেদ, রামায়ণ, মহাভারত ইত্যাদি হিন্দু ধর্মশাস্ত্রই পড়ানো হয়। সুতরাং, ধর্মশিক্ষাকে অবৈধ ও সন্ত্রাসী বলে বৈষম্য সৃষ্টি অশুভ প্রচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়।

তালপুকুর আড়া হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক

*************

সম্পাদকীয় ২ (সৌজন্য - আনন্দবাজার পত্রিকা)

নীতি স্থির করুন

২১ অক্টোবর, ২০১৪, ০০:০১:৩৮


ব্যাধি দুরারোগ্য হইলে মানুষ উদ্ভ্রান্ত হইয়া পড়ে, কখনও এই চিকিৎসকের কাছে দৌড়য়, কখনও ওই টোটকা দিয়া দেখে, কখনও বা সেই দেবতার থানে ধর্না দেয়। সিপিআইএমের ব্যাধি যে দুরারোগ্য হইয়াছে, তাহা দলের নেতাদের আচরণেই প্রকট। বর্ধমানের সন্ত্রাস তাঁহাদের সম্পূর্ণ বেসামাল করিয়া দিয়াছে। এই ঘটনা হইতে উদ্ভূত জটিল পরিস্থিতির মোকাবিলায় দলনেতারা বিচিত্র আচরণ করিতেছেন, তাঁহাদের কণ্ঠে বিচিত্র সব সওয়াল শোনা যাইতেছে। আবার, এক নেতার কথার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হইতে পারে, এই আশঙ্কায় আর এক নেতা ভারসাম্য আনিবার তাগিদে আর এক কথা বলিতেছেন এবং সেই কথারও কোনও যুক্তি খুঁজিয়া পাওয়া যাইতেছে না। প্রকাশ কারাট সম্প্রতি বলিয়াছেন, বর্ধমানের তদন্তভার এনআইএ-র হাতে দেওয়াই ঠিক হইয়াছে। কথাটি ভুল নহে, কিন্তু কথা ঠিক হইলেই প্রকাশ কারাট সে কথা বলিয়া থাকেন, এমন দুর্নাম তাঁহাকে কেহ দিবে না। রাজ্য পুলিশের বদলে এনআইএ’র তদন্ত চাহিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য প্রশাসনের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করা যায়, সেই কারণেই যে সিপিআইএম-এর কর্ণধার কথাটি বলিয়াছেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু এই উক্তি তাঁহার বঙ্গীয় সতীর্থদের চিন্তায় ফেলিয়া দিয়াছে যে, এই অবস্থান সংখ্যালঘু ভোটের ক্ষতি করিবে না তো?
এনআইএ তদন্ত শুরু করিবার পরে ঘটনাচক্র যে দিকে চলিতেছে, তাহার ফলে এমন আশঙ্কার কারণ বুঝিতে অসুবিধা নাই। সিপিআইএম দীর্ঘদিন এ রাজ্যে, বিশেষত দক্ষিণবঙ্গে সংখ্যালঘু ভোটের প্রধান প্রাপক ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ভাণ্ডারে প্রবল ধস নামাইয়া দিয়াছেন। তিনি সংখ্যালঘু ভোটের জন্য যাহা করিয়াছেন, তাহা অনেকাংশে আপত্তিকর এবং এমনকী বিপজ্জনক, কিন্তু ভোট ব্যাঙ্কের মাপকাঠিতে তাঁহার সাফল্য অনস্বীকার্য। ফলে প্রকাশ কারাটের উক্তির পরে আসরে নামিয়াছেন গৌতম দেব। তিনি ঘোষণা করিয়াছেন, তাঁহারা ‘উদ্বাস্তু’দের পক্ষে ছিলেন, আছেন, থাকিবেন।
আপাতশ্রবণে পুরানো ও বহুচর্চিত, কিন্তু গৌতমবাবুর উক্তির প্রেক্ষিতটি তাৎপর্যপূর্ণ। বর্ধমান কাণ্ডের পরে নূতন করিয়া উঠিয়া আসিয়াছে ‘অনুপ্রবেশ’ প্রশ্ন, এই প্রশ্নে বিজেপি’র রাজনৈতিক প্রচার ক্রমে উচ্চরব হইতেছে। সংখ্যালঘু ভোটের পক্ষে প্রশ্নটি গুরুতর বলিয়াই রাজ্য রাজনীতির প্রচলিত ধারণা। সুতরাং ‘উদ্বাস্তু রাজনীতি’র মোড়কে সিপিআইএম নেতা বুঝাইতে চাহিয়াছেন, তাঁহারা অনুপ্রবেশকে সমস্যা বলিয়া মনে করেন না। নীতিগত ভাবে অবস্থানটি অযৌক্তিক এবং বিপজ্জনক। গৌতম দেব এবং তাঁহার দলের বিলক্ষণ জানা আছে, ‘উদ্বাস্তু’ বা ‘শরণার্থী’ শব্দগুলির আড়ালে বেআইনি অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণের বাস্তব প্রয়োজনকে লুকানো সম্ভবপর নহে। ভোটের সুবিধা হইলেও তাহা করা উচিত নহে, কারণ রাজ্যের স্বার্থ ভোটের স্বার্থ অপেক্ষা অনেক বড়। কিন্তু এই প্রচারে সংখ্যালঘু ভোটের কী সুবিধা বামপন্থীরা পাইবেন, তাহাও বলা কঠিন। এখানেই উদ্ভ্রান্তির সুস্পষ্ট প্রমাণ। এই সম্পূর্ণ দিশাহারা অবস্থা হইতে মুক্তি চাহিলে সিপিআইএমকে আপন নীতিগত অবস্থান স্পষ্ট করিতে হইবে। এক মুখে এনআইএ ডাকিয়া জাতীয়তাবাদী হইব, অন্য মুখে ভোটব্যাঙ্ক রাখিতে অনুপ্রবেশের সমস্যাকে তুচ্ছ করিব— এই ‘ভারসাম্য’-এর রাজনীতি আত্মঘাতী, রাজ্যের পক্ষে ক্ষতিকরও।


Sinister plot by minority leaders to hide Burdwan Blast terrorists

Burdwan Blast - Why Bengal police tried to undermine the incident

No comments:

Post a Comment