শিশুদের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে এ বার মমতার লাড্ডু
পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
ছেলের হাতে মোয়া নয়। এ বার ছেলের হাতে লাড্ডু। দিল্লির ফর্মুলায় তৈরি। তবে দিল্লি কা লাড্ডু নয় মোটেই। মমতার লাড্ডু। খেলে পস্তাতে হবে না। বরং পুষ্টি হবে। কারণ, এ লাড্ডু পুষ্টিকর। তাই শিশুদের অপুষ্টির মোকাবিলায় এই লাড্ডু খাওয়াবে রাজ্য সরকার।
পোশাকি নাম ‘পৌষ্টিক লাড্ডু’। তবে এ লাড্ডু দালদা-মিষ্টির মিশ্রণে তৈরি নয়। চাল-গম-বাদাম, মুসুর ডালের গুঁড়ো, তেল, ভিটামিন এবং সামান্য চিনি দিয়ে তৈরি হচ্ছে এই পুষ্টিকর লাড্ডু। ফর্মুলা বার করেছে দিল্লির জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি পর্ষদ।
ছ’বছর পর্যন্ত শিশুদের জন্য এই লাড্ডু প্রকল্প বাংলারই। খাদ্য ভবন সূত্রের খবর, সারা রাজ্যে এই মুহূর্তে নবজাতক থেকে শুরু করে ছ’বছর বয়সের ৫৮ হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। শিশু-স্বাস্থ্যের এই হাল দেখে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। অপুষ্টির সঙ্গে লড়তে ১৯ সেপ্টেম্বর প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে লাড্ডু প্রকল্প দ্রুত চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনিই।
রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরের সচিব রোশনী সেন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলাশাসকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি। জেলার বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মাধ্যমে লাড্ডু তৈরি ও বিতরণের কথা ভাবা হয়েছে।” প্রথম পর্যায়ে নভেম্বরের মধ্যে রাজ্যের আটটি জেলায় ওই লাড্ডু খাওয়ানো হবে প্রায় ৩০ হাজার শিশুকে। এই খাতে বছরে খরচ হবে তিন কোটি টাকা। এর পরে কয়েকটি ধাপে সারা রাজ্যে অপুষ্টিতে আক্রান্ত ৫৮ হাজার শিশুই প্রকল্পের আওতায় আসবে।
কিন্তু ওইটুকু শিশুরা পৌষ্টিক লাড্ডু খাবে কী করে?
জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি পর্ষদের তরফে জানানো হয়েছে, খুব ছোটদের লাড্ডু গুঁড়ো করে জল বা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে চামচ বা ঝিনুকে করে খাওয়ানো যাবে। পর্ষদের এক কর্তা জানান, প্রতিটি শিশুর জন্য রোজ বরাদ্দ চারটি লাড্ডু। মাসে ২৫ দিন। অপুষ্টির মাত্রা অনুযায়ী লাড্ডুতে উপাদানের পরিমাণও কম-বেশি হবে।
তবে শিশুদের শুধু লাড্ডু খাওয়ালেই অপুষ্টি-সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করছে না স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে জানান, স্বাস্থ্য, সমাজকল্যাণ ও খাদ্য দফতর মিলিত ভাবে অক্টোবরের শেষ থেকে আরও একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। গত এক বছরে (২০১৩ সালের জুন থেকে ২০১৪ সালের জুন) স্বাস্থ্য দফতরের ২৯টি ‘নিউট্রিশন রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার’ বা পুষ্টি কেন্দ্রে আসা গুরুতর অপুষ্টিতে ভোগা সাড়ে চার হাজার শিশুর পরিবারকে নিখরচায় রেশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। শীঘ্র মধ্যেই কুপন বিলি শুরু হবে। সাধারণ রেশন দোকানেই মাসে এক বার ওই রেশন মিলবে। পরিবার-পিছু দেওয়া হবে পাঁচ কিলোগ্রাম চাল, আড়াই কিলোগ্রাম গম, এক কিলোগ্রাম মুসুরির ডাল এবং এক কিলোগ্রাম ছোলা।
এই রেশনে শিশুর অপুষ্টির মোকাবিলা করা যাবে কী ভাবে?
রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করেন, মা এবং পরিবারের অন্যেরা দু’বেলা ভাত-ডাল খেতে পেলে অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুও প্রয়োজনীয় খাবার পাবে এবং তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। স্বাস্থ্যসচিব মলয়বাবু জানান, সমাজকল্যাণ দফতরের অধীন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে গুরুতর অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিহ্নিত করে পাঠানো হয় পুষ্টি কেন্দ্রে। সেখানে শিশু ও মাকে ১৪ থেকে ২১ দিন রেখে পুষ্টিকর খাবার খাইয়ে অনেকটা সুস্থ করে বাড়ি পাঠানো হয়।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশের ক্ষেত্রে বাড়ি যাওয়ার পরে দু’বেলা ঠিকমতো খাবার না-পেয়ে ফের অপুষ্টির শিকার হয়ে পড়ছে শিশু। তাদের দীর্ঘমেয়াদি ‘নিউট্রিশন সাপোর্ট’ জোগাতেই রেশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আপাতত ছ’মাস রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। পরে এর মেয়াদ বাড়ানো হবে।
পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব এই প্রকল্পও অনুমোদন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, রাজ্যে ছ’বছর পর্যন্ত বয়সের শিশুর সংখ্যা সাত লক্ষ। তার মধ্যে ৫৮ হাজার অর্থাৎ প্রায় ১০% শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। মুখ্যমন্ত্রী এই ৫৮ হাজার শিশুর পরিবারকেই রেশন প্রকল্পের আওতায় আনতে বলেছেন। সাড়ে চার হাজার শিশুর পরিবারকে ছ’মাস রেশন দিতে ৬৬ লক্ষ টাকা খরচ হবে। অন্যদেরও এর আওতায় আনা হবে। তবে তাতে কিছুটা সময় লাগবে। তত দিন ওই শিশুদের পুষ্টিকর লাড্ডু দেওয়া হবে।
No comments:
Post a Comment