নিয়ম ভেঙে রেজিস্ট্রার নিয়োগের অভিযোগ উঠল রাজ্যের ফার্মেসি কাউন্সিলের বিরুদ্ধে। এবং এ বারও বিতর্কে স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিষদীয় সচিব এবং তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজি। যিনি ফার্মেসি কাউন্সিলেরও প্রেসিডেন্ট। যিনি সরকারি চিকিৎসকদের একাংশের ‘জ্যান্ত পুতুল’ পোড়ানোর কথা বলে সম্প্রতি বিতর্কে জড়িয়েছিলেন।
কেন্দ্রের ফার্মেসি কাউন্সিলের নির্দেশিকায় বলা আছে, রাজ্যগুলির ফার্মেসি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার পদে নিযুক্ত হতে গেলে ফার্মেসিতে স্নাতক অথবা ডিপ্লোমাধারী হতে হবে। আর ওই দুই ধরনের প্রার্থীর মধ্যে অগ্রাধিকার পাবেন স্নাতক প্রার্থীই। কিন্তু এ রাজ্যের ফার্মেসি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার পদে যাঁকে নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁর ফার্মেসিতে ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা নেই। তিনি বাণিজ্যে স্নাতক!
কোন ওষুধের কী কাজ, কত মাত্রায় তা প্রয়োগ করা উচিত ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা দেন ফার্মাসিস্টরা। অর্থাৎ তাঁদের পেশার সঙ্গে মানুষের জীবন-মৃত্যু জড়িয়ে আছে। এই স্বাস্থ্য কর্মীদের সামান্য ভুলও রোগীর পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। এ হেন গুরুত্বপূর্ণ পেশার লাইসেন্স দেয় রাজ্য ফার্মেসি কাউন্সিল। সেখানেই এমন অনিয়মে প্রমাদ গুণছেন কাউন্সিলের সদস্যদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, ফার্মেসির জ্ঞান না থাকা এক জনকে কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার করায় ওষুধ সংক্রান্ত পরিষেবায় বিপজ্জনক প্রভাব পড়বে না কি? মেডিক্যাল অ্যান্ড সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুমহান চক্রবর্তীর কথায়, “ফার্মেসি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার ফার্মাসিস্ট নন। এ বার তিনি যদি অযোগ্য কাউকে ফার্মাসিস্ট হওয়ার লাইসেন্স দিয়ে বসেন, তা হলে রোগীদের সাঙ্ঘাতিক বিপদ হবে!” নিমর্লবাবুরা অবশ্য এমন আশঙ্কা নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। তাঁর পাল্টা বক্তব্য, বরং ফার্মাসিস্ট রেজিস্ট্রার হলে তিনি নিজের মতো ‘সিন্ডিকেট’ গড়ে তুলতে পারতেন!
রাজ্যের ফার্মেসি কাউন্সিল সূত্রের খবর, সংস্থার রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগের জন্য জুলাই মাসে একটিমাত্র সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, যে কোনও শাখার স্নাতকেরাই ওই পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনকারীদের মধ্যে অনেকেই অবশ্য ছিলেন ফার্মেসিতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। কিন্তু তাঁদের কাউকেই ইন্টারভিউয়ে ডাকা হয়নি। অগস্ট মাসের শেষে ইন্টারভিউ হয়। তাতে ডাক পান ফার্মেসি ব্যতীত অন্য শাখার পাঁচ জন স্নাতক। শেষ পর্যন্ত রেজিস্ট্রার পদে যাঁকে নিয়োগ করা সায়ক হালদারকে। তিনি বাণিজ্যে স্নাতক। কী ভাবে ফার্মেসিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের ডিঙিয়ে তিনি ওই পদে যোগ্য বিবেচিত হলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কাউন্সিলেই।
এ নিয়ে কথা বলার জন্য সায়কবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ফল মেলেনি। তাঁকে ফোন এবং মেসেজ করেও সাড়া মেলেনি। তবে কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নির্মলবাবু বলেন, “বাম জমানাতেও রাজ্য ফার্মেসি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার পদে চাকরি পেতে যে কোনও শাখার স্নাতক হলেই চলত। আমরা সেই নিয়ম বদলাইনি।”
উপরন্তু, রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্টকে কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ করা হলে ‘সিন্ডিকেট’ সমস্যা দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নির্মলবাবু। তাঁর বক্তব্য, “ফার্মাসিস্ট রেজিস্ট্রার হলে নিজের ছাত্রজীবনের সূত্রে ফার্মেসির ছাত্রদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় থাকে। সেই সুবাদে সিন্ডিকেট করে নানা সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন ফার্মেসির ছাত্ররা। সেটা ঠিক নয়!”
কিন্তু কেন্দ্রের ফার্মেসি কাউন্সিলের নির্দেশিকায় তো স্পষ্ট বলা আছে, রাজ্য ফার্মেসি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারকে রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্ট হতে হবে! পাশাপাশি, তাঁর তিন বছরের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাও থাকা বাঞ্ছনীয়। নির্মলবাবুর জবাব, “আমরা তো রাজ্যের নিয়মে চলি! দিল্লি যদি কিছু বলে, তখন সেই অনুযায়ী সংশোধন করা হবে। এখনই তার দরকার নেই।” তাঁর আরও বক্তব্য, “রাজ্য ফার্মেসি কাউন্সিলের প্রাক্তন রেজিস্ট্রারের মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ চালানো হচ্ছিল। কিন্তু তিনি আর দায়িত্ব নিতে চাইছিলেন না। তাই নিয়মমাফিক ইন্টারভিউ করে নতুন রেজিস্ট্রার নিয়োগ করা হয়েছে।”